Thursday , November 14 2024
Breaking News
Home / Countrywide / এবার আ.লীগের কেন্দ্রীয় পর্যায় থেকে বড় ধরনের সুখবর পেলেন বিদ্রোহী প্রার্থীরা

এবার আ.লীগের কেন্দ্রীয় পর্যায় থেকে বড় ধরনের সুখবর পেলেন বিদ্রোহী প্রার্থীরা

আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে ঘিরে রাজনৈতিক দলগুলো জেলা এবং উপজেলা পর্যায়ের নেতৃত্বে নতুন নতুন পরিকল্পনা গ্রহণের পর তা বাস্তবায়ন করার চেষ্টা করছেন। এ দিক থেকে এগিয়ে রয়েছে আওয়ামী লীগ। গত কয়েকটি নির্বাচনে দলের ভেতরকার কিছু প্রার্থী দলের মনোনয়ন দেওয়া প্রার্থীদের বিরুদ্ধে নির্বাচনে অংশ নেন এবং তারা দলের বিদ্রোহী প্রার্থী হিসেবে নির্বাচন করতে দেখা যায়, যার কারণে সেই সকল নেতাদের প্রতি কঠোর হয় কেন্দ্রীয় পর্যায়ের নেতারা। এবার বিদ্রোহী প্রার্থীদের ক্ষেত্রে নমনীয়তা দেখাচ্ছে কেন্দ্রীয় পর্যায় থেকে।

আওয়ামী লীগের মনোনয়ন না পেয়ে বিদ্রোহী প্রার্থী হিসেবে নির্বাচনে বিজয়ী উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যানদের ছাড় দেবে দলটি। ২০১৯ সালে অনুষ্ঠিত ওই নির্বাচনে দলের ১৭০ জন নেতা বিদ্রোহী প্রার্থী হিসেবে জয়লাভ করেন। আগামী নির্বাচন বা দলীয় পদে তাদের বিবেচনা করবে আওয়ামী লীগ। ওই সময়ের রাজনৈতিক বাস্তবতা এবং দলে এসব নেতাদের অবদান বিবেচনায় নিয়ে এ উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে।

আওয়ামী লীগের নীতিনির্ধারণী পর্যায়ের একাধিক নেতা দেশের একটি জনপ্রিয় সংবাদ মাধ্যমকে এমন তথ্য দিয়েছেন।
দলের কেন্দ্রীয় নেতারা জানিয়েছেন, স্থানীয় সরকার নির্বাচনে নৌকা প্রতীকের বিরুদ্ধে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করাদের মনোনয়ন না দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছিল আওয়ামী লীগ। তবে ২০১৯ সালের উপজেলা পরিষদ নির্বাচনের প্রেক্ষাপট ছিল ভিন্ন। ওই নির্বাচনে বিএনপিসহ অধিকাংশ দল অংশগ্রহণ না করায় বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচনের পরিস্থিতি তৈরি হয়। এ সময় আওয়ামী লীগের একাধিক প্রার্থী অংশ নেওয়ায় নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা হয়। গত এক বছরে বিদ্রোহী চেয়ারম্যানরা বিভিন্ন সময়ে দলের নীতিনির্ধারণী পর্যায়ে এসব বিষয় তুলে ধরেছেন। এ বিষয়ে নমনীয় হয়েছেন দলের কেন্দ্রীয় নেতারা।

আওয়ামী লীগের স্থানীয় সরকার গণপ্রতিনিধি মনোনয়ন বোর্ডের সদস্য ও প্রেসিডিয়াম জাহাঙ্গীর কবির নানক বলেন, আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রার্থী হিসেবে বিপুল সংখ্যক উপজেলা চেয়ারম্যান নির্বাচিত হয়েছেন। তারা আমাদের দলের লোক। তাদের অনেকেই দলের জন্য আ”ত্মত্যাগ করেছেন। বিষয়টি মাথায় রেখে আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা তাদের দল থেকে বহিষ্কার না করার সিদ্ধান্ত নেন। আমি মনে করি, আগামী নির্বাচন ও দলীয় সম্মেলনে উপজেলা বিদ্রোহীদের সঙ্গে নমনীয় আচরণ করা উচিত। ‘

আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী একাধিক উপজেলা চেয়ারম্যান বলেন, দেশে ৪৯২টি উপজেলা পরিষদ রয়েছে। এর মধ্যে ১৬৮ থেকে ১৭০টি উপজেলায় চেয়ারম্যান পদে আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রার্থী রয়েছেন।

অনুসন্ধানে জানা গেছে, পঞ্চগড়ের পাঁচটি উপজেলার মধ্যে একটি, কুড়িগ্রামের নয়টি উপজেলার মধ্যে চারটি, লালমনিরহাটের পাঁচটি উপজেলার মধ্যে তিনটি, নীলফামারীর ছয়টি উপজেলার মধ্যে দুটি, দিনাজপুরের ১৩টি উপজেলার মধ্যে তিনটি, সাতটি উপজেলার মধ্যে দুটি উপজেলায়। গাইবান্ধায়, লক্ষ্মীপুরের পাঁচটি উপজেলার মধ্যে একটিতে আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী উপজেলা চেয়ারম্যান রয়েছেন। . পাবনায় চার, নাটোরে দুই, চাঁপাইনবাবগঞ্জে একজন, জয়পুরহাটে একজন, বগুড়ায় দুই, চট্টগ্রামে তিন, কক্সবাজারে দুই, নওগাঁয় তিন, বরিশালে তিন ও সিরাজগঞ্জের এক উপজেলায় আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী চেয়ারম্যান রয়েছেন।

আওয়ামী লীগের একাধিক কেন্দ্রীয় সূত্র জানায়, অন্যান্য নির্বাচনে বিদ্রোহীদের বিরুদ্ধে কঠোর হলেও ২০১৯ সালের উপজেলা নির্বাচনে বিদ্রোহী নেতাদের দল থেকে বহিষ্কার করা হয়নি। অনেক নেতাকে যোগ্যতার ভিত্তিতে দলীয় পদ দেওয়া হয়েছে। নওগাঁর আত্রাইয়ের বিদ্রোহী উপজেলা চেয়ারম্যান আনোয়ার হোসেন জাতীয় সংসদের উপ-নির্বাচনে দলীয় মনোনয়ন পেয়ে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়েছেন। বিদ্রোহী চেয়ারম্যানরা আগামী জাতীয় নির্বাচনে বা দলের বিভিন্ন শাখা কমিটির সম্মেলনে পদপ্রার্থী হতে পারেন।

রাজশাহী বিভাগের একটি উপজেলা থেকে নির্বাচিত একজন বিদ্রোহী চেয়ারম্যান নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, আওয়ামী লীগের নীতিনির্ধারণী পর্যায়ের একাধিক নেতা নির্বাচনকে প্রতিদ্বন্দ্বিতামূলক করতে বিদ্রোহী প্রার্থী হতে অনেককে উৎসাহিত করেছেন। নির্বাচনের পর এক অনুষ্ঠানে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক বলেন, বিদ্রোহী প্রার্থী হিসেবে জয়ী নেতারা আওয়ামী লীগের।

পরবর্তীতে স্থানীয় সরকারের বিভিন্ন পর্যায়ের নির্বাচনে দলটির বিপুল সংখ্যক বিদ্রোহী প্রার্থী দেখা গেছে। এ অবস্থায় দলীয় শৃঙ্খলা রক্ষা ও আওয়ামী লীগের নৌকা প্রতীকের আরও প্রার্থীর বিজয় নিশ্চিত করতে কঠোর পরিশ্রম করেন কেন্দ্রীয় নীতিনির্ধারকরা। আওয়ামী লীগের স্থানীয় সরকার মনোনয়ন বোর্ড বিদ্রোহী প্রার্থীদের দলীয় মনোনয়ন ও গুরুত্বপূর্ণ দলীয় পদ না দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে।

