টানা কর্মসূচি দিয়ে ভোটকেন্দ্রিক আন্দোলনে যাচ্ছে বিএনপি। সবকিছু ঠিকঠাক থাকলে কয়েকদিনের মধ্যে ঘোষণা করা হবে বলে আশা করা হচ্ছে। এ কর্মসূচি সফল করতে মাঠ প্রস্তুত করছে দলটি। সরকারের পদত্যাগে একতরফা ও নির্বাচন বর্জন ও অসহযোগ আন্দোলনের পক্ষে জনমত সৃষ্টির লক্ষ্যে সারাদেশে লিফলেট বিতরণ করা হচ্ছে। দেশজুড়ে ব্যাপক সাড়া ফেলেছে দলটি।
এ উপলক্ষে অনেক কেন্দ্রীয় নেতা এখন নিজ নিজ এলাকায় অবস্থান করছেন। বাকিদেরও এলাকায় যাওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। সক্রিয় ও জনপ্রিয় নেতাদের ওপর থেকে বহিষ্কারাদেশও প্রত্যাহারের প্রক্রিয়াও চলছে। ইতিমধ্যে অন্তত ৩০ নেতাকে পুনর্বহাল করা হয়েছে।
এছাড়া নির্বাচনে কেন্দ্রে ও কোনো ধরনের সহযোগিতার প্রমাণ পাওয়া গেলে নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেওয়া হবে- এমন বার্তাও দেওয়া হয়েছে সব সাংগঠনিক জেলায়। এ কারণে সংশ্লিষ্ট নির্বাচনী এলাকার নেতাদের মনিটরিংয়ের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। সংশ্লিষ্ট সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।
সূত্র আরো জানায়, বিএনপি তাদের কূটনৈতিক তৎপরতাও বাড়িয়েছে। চলমান পরিস্থিতি সম্পর্কে ঢাকার বিদেশি দূতাবাস ও বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংস্থাকে অবহিত করছে দলটি। ২৮ অক্টোবর থেকে ২৪ হাজারের বেশি নেতাকর্মীকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে এবং ২৭ জন মা/রা গেছে। এরই মধ্যে কারাগারে থাকা অবস্থায় ১০ জনের মৃ/ত্যুসহ দেশের চলমান পরিস্থিতি সম্পর্কে দূতাবাসগুলোর সর্বশেষ চিঠিতে জানানো হয়েছে। এছাড়া গণযোগাযোগ ও লিফলেট বিতরণ কার্যক্রম আজ শেষ হচ্ছে। এদিন নতুন কর্মসূচি ঘোষণা করা হতে পারে।
জানা গেছে, নির্বাচনের আগে কর্মসূচি নিয়ে নেতাদের মধ্যে দুটি মত রয়েছে। এক পক্ষ বলছে, গণযোগাযোগ ও লিফলেট বিতরণ কর্মসূচিতে সাড়া জাগানো একই কর্মসূচি আরও কয়েকদিন দিলে আন্দোলনে জনসমাগম বাড়বে। সেক্ষেত্রে তারা ভোটের দিনসহ ৪-৫ দিন একটানা ‘অল আউট’ কর্মসূচি চান। অসহযোগের মধ্যে ধর্মঘট বা অবরোধ হতে পারে। তাদের যুক্তি, স্বল্প সময়ের মধ্যে সর্বশক্তি দিয়ে রাজপথে নামলে আন্দোলন সফল হবে। দীর্ঘ দিন এ কর্মসূচি চলতে থাকলে গ্রেফতার বাড়বে বলে জনগণ ভালোভাবে নেবে না। আরেক পক্ষ বলছে, ১ জানুয়ারি থেকে লাগাতার অবরোধ বা হরতাল চলবে। তবে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেবেন দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারিক রহমান।
বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী বলেছেন, একটি আন্দোলনের বিভিন্ন পর্যায়ে বিভিন্ন ধরনের কর্মসূচি থাকে। আমরা একতরফাভাবে সরকারের পদত্যাগের দাবিতে হরতাল-অবরোধসহ প্রহসনমূলক নির্বাচন বয়কটের আহ্বান জানিয়ে গণসংযোগ কর্মসূচি পালন করছি। আমরা জনগণের কাছে লিফলেটে তুলে ধরেছি যে আমরা একটি দুর্বৃত্ত সরকারের বিরুদ্ধে লড়াই করছি। সাধারণ মানুষ তা মন থেকে মেনে নিচ্ছে। তখন পরিস্থিতি বলে দেবে কী কর্মসূচি হওয়া উচিত।
তিনি আরও বলেন, ভোটারদের ন্যূনতম আগ্রহ থাকা সত্ত্বেও গণতান্ত্রিক বিশ্বকে ভোটের তথাকথিত উৎসব দেখানোর জন্য জনগণের ওপর নি/র্যাতন-নি/পীড়ন শুরু হয়েছে। ভোট না দিলে এলাকা ছাড়ার হু/মকি দেওয়া হচ্ছে। ভোটের উৎসবের বদলে চলছে আ/তঙ্ক ও উৎকণ্ঠা। ‘আমি আর ডামি’- নির্বাচনে এই ভোট নাটকে পুরো রাষ্ট্রযন্ত্রকে নামানো হয়েছে। কিন্তু এটা করে কোনো লাভ হবে না। কোনো দেশপ্রেমিক ভোটার ওই দিন ভোটকেন্দ্রে গিয়ে ভোট জালিয়াতির বৈধতা দেবেন না।
কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, কর্মসূচি সফল করতে দলীয় শৃঙ্খলাবিরোধী কর্মকাণ্ডে জড়িত থাকার অভিযোগে বহিষ্কৃত নেতাদের বহিষ্কারাদেশ ইতোমধ্যে প্রত্যাহার শুরু করেছে বিএনপি। আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে সক্রিয় নেতাদের পদে পুনর্বহাল করা হচ্ছে। সম্প্রতি কুমিল্লা উত্তর জেলা বিএনপির সাবেক সহ-সভাপতি কেএমআই খলিল, গাজীপুর মহানগর সদর মেট্রো থানা বিএনপির সাবেক আহ্বায়ক হান্নান মিয়া হান্নু ও সদস্য সচিব হাসান আজমল ভূঁইয়া, গাজীপুর মহানগর শ্রমিক দলের সাবেক সভাপতি ফয়সাল আহমেদ সরকার, চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলা বিএনপির সাবেক সদস্য সচিব মো. আনোয়ারা উপজেলা বিএনপির লায়ন মোঃ হেলাল উদ্দিন ও উপজেলা ছাত্রদলের সাবেক সভাপতি জিয়াউল কাদের জিয়া, উপজেলা স্বেচ্ছাসেবক দলের সাবেক সদস্য সচিব গাজী ফোরকান, জেলা ছাত্রদলের সাবেক নেতা মো. ইসমাইল ও মোঃ হাসান, চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলা বিএনপির সাবেক যুগ্ম আহ্বায়ক লিয়াকত আলী চেয়ারম্যানসহ অন্তত ৩০ নেতাকে বহিষ্কার করা হয়েছে। বিএনপির একাধিক নীতিনির্ধারক জানিয়েছেন, সক্রিয় ও স্থানীয়ভাবে জনপ্রিয় নেতাদের বহিষ্কারাদেশ প্রত্যাহারের স্থায়ী কমিটির সিদ্ধান্ত রয়েছে। খুলনার নজরুল ইসলাম মঞ্জুসহ সক্রিয় ও জনপ্রিয় ব্যক্তিদের মধ্যে যাদের অব্যাহতি ও বহিষ্কার করা হয়েছে, তাদের দলে ফিরিয়ে আনার প্রক্রিয়া চলছে। শিগগিরই তা করা হবে।
এদিকে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ভোট বর্জনকে উৎসাহিত করতে সব ধরনের উদ্যোগ নিয়েছে বিএনপি। একই সঙ্গে অন্যান্য সমমনা দল ও জোট রয়েছে।