বিএনপি জানিয়ে দিয়েছে রাজনৈতিক দল আওয়ামী লীগ সরকারের অধীনে কোনো নির্বাচনে যাবে না। নির্বাচনে যেতে হলে নির্দলীয় নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচনে যাবে, এমনটি জানিয়ে দিয়েছে দলটি। এদিকে নির্বাচনে অংশগ্রহণ না করে বিএনপি জাতীয় সংসদ থেকে দূরে রয়েছে। যার কারণে দলটি সংসদ থেকেও বিরোধীদলের স্থান থেকে অনেকটা দূরে সরে গিয়েছে।
নির্বাচন থেকে দূরে সরতে সরতে জাতীয় সংসদে প্রধান বিরোধীদলের জায়গাটাও খুইয়েছে দেশের অন্যতম বৃহৎ রাজনৈতিক দল বিএনপি। গত এক দশকেরও বেশি সময় ধরে আন্দোলন-সংগ্রামের বারবার ঘোষণা দিলেও সুফল পায়নি দলটি। সামনে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন। এ নির্বাচনকে কেন্দ্র করে দলটি নানা পরিকল্পনা করছে। সম্প্রতি পুরনো মিত্রদের সঙ্গেও সংলাপ শুরু হয়েছে। সংলাপে বিভিন্ন কার্যক্রম ও পরিকল্পনার পাশাপাশি আসন বণ্টন ও মন্ত্রিত্ব নিয়েও আলোচনা হচ্ছে। যদিও এখনো কোনো আলোচনা চূড়ান্ত হয়নি।
সূত্র জানায়, ঐক্যবদ্ধ আন্দোলনের রূপরেখা দিতে ২৩ মে স্থায়ী কমিটির বৈঠকে বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে সংলাপের সিদ্ধান্ত নেয় বিএনপি। সে অনুযায়ী গত ২৪ মে প্রথম প্রহরে তোপখানা রোডে নাগরিক ঐক্যের কার্যালয়ে গিয়ে আনুষ্ঠানিকভাবে সংলাপ শুরু করে বিএনপি। এরপর বাংলাদেশ লেবার পার্টি, গণসংহতি আন্দোলন, বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টি, জাতীয় পার্টি (কাজী জাফর), ন্যাশনাল আওয়ামী পার্টির (ন্যাপ) সঙ্গে সংলাপে বসে বিএনপি। জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল জেএসডির সভাপতির অসুস্থতার কারণে ২২ জুন এবং বিএনপির মহাসচিবের অসুস্থতার কারণে ২৭ জুন সংলাপ স্থগিত করা হয়।
বিএনপির উদ্যোগের পর থেকেই আসন্ন নির্বাচন ও সরকার গঠন নিয়ে জোটের মধ্যে ব্যাপক আগ্রহ দেখা দিয়েছে।
জানতে চাইলে বিএনপি নেতৃত্বাধীন ২০ দলীয় জোটের শরিক ন্যাশনাল আওয়ামী পার্টি-ন্যাপ ভাসানীর চেয়ারম্যান অ্যাডভোকেট মো. আজহারুল ইসলাম গনমাধ্যমকে বলেন, “আমরা দীর্ঘদিন ধরে বিএনপির শরিক ছিলাম। সংলাপ হয়েছে, ঐক্যবদ্ধ আন্দোলনের মাধ্যমে সরকারকে পতন করবো। তারেক রহমানের প্রস্তাবিত জাতীয় সরকারে আমরা আগ্রহী।’
আসন বণ্টন নিয়ে এখনো বিএনপির সঙ্গে কোনো আলোচনা হয়নি জানিয়ে তিনি বলেন, আমরা ন্যূনতম দুটি আসন ও একটি মন্ত্রণালয়ের জন্য দলের পক্ষ থেকে প্রস্তাব দেবো।
ন্যাপের কাছে আসন জিততে ভোটারদের সমর্থন আছে কি না জানতে চাইলে তিনি বলেন, দেখুন, এদেশে আওয়ামী লীগ-বিএনপির বাইরে সব রাজনৈতিক দল নিজেদের সামর্থ্য নেই বলেই জোট করেছে। আমরাও করেছি।
গত নির্বাচনে ন্যাপ ভাসানীকে জোট থেকে একটি আসন দেওয়া হয়নি, বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টি ও জাতীয় গণতান্ত্রিক পার্টি জাগপা একটি আসনও পায়নি। গত নির্বাচনে লিবারেল ডেমোক্রেটিক পার্টি (এলডিপি) ১০টি আসন চেয়েছিল। পাঁচজন ছাড় পেয়েছে, চারজন নাগরিক ঐক্য পেয়েছে, বাংলাদেশ লেবার পার্টি পেয়েছে তিনটির মধ্যে একটি, কল্যাণ পার্টি পেয়েছে দুটি, কাজী জাফরের জাতীয় পার্টি একটি এবং এনপিপি পেয়েছে একটি আসন।
তবে আসন্ন নির্বাচন ও তারেক রহমান ঘোষিত জাতীয় সরকার নিয়ে বিস্তারিত এখনো আলোচনা হয়নি বলে জানিয়েছেন বিএনপির শরিক দলের নেতারা।
সূত্র জানায়, এবার বিএনপির কাছে প্রতিটি দল থেকে অন্তত দুটি আসন ও একটি মন্ত্রিসভার প্রস্তাব পাঠানো হবে।
বাংলাদেশ লেবার পার্টির চেয়ারম্যান মোস্তাফিজুর রহমান ইরান বলেন, “এ বিষয়ে আমরা এখনো আলোচনা করিনি। গত নির্বাচনে আমরা তিনটি আসন চেয়েছিলাম এবং একটি পেয়েছি।” লেবার পার্টি বরাবরই যৌক্তিক বিষয় দাবি করেছে।
ন্যাশনাল পিপলস পার্টির (এনপিপি) চেয়ারম্যান ড. ফরিদুজ্জামান ফরহাদ বলেন, আমরা দীর্ঘদিন ধরে জোটে রয়েছি। বিএনপির সঙ্গেও আমার সংলাপ হয়েছে। সংলাপে আন্দোলন-সংগ্রাম, নির্বাচন ও সরকার গঠনের বিষয় নিয়ে আলোচনা হয়।
বিএনপির পক্ষ থেকে আসন ও মন্ত্রিত্বের দাবি প্রসঙ্গে তিনি বলেন, আগে নির্বাচন হোক, তারপর সংসদ সদস্য হিসেবে দেখা হবে।
জাতীয় গণতান্ত্রিক পার্টির চেয়ারম্যান খন্দকার লুৎফর রহমান বলেন, আমরা সংলাপে আলোচনা করেছি এই সরকারের অধীনে আর কোনো নির্বাচন হবে না। সুষ্ঠু নির্বাচনের পরিবেশ তৈরি করতে হবে, নির্বাচনের পর জিতলে জাতীয় সরকার গঠন করা হবে। তবে আসন নিয়ে কোনো আলোচনা হয়নি। নির্বাচিত হলে সবাই মিলে সরকার গঠন করবে। আপাতত এটি প্রাথমিকভাবে আলোচনা করা হয়েছে। নির্বাচনের আগে যখন আলোচনা হবে, তখন নানা বিষয়ে আলোচনা হবে।
তবে রাজনীতিবিদরা মনে করছেন, বিএনপিকে রাজনীতিতে সক্রিয় থাকতে হলে নির্বাচনে অংশগ্রহণ করতে হবে। নইলে এক সময় এই দলটির প্রতি তৃণমূল পর্যায়ের নেতারা বা শরিকরাও আস্থা হারিয়ে ফেলবে। যে কারণে বিএনপির রাজনীতিতে সক্রিয় থাকা উচিৎ। বিএনপি নির্বাচন থেকে দূরে সরে গিয়ে নিজেদের সরিয়ে দিচ্ছে রাজনৈতিক অঙ্গন থেকে এমনটাই জানান তারা।