বিয়ে একটি পবিত্র বাঁধন যে বাঁধন ধারা একটি নারী এবং একটি পুরুষের এক অদ্ভুত মিলন ঘটে হয়ে যায় একে অপরের সারা জীবনের সঙ্গী তাই সবাই চায় তার জীবনসঙ্গী যেন তার মনের মত হয় প্রতিটা পিতা-মাতাই চায় তার ছেলে বা মেয়ের সুন্দর একটি ছেলে বা মেয়ের সাথে বিয়ে হোক তবে যাদের পিতা-মাতা নেই তাদের কি হবে।সম্প্রতি এমনই পিতা-মাতা হীন এতিম মে ( May )য়েদের বিয়ে দিয়েছেন দিনাজপুরের ( Dinajpur ) শি//শু নিকেতন।
চতুর্থ শ্রেণীতে পড়ার সময় ইয়াসমিন আরার ( Yasmin Arar ) বাবা ম ‘রা যান। এরপর তিনি এতিম মে ( May )য়েদের জন্য দিনাজপুর শি//শু নিকেতনে চলে আসেন। পড়াশোনা করেছেন এইচএসসি পর্যন্ত। গত বছর পার্বতীপুর উপজেলার মোহাম্মদপুর ( Mohammadpur ) এলাকার আবদুর সাত্তারের ( Abdur Sattar ) সঙ্গে তার বিয়ে হয়। গত দুই বছরে শি’’শু নিকেতন তার মতো ৪০ জন এতিম মেয়েকে বিনা যৌতুক বিয়ে দিয়েছে।
শুক্রবার ২৬ মে May দুপুর ( Noon ) আড়াইটার দিকে বালুবাড়ির গ্রিনভিউ ( Green View Balubari ) কমিউনিটি সেন্টারে ৪০ দম্পতিকে বিবাহোত্তর সংবর্ধনা দেওয়া হয়। সংবর্ধনার আয়োজন করে শি//শু নিকেতন।
অনুষ্ঠানে ৪০ বর ও ৪০ কনে পাশাপাশি বসে থাকতে দেখা যায়। পাশে বসে আছে অতিথিরা। সবার মধ্যে উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে। আয়োজনে কোনো কমতি ছিল না। সবাই তাদের সুন্দর আগামীর জন্য দোয়া করেছেন।
শি//শু নিকেতনের কর্মকর্তাদের মতে, বিবাহিত মেয়েরা এতিম। যাইহোক, তারা অনেক উপায়ে স্বয়ংসম্পূর্ণ। বরদের কেউ পোশাক কারখানায়, কেউ কোম্পানিতে, কেউ ব্যবসায়ী আবার কেউ কৃষিকাজে কাজ করেন।
অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন জাতীয় সংসদের হুইপ ও দিনাজপুর-৩ আসনের সংসদ সদস্য ইকবালুর রহিম। এ সময় আরও উপস্থিত ছিলেন জেলা প্রশাসক খালেদ মোহাম্মদ জাকি, জেলা পরিষদের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা জয়নুল আবেদীন, দিনাজপুর চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিজের সভাপতি রেজা হুমায়ুন ফারুক চৌধুরী শামীম ও শি//শু নিকেতন স্টিয়ারিং কমিটির সভাপতি মোজাফফর আলী মিলন।
বর ও কনেকে একটি সাইকেল, কনেকে একটি সেলাই মেশিন, একটি প্রাইজবন্ড, একটি গদি, একটি বালিশ এবং গৃহস্থালি সামগ্রী দেওয়া হয়।
ইয়াসমিন আরা বলেন, ‘আমি চতুর্থ শ্রেণিতে পড়ার সময় আমার বাবা মারা যান। এরপর থেকে শি//শু নিকেতনে থাকতে শুরু করি। আমি এখানে নয় বছর কাটিয়েছি। আমি এখান থেকে এইচএসসি পরীক্ষা দিয়েছি। তারপর বিয়েটা হয়ে গেল। শি//শু নিকেতন আমাদের জন্য যা করেছে তা চিরদিন স্মরণীয় হয়ে থাকবে। তাদের ছাড়া আমরা হয়তো এতদূর আসতে পারতাম না। আমাদের জন্য দোয়া করবেন যাতে আমরা আমাদের বাকি জীবন সুখে-শান্তিতে কাটাতে পারি। ‘
