বাংলাদেশের প্রধান নির্বাচন কমিশনার হিসেবে দায়িত্বপ্রাপ্ত কে এম নুরুল হুদার নেতৃত্বে বর্তমান নির্বাচন কমিশনের মেয়াদ আগামি ১৪ ফেব্রুয়ারি শেষ হওয়ার কারনে নতুন নির্বাচন কমিশন গঠন করার জন্য রাষ্ট্রপতি সংলাপে বসতে যাচ্ছেন। রাষ্ট্রপতি আব্দুল হামিদ নির্বাচন কমিশনার পদের জন্য নাম সুপারিশ করার জন্য একটি অনুসন্ধান কমিটি নিয়োগের আগে নিবন্ধিত রাজনৈতিক দলগুলির সাথে তৃতীয়বারের মতো আলোচনা করছেন। রাস্ট্রপতি আব্দুল হামিদ, ২০১৬ সালের ডিসেম্বরে, একই ধরনের সংলাপ করেছিলেন যার ফলে কেএম নুরুল হুদার নেতৃত্বাধীন ইসি জাতীয় ও স্থানীয় পর্যায়ে একটি অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন করতে ব্যর্থতার জন্য ব্যাপক বিতর্কের জন্ম দেয়। এবার তিনি ফের সংলাপের আহবান জানিয়েছেন এবং ইতিমধ্যে বেশ কয়েকটি রাজনৈতিক দল রাস্ট্রপতির সাথে সংলাপে বসেছে। দেশের অন্যতম রাজনৈতিক দল বিএনপি এই সংলাপে বসতে নারাজ।
সরকারের উদ্দেশে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, সংলাপের নামে নতুন নাটক শুরু হয়েছে। সংলাপ নাটক বাদ দিয়ে আগে পদত্যাগ করুন। আবারো পরিষ্কার করে বলছি, নির্বাচন কমিশন গঠনের আগে নিরপেক্ষ সরকার গঠন করুন।
বিএনপি মহাসচিব বলেন, খালেদা জিয়া গণতান্ত্রিক আন্দোলনের বাতিঘর। তাকে সুচিকিৎসা থেকে বঞ্চিত করে ষ’ড়যন্ত্রের মাধ্যমে মৃ’ত্যুর দিকে ঠেলে দেওয়া হচ্ছে। অবিলম্বে তাকে মুক্তি না দিলে জনগণকে ঐক্যবদ্ধ করে উত্তাল আ’ন্দোলনের মাধ্যমে এই ‘ফ্যাসিস্ট, দানবীয়’ সরকারের পতন ঘটিয়ে জনগণের সরকার প্রতিষ্ঠা করা হবে।
শুক্রবার গাজীপুর শহীদ বরকত স্টেডিয়ামে বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার মুক্তি ও বিদেশে উন্নত চিকিৎসার দাবিতে গাজীপুর জেলা ও মহানগর বিএনপি আয়োজিত এক সমাবেশে তিনি এসব কথা বলেন। জেলা বিএনপির আহ্বায়ক ফজলুল হক মিলনের সভাপতিত্বে মহানগর বিএনপির সদস্য সচিব সোহরাব উদ্দিন ও জেলা বিএনপির সদস্য সচিব কাজী সাইয়েদুল আলম বাবুলের যৌথ সঞ্চালনায় এ সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়।
সমাবেশে ফখরুল আরও বলেন, একাত্তর সালে যে অধিকারের জন্য যু’দ্ধ করেছিলাম, ভোটবিহীন আওয়ামী লীগ সরকার সেই অধিকার কেড়ে নিয়েছে। গণতান্ত্রিক পদ্ধতি, গণতান্ত্রিক দেশ ধ্বং’স করে দেওয়া হয়েছে। গণতান্ত্রিক আন্দোলনের সঙ্গে যারা জড়িত প্রত্যেকের নামে অসংখ্য মিথ্যা মামলা দেওয়া হয়েছে। ইলিয়াস আলীসহ আমাদের অনেক নেতাকর্মীকে গু’ম করা হয়েছে, ৩৫ লাখ নেতাকর্মীর নামে মিথ্যা মামলা দিয়ে হয়’রানি করা হচ্ছে। ‘আমার ভোট আমি দেব, যাকে খুশি তাকে দেব’ এই অবস্থা এখন আর নেই। সারা দেশে ৪শ ইউপি চেয়ারম্যানকে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত ঘোষণা করা হয়েছে।
তিনি বলেন, নির্বাচন কমিশন গঠন করে কী হবে? আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় থাকলে তারা তো কাজই করতে পারে না। আওয়ামী লীগের মন্ত্রী, এমপি, নেতারা ভয় দেখায়- কথামতো কাজ না করলে চাকরি থাকবে না। এ ধরনের নির্বাচন কমিশন জনগণ আর চায় না।
জনগণের পাশে দাঁড়ানোর আহ্বান জানিয়ে ফখরুল প্রশাসন ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর উদ্দেশে বলেন, আপনাদের দায়িত্ব সংবিধান রক্ষা করা, অবৈধ আওয়ামী লীগ সরকারকে নয়। দুর্নীতিবাজ, ভোট চোর আওয়ামী লীগ নেতাদের নিরাপত্তার জন্য নয়। জনগণ আজ খালেদা জিয়ার মুক্তি চায়। খালেদা জিয়া এদেশের প্রথম নারী মুক্তিযোদ্ধা, তিনি স্বাধীনতা সার্বভৌমত্বের প্রতীক, গণতন্ত্রের আপসহীন নেত্রী। স্বৈরাচারী সরকারের কারাগারে তিনি এখন জীবন-মৃ’ত্যুর সন্ধিক্ষণে। অবিলম্বে তাকে মুক্তি না দিলে জনগণকে ঐক্যবদ্ধ করে এই ‘দানব’ সরকারের পতন ঘটিয়ে তাকে মুক্ত করা হবে।
উল্লেখ্য, নতুন নির্বাচন কমিশন গঠন করার লক্ষ্যে রাষ্ট্রপতি আব্দুল হামিদ সোমবার থেকে সংসদে প্রধান বিরোধী দল জাতীয় পার্টি থেকে শুরু করে রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে ধারাবাহিক সংলাপ শুরু করেন। রাষ্ট্রপতির প্রেস সচিব জয়নাল আবেদীন জানিয়েছেন, বাংলাদেশ ন্যাশনাল আওয়ামী পার্টিকে (ন্যাপ) ২৬ ডিসেম্বর বিকাল ৪টায় সংলাপের জন্য আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে এবং বাংলাদেশ সমাজতান্ত্রিক দল (বিএসডি) একই দিন সন্ধ্যা ৬টায় রাষ্ট্রপতির সঙ্গে দেখা করবে বলে জানিয়েছেন রাষ্ট্রপতির প্রেস সচিব জয়নাল আবেদীন।
বাংলাদেশ তরিকত ফেডারেশন ও খেলাফত মজলিশ যথাক্রমে ২৭ ডিসেম্বর বিকেল ৪টা ও সন্ধ্যা ৬টায় আলোচনায় অংশ নেবে এবং বাংলাদেশ ওয়ার্কার্স পার্টি ২৮ ডিসেম্বর বিকেল ৪টায় যোগদান করবে। ২৯ ডিসেম্বর বাংলাদেশ ন্যাশনালিস্ট ফ্রন্ট (বিএনএফ) বিকাল ৪টায় সংলাপ এবং একই দিন সন্ধ্যা ৬টায় রাষ্ট্রপতির সঙ্গে মতবিনিময় করবে ইসলামী ঐক্যজোট। ইসির ওয়েবসাইট অনুযায়ী বর্তমানে ৩৯টি নিবন্ধিত রাজনৈতিক দল রয়েছে। কিন্তু সংসদে মাত্র নয়টি দলের প্রতিনিধিত্ব রয়েছে।