একুশে পদক পেলেন চাঁপাইনবাবগঞ্জের দই বিক্রেতা মো. জিয়াউল হকের গ্রন্থাগারের জন্য জমি ও ভবন নির্মাণের ঘোষণা দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এছাড়া প্রধানমন্ত্রী তার বিদ্যালয়টি সরকারিকরণের জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের আশ্বাস দিয়েছেন।
মঙ্গলবার (২০ ফেব্রুয়ারি) সকাল সাড়ে ১১টায় রাজধানীর ওসমানী স্মৃতি মিলনায়তনে তিনি ‘একুশে পদক’ প্রদান করেন।
এর আগে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা অমর একুশে শহীদ দিবস ও আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস উপলক্ষে জিয়াউল হকসহ ২১ জন বিশিষ্ট ব্যক্তির হাতে ‘একুশে পদক-২০২৪’ তুলে দেন।
অনুষ্ঠানে জিয়াউল হক সম্পর্কে প্রধানমন্ত্রী বলেন, “দারিদ্র্যের কারণে তিনি নিজে লেখাপড়া করতে পারেননি। এ নিয়ে তার অন্তরে ব্যাথা ছিল। কিন্তু তিনি থেমে থাকেননি। ছোটখাটো চাকরি করে তার দায়িত্ব নেন। দই বিক্রি করে একটি ছোট দোকান চালিয়ে জীবিকা নির্বাহ করেন।এছাড়া তিনি জ্ঞানের আলো ছড়িয়ে দিতে পাঠাগার নির্মাণ করেন এবং সাধারণ মানুষকে লেখাপড়ার সুযোগ করে দেন।একটি বিদ্যালয় গড়ে তোলেন।
শেখ হাসিনা বলেন, তাকে এই পুরস্কার দিতে পেরে আমরা আনন্দিত কারণ সারাদেশে অনুসন্ধান করলে এমন অনেক গুণী মানুষের সন্ধান পাওয়া যাবে। হয়তো দারিদ্র্য বা সামাজিক কারণে তারা তাদের প্রতিভা বিকাশের সুযোগ না পেলেও সমাজকে কিছু দিয়েছেন।
তিনি আমাকে কয়েকদিন আগে বলেছিলেন যে তিনি যে গ্রন্থাগারটি তৈরি করেছেন তার জন্য একটি স্থায়ী জমি এবং একটি ভবন প্রয়োজন। আমি করব শুধু তাই নয়, তিনি যে স্কুলটি করেছেন সেটিও সরকারি করতে চান।
আমি বিদ্যালয়টি দেখব এবং এটি সঠিকভাবে করব। কেন? যে ব্যক্তি জীবনে এত বড় ত্যাগ স্বীকার করতে পারে তার জন্য এটা করার দায়িত্ব আমার। আমি শুধু প্রধানমন্ত্রী হিসেবে বলছি না, জাতির পিতার কন্যা হিসেবেও বলছি। আমি যদি প্রধানমন্ত্রী না হতাম এবং এই তথ্য আগে পেতাম, তাহলে আমরা নিজেরাই চেষ্টা করতাম।
উল্লেখ্য, জিয়াউল হকের বাড়ি চাঁপাইনবাবগঞ্জের ভোলাহাট উপজেলার ছামামুশরীভুজা গ্রামে। দই বিক্রি করে তিনি এলাকায় শিক্ষার আলো ছড়িয়ে গৌরব অর্জন করেন। যে মানুষটি ‘দই বিক্রি করুন, বই কিনুন’ স্লোগানটি তৈরি করেছিলেন তিনি নিজেকে শিক্ষার আলো ছড়াতে সীমাবদ্ধ রাখেননি, তিনি সমাজসেবায় ব্যাপকভাবে জড়িত ছিলেন।
এ বছর ভাষা আন্দোলন ক্যাটাগরিতে মরণোত্তর একুশে পদক পেয়েছেন মৌ. আশরাফুদ্দিন আহমদ ও বীর মুক্তিযোদ্ধা হাতেম আলী মিয়া (মরণোত্তর)। শিল্পকলার বিভিন্ন বিভাগে এ পদক পেয়েছেন ১১ জন। জালাল উদ্দিন খান (মরণোত্তর), প্রবীণ মুক্তিযোদ্ধা কল্যাণী ঘোষ, বিদিত লাল দাস (মরণোত্তর), এন্ড্রু কিশোর (মরণোত্তর) এবং শুভ্র দেব।
অভিনয়ে ডলি জোহর ও এম এ আলমগীর, পোশাকে খান মো. মোস্তফা ওয়ালিদ (শিমুল মুস্তাফা) ও রূপা চক্রবর্তী, নৃত্যে শিবলী মোহাম্মদ ও চিত্রকলায় শাহজাহান আহমেদ বিকাশ, মুক্তিযুদ্ধভিত্তিক প্রামাণ্যচিত্র নির্মাণ ও সংরক্ষণাগারে কাওসার চৌধুরী, সমাজসেবায় মো. জিয়াউল হক ও আলহাজ্ব রফিক আহমেদ এ পুরস্কার গ্রহণ করেন।
এ ছাড়া এবার ভাষা ও সাহিত্যে একুশে পদক পেয়েছেন চারজন। তারা হলেন- মুহাম্মদ সামাদ, লুৎফর রহমান রিটন, মিনার মনসুর ও রুদ্র মুহাম্মদ শহীদুল্লাহ (মরণোত্তর)। শিক্ষায় অধ্যাপক ড. এই তালিকায় জিনবোধি সন্ন্যাসীও রয়েছেন।