জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের আইনের ছাত্রী ফাইরুজ সাদাফ অবন্তিকা আত্মহত্যা করেছেন। শুক্রবার রাতে কুমিল্লার বাগিচাগাঁওয়ের নিজ বাড়ি থেকে তার লাশ উদ্ধার করা হয়।
আত্মহত্যার আগে ফাইরুজ তার এক সহপাঠী ও বিশ্ববিদ্যালয়ের সহকারী প্রক্টরের বিরুদ্ধে হয়রানির অভিযোগ তুলে ফেসবুকে একটি স্ট্যাটাস দেন।
তার ফেসবুক স্ট্যাটাসে অবন্তিকা অভিযোগ করেছেন যে তার সহপাঠী আম্মান তাকে অফলাইনে এবং অনলাইনে অনেকবার হুমকি দিত। তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর অফিসে অভিযোগ করেও কোনো প্রতিকার পাননি। উল্টো বিশ্ববিদ্যালয়ের সহকারী প্রক্টর দ্বীন ইসলাম তাকে বিভিন্নভাবে বহিষ্কারের হুমকি দেন।
ফায়রুজের মা তাহমিনা শবনম অভিযোগ করেন, বিশ্ববিদ্যালয়ে বারবার জানিয়েও তারা হয়রানির বিচার পাননি। এ কারণে তার মেয়ে আত্মহত্যা করেছে।
অবন্তিকার মৃত্যুর জন্য দায়ীদের শাস্তি দাবি করেছেন তার স্বজনরা।
অবন্তিকা কুমিল্লার নবাব ফয়জুন্নেছা সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয় থেকে এসএসসি এবং কুমিল্লার ভিক্টোরিয়া সরকারি কলেজ থেকে এইচএসসি পাস করে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হন। অবন্তিকার বাবা জামাল উদ্দিন কুমিল্লা সরকারি কলেজের শিক্ষক ছিলেন। মৃত্যুর আগেও তার মেয়ে অবন্তিকা জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ে হয়রানির অভিযোগ করলেও প্রতিকার পাননি বলে অভিযোগ।
অবন্তিকার মা তাহমিনা শবনম অভিযোগ করেন, অবন্তিকাকে মানসিক হয়রানি করে আত্মহত্যা করতে প্ররোচিত করা হয়। বারবার বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষকে জানালেও তারা কোনো ফল পাননি।
মেয়ের আত্মহত্যার জন্য বিশ্ববিদ্যালয়ের সহকারী প্রক্টর দ্বীন ইসলাম ও সহপাঠী আম্মান সিদ্দিকীকে দায়ী করে তাহমিনা শবনম বলেন, অবন্তিকার বাবা জামাল উদ্দিন তার মেয়ে বেঁচে থাকতে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের কাছে গিয়েও কোনো ফল পাননি। জামাল উদ্দিনের মৃত্যুর এক বছরেরও বেশি সময় পর একই কারণে মেয়ে অবন্তিকা আত্মহত্যা করেন।
অবন্তিকার ভাই জারিফ গোয়াদ অপূর্ব বলেন, অবন্তিকা বিশ্ববিদ্যালয়ে হয়রানির বিষয়টি নিয়ে মানসিকভাবে অস্বস্তিতে ভুগছিলেন। সে সব সময় তার বাবা-মাকে এসব কথা বলেছে। কিন্তু সে আত্মহত্যা করবে তা কখনো ভাবিনি।
অবন্তিকার কুমিল্লার বন্ধুরা জানান, মেধাবী অবন্তিকা মানসিকভাবে শক্ত ছিল। তার আত্মহত্যা অপ্রত্যাশিত। দোষীদের সর্বোচ্চ শাস্তির দাবিও জানান তারা।
উত্তর জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় অবন্তিকার আত্মহত্যায় জড়িতদের বিচার দাবি করে। তার সহপাঠীরাও দায়ীদের সর্বোচ্চ শাস্তি দাবি করেছে।
এরই মধ্যে বিশ্ববিদ্যালয়ের সহকারী প্রক্টর দ্বীন ইসলামকে দায়িত্ব থেকে অব্যাহতি এবং সহপাঠী আম্মান সিদ্দিকীকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে।
ঘটনার বর্ণনা দিতে গিয়ে অবন্তিকার মা তাহমিনা শবনম জানান, মেয়েটি কিছুদিন আগে ঢাকার কলতা বাজারে ছিল। এখানে বিশ্ববিদ্যালয়ের ছেলেরা ওই বাড়িতে গিয়ে জানায় তার নামে জিডি আছে। তাকে লাথি মেরে বের করে দিয়েছে। ওই বাড়ির মেয়েদের জানার কথা নয়। আমার মেয়ে এসে বলছে মা, ওরা আমাকে এভাবে মানসিক নির্যাতন করতেছে। আমি পড়তে পারি না। পরে তার সাথে ঢাকায় গেলাম। আমি গিয়ে মেয়েরা চুপচাপ ছিল। আমি মেয়েদের জানতে দিইনি যে ওর অবন্তিকার পরীক্ষা চলছে। মেয়ের পরীক্ষা শেষ হলে আমি যেদিন চলে যাব, মেয়েরা বলছে তোমার পরীক্ষা শেষ নাকি পরীক্ষা শুরু হবে? তার মানে ইউনিভার্সিটির ইন্ধন দেওয়া হচ্ছে কীভাবে তাকে নি/র্যাতন করা যায়।