ইয়াসমিন আরার স্বামী আবদুর সাত্তার বলেন, “শি//শু নিকেতনের দায়িত্বে থাকা ব্যক্তিদের কাছে আমি কৃতজ্ঞ। তারা আমাকে একজন ভালো জীবনসঙ্গী দিয়েছেন। আমি কৃষিকাজ করে সংসার চালাই। আমরা ভালো আছি।”
রাণীগঞ্জ এলাকার পিংকি আক্তার বলেন, ‘ছোটবেলা থেকেই শি//শু নিকেতনে বড় হয়েছি। তাদের যত্নে অনেক বছর কাটিয়েছি। আমার বাবা-মা শি//শু নিকেতনের দায়িত্বে আছেন। আমি সারাজীবন তাদের কাছে কৃতজ্ঞ থাকব। তারা আমাকে কাজ শিখিয়ে স্বাবলম্বী করেছে। ভালোই শিখিয়েছেন। ভালো পরিবার উপহার দিয়েছেন। আমি খুব খুশি. ‘
বর মাজেদুর রহমান বলেন, ‘ছোটবেলা থেকে এতিমকে বিয়ে করতে চেয়েছিলাম। ভগবান ইচ্ছা পূরণ করেছেন। এই বিয়েতে এগিয়ে আসায় পরিবার ও শি//শু নিকেতন তাদের কাছে কৃতজ্ঞ। সবাই আমাদের জন্য দোয়া করবেন। ‘
হাকিমপুর উপজেলার বোয়ালদার গ্রামের বর আব্দুর রাজ্জাক বলেন, ‘আমি দর্জির ব্যবসা করি। শি//শু নিকেতনের মেয়ে লিজা আক্তারকে বিয়ে করেছি। সবাই দোয়া করবেন আমরা যেন সুখে থাকতে পারি। ‘
হামজাপুর গ্রামের রবিউল ইসলামের বাবা রায়হানুল ইসলাম বলেন, “আমি যৌতুক ছাড়াই আমার ছেলেকে বিয়ে করেছি। আমি চাই সব বাবা-মা এটা করুক। আমার ছেলে ও পুত্রবধূর জন্য দোয়া করি। তারা সুখী হোক।’
দিনাজপুর শিশু নিকেতনের সভাপতি মোজাফফর আলী মিলন বলেন, “শিশু নিকেতন ১৯৭৯ সালে ১০ জন এতিম মেয়ে নিয়ে যাত্রা শুরু করে। এখানে এতিমদের HSAC পর্যন্ত পড়ালেখা শেখানো হয় এবং যখন তাদের বয়স ১৮ বছর হয় তখন ভালো পাত্র দেখে তাদের বিয়ে দেওয়া হয়। ২০০৯ সালে। , ৪০ টি এতিম মেয়ের একসঙ্গে বিয়ে হয়েছে।এর পর থেকে সারাবিশ্বে ছড়িয়ে পড়া রোগের কারনে একসঙ্গে বিয়ে দেওয়া সম্ভব হয়নি।তবে ২০১৯ সাল থেকে বিভিন্ন সময়ে ৪০টি এতিম মেয়ের বিয়ে হয়েছে। এই মেয়েরা স্বাবলম্বী।সবাই পোশাক তৈরিতে পারদর্শী। এবং হস্তশিল্পের প্রশিক্ষণ, রান্নার প্রশিক্ষক, কম্পিউটার শিক্ষা, খেলাধুলা ও সঙ্গীত। এ পর্যন্ত নিকেতনের ১৭৪ জন মেয়ের বিয়ে হয়েছে। বর্তমানে এখানে ১০৬ জন মেয়ে রয়েছে।’
জাতীয় সংসদের হুইপ ইকবালুর রহিম বলেন, মহান কাজের পাশাপাশি এতিমদের পাশে সবাইকে এগিয়ে আসতে হবে। আজ যারা এই মেয়েদের বিয়ে করেছেন তাদের জন্য আমি শুভ কামনা করছি। যৌতুক আমাদের সমাজে একটি ব্যাধি। এই ব্যাধি থেকে দূরে থাকতে হবে। যৌতুক ছাড়া বিয়ে করে নজির স্থাপন করেছেন ৪০ যুবক। যারা বেকার তাদের কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করা হবে। দিনাজপুরে অর্থনৈতিক অঞ্চল, আইটি পার্কসহ অন্যান্য সুযোগ-সুবিধা নির্মাণ করা হচ্ছে। রয়েছে বিভিন্ন সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠান। তাদের যোগ্যতা অনুযায়ী এসব প্রতিষ্ঠানে চাকরি দেওয়া হবে। যাতে তারা সুন্দরভাবে সংসার চালাতে পারে।
এই বিয়ের ঘটনা যোগাযোগ মাধ্যমে প্রকাশিত হওয়ার পরে মুহূর্তেই ভাইরাল হয় একসাথে চল্লিশে তিন কন্যার বিয়ের ঘটনায় সবাই তাদেরকে অভিনন্দন জানিয়েছে সবার দাম্পত্য জীবন সুখের এমনই প্রত্যাশা সবার।