গুম হয়ে যাওয়া ব্যক্তিদের ফিরিয়ে দেওয়ার দাবি জানিয়ে ‘মায়ের ডাক’ নামের একটি ব্যানার এর মাধ্যমে মানববন্ধন করেছে নিখোঁজ হয়ে ব্যক্তিদের স্বজনেরা। মানববন্ধনে অংশ নেন বিএনপিসহ বেশ কয়েকটি রাজনৈতিক দলের নেতৃবৃন্দরা। আজ মঙ্গলবার অর্থাৎ ৩০ আগস্ট সকাল ১০টার দিকে শাহবাগ জাতীয় জাদুঘরের সম্মুখভাগে সড়কে এই মানববন্ধনের আয়োজন করে।
মানববন্ধনে একাত্মতা প্রকাশ করে নাগরিক ঐক্যের আহ্বায়ক মাহমুদুর রহমান মান্না বলেন, দেশে একজন পররাষ্ট্রমন্ত্রী আছেন। তার মতো আজেবাজে কথা বলার জন্য বিখ্যাত মানুষ সম্ভবত আর কেউ নেই। তিনি বলেন, সুইডিশ কোম্পানি আয়না নিয়ে মিথ্যা বলেছে। কিন্তু অনেক সংবাদ মাধ্যম স্যাটেলাইটের মাধ্যমে জায়গাটি চিহ্নিত করেছে। সরকার যদি এতদূর যেতে চায়, আমাদের সেখানে যেতে দিন। আমাদের যেতে দিতে সাহস না হলে নিরপেক্ষ কাউকে যেতে দিন। না হলে জাতিসংঘকে যেতে দিন।
তিনি বলেন, এই সরকারের কাছ থেকে দয়া ও ভালোবাসা পাবেন না। যারা জাতিসংঘে গিয়েও মিথ্যাচার করে তাদের কাছ থেকে বিচার পাওয়া সম্ভব নয়। তাই শপথ নাও, যত আয়নাঘর আছে ভাঙব।
মান্না বলেন, এক রাতে তেলের দাম বেড়েছে ৪৬ টাকা। এতে মানুষের সংসারে আ”গুন লেগে গিয়েছে। জনগণ প্রতিবাদ জানাতে মিটিংয়ে যায়, সভায় হা”মলা হয়। এর মানে তারা (সরকার) আপনাকে বাঁচতেও দিতে চায় না। গতকাল হঠাৎ করে তেলের দাম লিটারে ৫ টাকা কমিয়েছে সরকার। এ যেন গরু মে’রে জুতা দান করা। ৪৬ টাকা বাড়িয়ে ৫ টাকা কমিয়ে লাভ নেই। এতে মানুষের দুর্ভোগ কমবে না।
মানববন্ধনে একাত্মতা প্রকাশ করে সাবেক ভিপি নুরুল হক নুর বলেন, রাষ্ট্রের চরিত্রের পরিবর্তন না হলে আমরা নিখোঁজদের আদৌ খুঁজে পাব কিনা জানা নেই। আমরা যারা গু’ম-খু”নের বিরুদ্ধে কথা বলছি তারা কতদিন রাজপথে মুক্ত থাকব জানি না।
তিনি বলেন, গুমের প্রতিটি ঘটনার সঙ্গে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী জড়িত। সাদা পোশাকের পুলিশ জড়িত। আয়নার কক্ষ আবিষ্কার করে, আমার বিশ্বাস নিখোঁজ ব্যক্তিরা সেখানে আটকা পড়েছেন। আওয়ামী লীগের ক্যাসেটের মন্ত্রীরা সেই আয়নার কথা বলছেন না! জনাব হানিফ (মাহবুবুল আলম হানিফ) বলেন, বিএনপি আমলে আয়না তৈরি হয়েছে। তাহলে আপনি গত ১৩ বছর ধরে কি করেছেন? বিএনপির পথে হেঁটেছেন? বিএনপির আমলে আয়নাঘর বানানো হলে আওয়ামী লীগ সরকারের উচিত তা ভেঙে ফেলা।
নূর বলেন, প্রধানমন্ত্রীর কনসার্ন ছাড়া আয়নাঘর হয়নি। প্রধানমন্ত্রীকে আয়নাঘরের বন্দিদের মুক্তি দিয়ে প্রমাণ করতে হবে, এটি তার অগোচরে হয়েছে। আমরা আয়নাঘরের বন্দীদের মুক্তি চাই। আয়নাঘরের বন্দীদের বিষয়ে প্রধানমন্ত্রীর সুস্পষ্ট বক্তব্য চাই। যদি সুস্পষ্ট বক্তব্য না পাই, আমরা আয়নাঘর ঘেরাও করব। এতে যদি আমাদের দিকে কামানও তাক করা হয়, পিছপা হব না।
ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের মাইক্রোবায়োলজি বিভাগের অধ্যাপক ড. মোঃ মাহবুব হোসেন বলেন, এই গুমের সাথে সরকার জড়িত। তাই তাদের কাছে বিচার চাওয়ার কোনো মানে নেই। আমাদের দেশে আদালত আছে। বিচারকদের বেতন দেওয়া হয় হাজার হাজার কোটি টাকা। আমি তাদের কাছে একটা প্রশ্ন রাখতে চাই, কেউ ১০০ টাকা চুরি করলে বিচার করবেন? তবে কেউ গু”ম বা খু’/ন হলে তাদের বিচার হচ্ছে না কেন? বিচারের নামে প্রহসন কেন করছেন?
নেত্র নিউজ নামে একটি পত্রিকা সম্প্রতি একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করে, যেখানে একটি ভিডিওতে সেলিম শেখ নামের এক ব্যক্তি গুম’ হয়ে যাওয়ার ঘটনার লোম খাড়া হয়ে যাওয়া বর্ননা দিয়েছেন। শেখ সেলিমের সাথে সেই সময়ে আরও একজন ব্যক্তি ছিলেন, যিনি দুইবার গুম হয়ে যান। হাসিনুর রহমান নামের ওই ব্যক্তি ছিলেন সাবেক সামরিক কর্মকর্তা। দুজনেই একই রকম অভিযোগ তুলেছেন। তাদেরকে উঠিয়ে নিয়ে যাওয়ার পর সামরিক গোয়েন্দা সংস্থা একটি গোপন আস্তানায় তাদেরকে নিয়ে যায় এবং সেখানে বেশ কিছুদিন আটকে রাখে। আর সেই গোপন স্থানের নাম হল আলোচিত ‘আয়নাঘর’।