আগামী নির্বাচন নিয়ে রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে বিভিন্ন পরিকল্পনা ও আলোচনা চলচ্ছে। নির্বাচন নিয়ে দীর্ঘ দিন ক্ষমতার বাহিরে থাকা বিরোধী দল বিএনপির সামনে ব্যাপক চ্যালেঞ্জ রয়েছে। এছাড়া দলের শীর্ষ নেতৃত্ব নিয়ে ক্ষমতাসীন আওয়ামীলীগ নানা প্রশ্ন তুলছে। দলের নেতাকর্মীদের সুশৃঙ্খলতায় এনে আন্দোলন মাধ্যমে নিজেদের অবস্থান তৈরী করে আগামী নির্বাচনে অংশগ্রহন করাই দলের প্রধান লক্ষ বিএনপির।
আগামী দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে বিরোধী দল বিএনপির সামনে এখন কঠিন তিন চ্যালেঞ্জ। প্রথমত, দলীয় চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার মুক্তি নিশ্চিত করা, দ্বিতীয়ত, নির্দলীয় নিরপেক্ষ সরকার গঠনের দাবি আদায় এবং সর্বশেষ দল পুনর্গঠনের লক্ষ্যে জাতীয় কাউন্সিল করে একটি জোরালো আন্দোলন গড়ে তোলা। দীর্ঘ ১৫ বছর ধরে ক্ষমতার বাইরে থাকা বিএনপি এসব কঠিন চ্যালেঞ্জ কীভাবে মোকাবিলা করবে তার কৌশল নির্ধারণ করছেন দলের নীতিনির্ধারকরা। জানতে চাইলে বিএনপি স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, ‘নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে আগামী সংসদ নির্বাচন আদায়ের জন্য আমাদের প্রধান মাধ্যম রাজপথ। রাজপথে আন্দোলনের মাধ্যমে নির্বাচনকালীন নিরপেক্ষ ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠিত করেই বিএনপি নির্বাচনে অংশ নেবে।
নির্দলীয় নিরপেক্ষ সরকার ছাড়া দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অংশগ্রহণ না করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে বিএনপি। আওয়ামী লীগও বলছে আগামী জাতীয় নির্বাচন বর্তমান সরকারের অধীনেই হবে। এ অবস্থায় দাবি আদায়ের সমাধান খুঁজছে বিএনপি। এ লক্ষ্যে সরকার বিরোধী বৃহত্তর ঐক্য গড়ে তোলার পাশাপাশি অন্যান্য রাজনৈতিক দলের সঙ্গে দলের নেতা-কর্মীদের মনোবল জোরদার করার প্রচেষ্টা অব্যাহত রেখেছে দলটি। সব দলের সঙ্গে সংলাপ শেষে প্রস্তাবগুলো একত্রিত করে রাজপথে আন্দোলনের রূপরেখা তৈরি করা হবে।
বিএনপির দায়িত্বশীলরা বলছেন, দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে আওয়ামী লীগ যেভাবে হামলা-মামলা করছে, তাতে শক্ত অবস্থান না নিয়ে কোনো সমাধান হবে না। রাজপথে আন্দোলনের মাধ্যমে সব সমস্যার সমাধান হবে। সে কথা মাথায় রেখেই প্রস্তুতি নিচ্ছেন দলের নেতাকর্মীরা। এ কারণে জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে নেতা-কর্মীদের শক্তিশালী করতে শক্ত অবস্থান নিয়েছে দলটি। রাজনীতির মাঠে কোণঠাসা বিএনপির নেতা-কর্মীরা রাজপথে সক্রিয় হতে শুরু করেছেন। লন্ডন থেকে নেতাকর্মীদের সঙ্গে নিয়মিত কথা বলছেন দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান। সংগঠনগুলোকেও সাংগঠনিকভাবে শক্তিশালী করা হচ্ছে। আগামী এক মাসের মধ্যে দল ও অঙ্গসংগঠনের সব পর্যায়ের কমিটি গঠন ও পুনর্গঠনের কাজ শেষ করার নির্দেশ দিয়েছে দলীয় হাইকমান্ড। আন্তর্জাতিক পর্যায়েও যোগাযোগ ও কার্যক্রম বৃদ্ধি পেয়েছে। দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচনে না যাওয়ার বিষয়ে তারা স্পষ্ট মত প্রকাশ করেছেন।
জানা গেছে, বিএনপির নীতিনির্ধারকরা এখনই সরকারি দলের হামলার পাল্টা অবস্থান নিতে চাইছেন না। এখন নানা কর্মসূচির মধ্য দিয়ে বিএনপিসহ সব অঙ্গ সংগঠনকে মাঠে নামার প্রস্তুতির কাজ চলছে। পাশাপাশি বিরোধী দলগুলোকে ঐক্যবদ্ধ করার প্রক্রিয়া অব্যাহত থাকবে। বিএনপির দায়িত্বশীলরা বলেন, ছাত্রদলের ওপর ছাত্রলীগের হামলা নেহাত কোনো তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়ার জের নয়। এর টার্গেট আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন। এর মাধ্যমে নির্বাচন নিয়ে কোনো আপস নেই বলে বার্তা দিচ্ছে সরকারি দল। তাদের লক্ষ্য বর্তমান অবস্থান বজায় রেখে ২০২৩ সালের জাতীয় সংসদ নির্বাচন সম্পন্ন করা। সরকারের বিরুদ্ধে বৃহত্তর ঐক্যের লক্ষ্যে বিএনপির কাজকে ব্যাহত করা।
এ ব্যাপারে বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক রুহুল কুদ্দুস তালুকদার দুলু বলেন, বিএনপি এবার আর আওয়ামী লীগের প্রতারণার (নির্বাচনী) ফাঁদে পা দেবে না। আবার দলীয় সরকারের অধীনে কোনো নির্বাচন হতেও দেবে না। সুতরাং এবারের নির্বাচন নির্দলীয় নিরপেক্ষ সরকারের অধীনেই হতে হবে। আর এসব হামলা-নির্যাতন করে আন্দোলন দমানো যাবে না। সরকারকে বিদায় নিতেই হবে। রাজপথেই এবার ফয়সালা হবে।
বিএনপির কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে বিএনপিকে কোণঠাসা করতে নানা কৌশলে এগোচ্ছে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ। বিশেষ করে নির্বাচনকেন্দ্রিক বিকল্প জোট গঠন। বিএনপিতে বিভক্তির বিষয়টি স্পষ্ট করে ড. বিএনপিকে জোটের কাছে টানার কৌশল নিয়েছে আওয়ামী লীগ। এ ছাড়া বিরোধী দলের নেতাকর্মীদের ভয়ভীতি দেখানোর জন্য হামলা-মামলার আশ্রয় নিয়ে বিএনপিকে দুর্বল অবস্থায় রাখতে চায় ক্ষমতাসীন দল। এসব কারণে বিএনপি মাঠে আন্দোলনে যেমন সতর্ক রয়েছে, তেমনি জোট অটুট রেখে বড় জোট গঠন ও দলের নেতা-কর্মীদের মনোবল জোরদার করার দিকে নজর দিয়েছে দলটি।
সার্বিক প্রেক্ষাপটে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, ‘ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারিক রহমানের নেতৃত্বে আমরা আন্দোলন করছি, করব এবং জনগণকে সঙ্গে নিয়ে আন্দোলন ত্বরান্বিত করব। যখন সঠিক সময় হবে, আমরা আরও কঠোরভাবে রাস্তায় নামব।
প্রসঙ্গত, দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনে নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে অনুষ্ঠিত করতে সরকারকে বাধ্য করতে রাজ পথে আন্দোলনের মাধমে সমাধান করবে বলে মন্তব্য করে দলের শীর্ষ নেতারা। আর এজন্য বিএনপি প্রস্তুতি নিচ্ছে বলে জানায় নেতারা।