উত্তরা ব্যাংক হলো বাংলাদেশের অন্যতম একটি জনপ্রিয় ও সুপরিচিত বেসরকারি ব্যাংক। বাংলাদেশে প্রায় সব জায়গাতেই উত্তরা ব্যাংকের শাখা রয়েছে। ব্যাংক হলো একটি নিরাপদ অর্থ গচ্ছিত রাখার স্থান। ব্যাংকে অর্থ গচ্ছিত রাখে মানুষ নিশ্চিন্ত থাকার জনত কিন্তু সেই ব্যাংক থেকেই যদি অর্থ উধাও হয়ে যায় তাহলে এর থেকে দুঃখের আর কি হতে পারে। সম্প্রতি জানা গেল উত্তরা ব্যাংকের অ্যাকাউন্ট থেকে টাকা উধাও হয়ে গেছে।
উত্তরা ব্যাংকের জয়দেবপুর শাখার এক গ্রাহক দুই দফায় তার অ্যাকাউন্ট থেকে ১৮ লাখ টাকা গায়েব বলে অভিযোগ করেছেন। গত ২১ আগস্ট (রোববার) ক্ষতিগ্রস্ত গ্রাহক শাহজাহান মোল্লা কাতার প্রবাসী জয়দেবপুর শাখায় ফোন করে বিষয়টি জানতে পারেন।
এরপর কাতার থেকে তার অ্যাকাউন্ট (নং 166911100118376) থেকে টাকা গায়েব হওয়ার বিষয়ে এক ভিডিও বার্তায় তিনি আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী ও সংশ্লিষ্টদের সহযোগিতা কামনা করেন। কষ্টার্জিত টাকা ফেরত পেতে দেশের প্রধানমন্ত্রীর কাছে অনুরোধও করেন তিনি।
প্রয়াত কাতার প্রবাসী শাহজাহান মোল্লা গাজীপুর সদর উপজেলার শিরিরচালা এলাকার মৃত ইউসুফ মোল্লার ছেলে।
প্রজ্ঞাপনে দেখা যায়, গত ১৪ আগস্ট সিটি ব্যাংকের সাতক্ষীরা শাখায় অ্যাকাউন্ট থেকে প্রথম আট লাখ টাকা স্থানান্তর করা হয়। একই দিনে আরও ১০ লাখ টাকা জয়পাড়া এসএমই শাখায় স্থানান্তর করা হয়।
জানা যায়, শাহজাহান মোল্লা ১৯৯৯ সালের ৩১ ডিসেম্বর উত্তরা ব্যাংকে একটি সঞ্চয়ী হিসাব খোলেন। দীর্ঘ প্রবাসে ওই অ্যাকাউন্টে টাকা লেনদেন হয়। ২১ আগস্ট ব্যালেন্স চেক করার জন্য কাতার থেকে মোবাইল ফোনে জয়দেবপুর শাখায় যোগাযোগ করেন।
ব্যাংক কর্তৃপক্ষ গ্রাহককে জানায়, তার অ্যাকাউন্টে সাত লাখ ৫৯ হাজার ৫৮০ টাকা রয়েছে। দুই দফায় ১৮ লাখ টাকা স্থানান্তরের কথা শুনে গ্রাহক হতবাক হয়ে যান। হিসাবধারীর অবর্তমানে এত টাকা কীভাবে ট্রান্সফার হল! এ প্রশ্নের কোনো সদুত্তর দিতে পারেননি কর্তৃপক্ষ। উল্টো উত্তরা ব্যাংক জয়দেবপুর শাখার কর্মকর্তা-কর্মচারীদের মধ্যে তোলপাড় শুরু হয়।
আরও পড়ুন: পিরোজপুরে গ্রিল কেটে ব্যাংকের বুথ চুরির চেষ্টা
বিষয়টি দেশে তার পরিবারের সদস্যদের জানালে তারা ব্যাংকের দ্বারস্থ হন। পরে তার ছোট ভাই। জাহাঙ্গীর আলম বাদী হয়ে পুরো বিষয়টি বর্ণনা করে মেট্রোপলিটন বাসন থানায় একটি অভিযোগ দায়ের করেন।
জাহাঙ্গীর আলম বলেন, টাকার হদিস জানতে প্রতিদিন ব্যাংকে যাচ্ছি। এখনো কোনো সমাধান পাইনি। তিনি বলেন, ব্যাংক থেকে গ্রাহকের অনুমতি ও স্বাক্ষর ছাড়াই টাকা গায়েব হওয়ার বিষয়টি খুবই উদ্বেগজনক।
আরটিজিএস ফর্ম বা ক্লিয়ারিং চেকে অ্যাকাউন্টধারীর স্বাক্ষর ছাড়াই কত বড় অঙ্কের টাকা স্থানান্তর করা হয়? এমন প্রশ্নের উত্তর না দিয়ে নিজেদের দায়িত্ব এড়িয়ে ব্যাংকের ব্যবস্থাপক স্কাইল্যাব চৌধুরী নিউজকে বলেন, সাতক্ষীরার একাউন্টে যাওয়া টাকা অভিযোগের মাধ্যমে স্থগিত করা হলেও ইতোমধ্যে ১০ লাখ টাকা উত্তোলন করা হয়েছে। তবে ৩১ আগস্টের মধ্যে গ্রাহকের টাকা ফেরত দেওয়া হবে।
গাজীপুর মেট্রোপলিটন পুলিশের সহকারী পুলিশ কমিশনার (ডিবি অ্যান্ড মিডিয়া) আবুসায়েম নয়ন জানান, অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে বিষয়টি তদন্ত শুরু করা হয়েছে।
প্রসঙ্গত, অনেক মানুষ আছে যারা তাদের সারাজীবনের অর্জিত শেষ সম্বল অর্থ ব্যাংকে গচ্ছিত রাখে যাতে জীবনের বাকি সময়টুকু সচ্ছলতার সহিত অতিবাহিত করতে পারে। তবে যদি ঘটে এমন ঘটনা তাহলে ব্যাংকের উপর থেকে মানুষের আস্থা এক সময় উঠে যাবে।