ক্ষমতাসীন আওয়ামীলীগ অধীনে কোনো ধরনের নির্বাচন সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ সম্ভব নয়। সরকার দীর্ঘ দিন ক্ষমতায় থাকার উদ্দেশ্য নির্বাচন ব্যবস্থা শেষ করে দিয়েছে। তারা আবার আগামী নির্বাচনে একই কৌশল অলম্বন করে ক্ষমতা ধরে রাখার চেষ্টা করছে। অথচ লাগামহীন দুর্নীতি ও লুঠপাটের কারনে নিত্যপ্রয়োজনী দ্রব্যসহ সকল পন্যের দাম বৃদ্ধির কারনে দেশের মানুষ আজ দিশেহারা। কিন্তু সে বিষয়ে তাদের কোন ধরনের মাথা ব্যাথা নেই। গাইবান্ধা-৫ উপনির্বাচনের আবারও প্রমাণ হলো এই স/রকারের অধীনে সুষ্ঠু নি/র্বাচন সম্ভব নয় মন্তব্য যা বললেন জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান জিএম কাদের।
জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান জিএম কাদের এমপি বলেছেন, গাইবান্ধা-৫ আসনের উপনির্বাচন প্রমাণ করে কর্তৃত্ববাদী সরকারের অধীনে সুষ্ঠু নির্বাচন সম্ভব নয়। নির্বাচন কমিশন চাইলেও সুষ্ঠু নির্বাচন সম্ভব হবে না।
শনিবার (১৫ অক্টোবর) রাজধানীর উত্তরখান কলেজিয়েট স্কুল মাঠে থানা জাতীয় পার্টির সম্মেলনে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।
জিএম কাদের আরও বলেন, সরকার ও সরকারি দলকে খুশি করতে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ও প্রশাসন অনিয়মকে নিয়মে পরিণত করে। গাইবান্ধা-৫ উপনির্বাচনে ব্যাপক কারচুপির কারণে আমরা নির্বাচন কমিশনকে নির্বাচন বাতিল ক/রতে বলেছিলাম। নির্বাচন কমিশন নির্বাচন বন্ধ ঘোষণা করেছে। এজন্য আমরা নির্বাচন কমিশনকে ধন্যবাদ জানাই। আমরা আবারো দাবি জানাচ্ছি নতুন তফসিল ঘোঘনার মাধ্যমে পুনঃনির্বাচন আয়োজন করা হোক। কোনো কারচুপির নির্বাচন আমরা মেনে নেব না।
তিনি বলেন, আমরা শুরু থেকেই ইভিএম নির্বাচনের বিরোধিতা করে আসছি। কারণ, ইভিএমে ঘোষিত ফলাফল চ্যালেঞ্জ করা সম্ভব নয়। কোনো প্রার্থী সংক্ষুব্ধ হলে তিনি কোনো প্রমাণসহ আইনি আশ্রয় নিতে পারবেন না। আবার যারা নির্বাচন পরিচালনা করেন, তাদের সঙ্গে সরকারের পক্ষপাতিত্ব করতে ব্যস্ত হয়ে পড়ে মাঠ প্রশাসন। ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিনের দোষ না থাকলেও যারা ইভিএম চালায় তারা নিরপেক্ষ নয়। তাই কর্তৃত্ববাদী সরকারের অধীনে সুষ্ঠু নির্বাচনের কোনো সুযোগ নেই। সরকার সমর্থকরা নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা সহ্য করতে পারে না, সরকার প্রতিটি নির্বাচনে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় জিততে চায়। নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করলে লাঞ্ছিত ও হ/য়রানির মা/মলা শিকার হতে হয় ।
তিনি বলেন, দেশ চরম লোডশেডিংয়ে ভুগছে। ডলারের অভাবে দেশ জ্বালানি কিনতে পারছে না। তাই চাহিদা অনুযায়ী বিদ্যুৎ উৎপাদন করতে পারছে না সরকার। কারখানার উৎপাদন বন্ধ হয়ে যাচ্ছে। হু/মকির মুখে পড়েছে রপ্তানি শিল্প। হু/মকির মুখে পড়েছে বৈদেশিক মুদ্রা আয়। বেকারের সংখ্যা অনেক বেড়েছে। ঘরে ঘরে চাকরি দেওয়ার কথা বলে সরকার ঘরে ঘরে বেকারত্ব সৃষ্টি করেছে। মানুষের আয় বাড়েনি, কিন্তু দ্রব্যমূল্য প্রতিদিন লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়ছে। এতে মানুষের ক্রয়ক্ষমতা কমে গেছে। বাবা-মা শিশুর খাবার কিনতে পারে না। এভাবে চলতে থাকলে আ/গামী প্রজন্ম পুষ্টিহীন জা/তিতে পরিণত হবে। মানুষ বাজার করতে পারছে না, বাজারে আগুন লেগেছে। বাজারের আগুনে পুড়ছে কো/টি কোটি পরিবার। টাকার অভাবে মানুষ চিকিৎসা নিতে পারছে না, ওষুধ কিনতে পারছে না।
জিএম কাদের ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, সরকারী দলে যারা আছে তারাই বেহেশত। নরকের আ/গুনে পুড়ছে দেশের মানুষ। দেশের বেশির ভাগ মানুষ টাকার অভাবে বাজার করতে পারছে না, দেশের একটি অংশ টাকা রাখার জায়গা পাচ্ছে না। তারা হাজার হাজার কোটি টাকা বিদেশে পাচার করছে। মানুষের অন্ন, বস্ত্র, শিক্ষা, চিকিৎসা ও বাসস্থান নেই, মানুষের মৌলিক অধিকার নেই। অথচ উন্নয়নের নামে হাজার হাজার কোটি টাকা লুটপাট করা হচ্ছে। হাজার কোটি টাকা ব্যয়ে মেগা প্রকল্প হাতে নেওয়া হচ্ছে। একটি প্রকল্পও সময়মতো শেষ হয় না। এতে প্রমাণ হয় প্রকল্পগুলোর সম্ভাব্যতা যাচাই করা হচ্ছে না। তাই সময় বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে ব্যয়ের পরিমাণও বাড়ে।
তিনি বলেন, গত সেপ্টেম্বরে এফএও একটি গবেষণা প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে। ওই প্রতিবেদনে বলা হয়, বিশ্বের ৪৫টি দেশ খাদ্য সংকটে পড়বে। এর মধ্যে এশিয়ার ৯টি এবং দক্ষিণ এশিয়ার ৩টি দেশ রয়েছে। দুর্ভাগ্যক্রমে, দক্ষিণ এশিয়ায় শ্রীলঙ্কা ও পাকিস্তানের পাশাপাশি বাংলাদেশও রয়েছে তালিকায়। রিজার্ভ সংকট, মুদ্রার অবমূল্যায়ন ও বিদ্যুতের ঘাটতির কারণে কৃষকদের সেচ ব্যবস্থাপনা ব্যাহত হচ্ছে। আবার সারের দাম বৃদ্ধির কারণে খাদ্যশস্যের উৎপাদনও ব্যাহত হচ্ছে। একই সঙ্গে খাদ্যশস্য আমদানির খরচও বেড়েছে বহুগুণ। দেশ মা/রাত্মক খাদ্য সংকটে পড়তে পারে। এ নিয়ে সরকারের কোনো সমস্যা নেই।
সম্মেলনে উত্তরখান থানা জাতীয় পার্টির আহ্বায়ক মাহমুদুল হাসান আলাল, জাতীয় পার্টি চেয়ারম্যানের উপদেষ্টা মাহবুবুর রহমান লিপটন, জাতীয় পার্টির ভাইস চেয়ারম্যান ও মহানগর উত্তরের সদস্য সচিব মোঃ জাহাঙ্গীর আলম পাঠান, যুগ্ম মহাসচিব সৈয়দ মঞ্জুর হোসেন, সাংগঠনিক সম্পাদক সাইফুল ইসলাম প্রমুখ বক্তব্য রাখেন। পিন্টু, হাজী নাসির উদ্দিন সরকার, মোঃ হেলাল উদ্দিন, কাজী আবুল খায়ের, এনাম জয়নাল আবেদীন।
প্রসঙ্গত, সরকারের অধীনে কোনো নির্বাচন সুষ্ঠু হবে না মন্তব্য করেন জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান জিএম কাদের। তিনি বলেন, নির্বাচন ব্যবস্থা সরকারের সম্পর্ন হস্তক্ষেপ রয়েছে।