স্থানীয় আওয়ামী লীগ সূত্রের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, দীর্ঘদিন ধরে দলের সঙ্গে থাকা নেতারা অধিকাংশ উপজেলায় বিদ্রোহী প্রার্থী হিসেবে বিজয়ী হয়েছেন। স্থানীয় নেতাকর্মীদের সমর্থনে ওই নেতারা চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন। দলীয় মনোনয়ন বোর্ড প্রার্থী বাছাইয়ে সঠিক সিদ্ধান্ত দিতে না পারায় অনেকেই বিদ্রোহী প্রার্থী হয়েছেন।

২০১৮ সালের ৩০ ডিসেম্বর, বিএনপি একাদশ জাতীয় নির্বাচনের অভিজ্ঞতা উল্লেখ করে ২০১৯ সালের জানুয়ারিতে উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে অংশগ্রহণ না করার ঘোষণা দেয়। পরে বিএনপির ঘনিষ্ঠ কয়েকটি দলও নির্বাচন বয়কট করে। ফলে অনেক উপজেলায় আওয়ামী লীগের প্রার্থীদের বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। এমন বাস্তবতায় অনেক বিদ্রোহী প্রার্থী এরপরও অর্ধশতাধিক উপজেলায় আওয়ামী লীগের প্রার্থীরা বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হয়েছেন।

আওয়ামী লীগ সূত্রে জানা গেছে, বিদ্রোহী উপজেলা চেয়ারম্যানদের নিজ এলাকায় শক্ত অবস্থান রয়েছে- এটা আওয়ামী লীগের নীতিনির্ধারণী পর্যায়ের নেতারা বুঝতে পেরেছেন। সব দিক বিবেচনায় নিয়ে বিদ্রোহীদের ছাড়ের পথ বেছে নেওয়া হয়েছে।

আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম বলেন, উপজেলা বিদ্রোহীদের মনোনয়ন দেওয়া হবে কি না, সে বিষয়ে আমরা এখনো কিছু বলিনি। ফলে আগে থেকে ধরে নেওয়ার কিছু নেই। সাম্প্রতিক নির্বাচনে স্থানীয় সরকার নির্বাচনে যারা বিদ্রোহী প্রার্থী হয়েছেন তাদের মনোনয়ন দেওয়া হবে না। পাঁচ বছর আগের ঘটনার সঙ্গে বর্তমান পরিস্থিতির তুলনা করা উচিত নয়। আগের বিদ্রোহীদের এবার সুযোগ দেওয়া হতে পারে।

তবে রাজনৈতিক ক্ষেত্রে আ.লীগ বেশ কিছুটা চাপের মুখে পড়েছে হঠাৎ করে জ্বালানি তেলের দাম বৃদ্ধির কারণে। যার কারণে দেশের মানুষকে দ্রব্যমূল্যের উর্ধ্বগতিতে পড়ে মূল্যস্ফীতির চাপে পড়ে ঘুরপাক খেতে হচ্ছে। এদিকে সাম্প্রতিক সময়ে পররাষ্ট্রমন্ত্রীর কয়েকটি বক্তব্য ঘিরে শুরুঝয়েছে আলোচনা-সমালোচনা, যার কারনে পুরো দলটি গফের নতুন করে রাজনৈতিক দিক থেকে বেশ কিছুটা চাপে পড়েছে।

 

 

About bisso Jit

Check Also

উপদেষ্টা পরিষদেই বৈষম্য

অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের উপদেষ্টা পরিষদে আঞ্চলিক বৈষম্যের অভিযোগ উঠেছে। ২৪ সদস্যের এই পরিষদে ১৩ জনই চট্টগ্রাম …

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *