খুলনার ৫২ বছর বয়সী গৃহবধূ রহিমা বেগম নিখোঁজ হওয়ার ঘটনাটি দেশজুড়ে আলোচনা সৃষ্টি করে। এ ঘটনার পর বেশকিছু চাঞ্চল্যকর তথ্য বেরিয়ে আসে। রহিমা বেগমকে পুলিশ ফরিদপুর থেকে সুস্থ অবস্থায় উদ্ধার করে। এরপর তাকে তার সন্তানদের হেফাজতে দিয়ে দেয় পুলিশ। কিন্তু ফের তার অন্তর্ধান হয়েছেন, এমনটাই গুঞ্জন উঠেছে। এদিকে তার একমাত্র ছেলে তার মায়ের বিষয়ে জবানবন্দি দিয়েছেন আদালতকে।
রহিমা বেগম (৫২) আত্মগোপনে গিয়ে অপহ’রণের নাটক সাজিয়েছিলেন বলে আদালতে সাক্ষ্য দিয়েছেন তার ছেলে মোহাম্মদ মিরাজ আল শাদি। গতকাল সোমবার সন্ধ্যায় খুলনা মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট মো. সারোয়ার আহমেদের আদালতে জবানবন্দিতে তিনি এ কথা বলেন।
বিষয়টি নিশ্চিত করে খুলনা পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশনের (পিবিআই) পুলিশ সুপার সৈয়দ মুশফিকুর রহমান দেশের একটি জনপ্রিয় সংবাদ মাধ্যমকে বলেন, দুপুরে মোহাম্মদ মিরাজ আল শাদী পিবিআই কার্যালয়ে এসে বলেন, তিনি তার মা রহিমা বেগমের বিরুদ্ধে বক্তব্য দিতে আগ্রহী। পরে পুলিশ তাকে আদালতে নিয়ে যায়। সন্ধ্যায় মায়ের বিচার চেয়ে আদালতে ২২ ধারায় জবানবন্দি দেন মিরাজ।
সৈয়দ মুশফিকুর রহমান বলেন, রহিমা বেগম বিভিন্ন জায়গায় লুকিয়ে থেকে মিথ্যা বলেছেন। তার ছেলে এটা মেনে নিতে পারছেন না। তিনি তার মায়ের বিচার চান। এ জন্য তিনি স্বেচ্ছায় আদালতে মায়ের বিরুদ্ধে জবানবন্দি দেন।
জবানবন্দির বিষয়ে মিরাজ আল শাদির মুঠোফোনে একাধিকবার যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তা বন্ধ পাওয়া গেছে। তবে অপহরণ মামলার বাদী আদুরী আক্তার বলেন, কেন ও কী উদ্দেশ্যে তার ভাই আদালতে স্বেচ্ছায় জবানবন্দি দিয়েছেন তা তিনি জানেন না। মিরাজ তাদের সঙ্গে থাকে না, সে আলাদা থাকে।
আদুরী আরো জানান, তারা ৫ বোন ও ১ ভাই। বাবার প্রয়ানের পর মেয়েরা যে সম্পত্তি পেয়েছিল সব সম্পত্তি মায়ের নামে রেজিস্ট্রি করে দেন। কিন্তু মিরাজকে তা দেননি। মিরাজ কখনোই মায়ের ব্যাপারে কোনো বিষয়ে এগিয়ে আসেননি। অপহরণ মামলার আসামিদের সঙ্গে মিরাজের যোগাযোগ থাকতে পারে।
গত ২৭ আগস্ট রাত ১০টার দিকে রহিমা বেগম খুলনার দৌলতপুরের মহেশ্বরপাশা উত্তর বণিকপাড়া এলাকায় বাসার আঙিনায় টিউবওয়েলে পানি আনতে গেলে এক ঘণ্টা পরও তিনি বাসায় ফেরেন না। এরপর তার সন্তানেরা খোঁজাখুঁজি শুরু করেন। টিউবওয়েলের পাশে তাদের মায়ের জুতা, ওড়না ও পানির পাত্র পড়ে থাকা অবস্থায় পেলেও তাকে খুঁজে পাওয়া যায়নি।
এ ঘটনায় ওই রাতেই দৌলতপুর থানায় সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করেন ছেলে মেরাজ। পরদিন মেয়ে আদুরী বাদী হয়ে তার মাকে অপ’হরণের অভিযোগে থানায় অপ’হরণের মামলা করেন।
এ ঘটনার পর রাতেই তার সন্তানেরা খোঁজাখুঁজি করে না পেয়ে দৌলতপুর থানায় গিয়ে একটি সাধারণ ডায়েরি করেন এবং এই ডায়েরি করেছিলেন রহিমা বেগমের ছেলে মেরাজ। এরপর দিন অন্য আরেক মেয়ে আদরি বেগম বাদী হয়ে থানায় একটি অপহরণ মামলা দায়ের করেন। এরপর বেশ কিছু দিন ধরে নিখোঁজ ছিলেন রহিমা বেগম। ২৮ দিন পর রহিমা বেগম এর সন্ধান পায় পুলিশ। তাকে ফরিদপুরের একটি বাড়ি থেকে সম্পূর্ণ সুস্থ অবস্থায় উদ্ধার করে খুলনায় নিয়ে আসা হয়।