Thursday , November 14 2024
Breaking News
Home / Countrywide / এবার অভিযোগের বিষয় নিয়ে ভিন্ন জবাব দিলেন ছাত্রলীগ সভাপতি

এবার অভিযোগের বিষয় নিয়ে ভিন্ন জবাব দিলেন ছাত্রলীগ সভাপতি

সম্প্রতি ছাত্রলীগ কেন্দ্রীয় কমিটির সভাপতি ও সাধারন সম্পাদকের বিরুদ্ধে দলীয় নীতি ভঙ্গসহ বিভিন্ন অভিযোগ উঠে। পরে এ বিষয়টি নিয়ে ব্যাপক আলোচনার সৃষ্টি হয় দলের মধ্যেসহ বিভিন্ন মহলে। তবে এ বিষয় নিদিষ্ট অভিযোগ দিয়েছেন ছাত্রলীগের একটি অংশ এবং বিষয় নিয়ে দলীয় প্রধানের হস্তক্ষেপ চেয়েছেন। অভিযোগ সত্য হলে শাস্তি মেনে নেব বলে যা বললেন কেন্দ্রীয় সভাপতি আল-নাহিয়ান খান জয়।

আলোচনা-সমালোচনা যেন পিছু ছাড়ছেই না ছাত্রলীগের। কেন্দ্রীয় সভাপতি আল-নাহিয়ান খান জয় ও সাধারণ সম্পাদক লেখক ভট্টাচার্যের কার্যক্রমে ক্ষুব্ধ সংগঠনটির একাংশ। নানা ‘অনিয়মের’ তালিকা তৈরি করেছেন তারা। সেই তালিকা জমা দেয়া হয়েছে আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে। এসব ঘটনা নিয়ে ছাত্রলীগের অভ্যন্তরে দেখা দিয়েছে অস্বস্তি। এ বিষয়ে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় নেতারা বলছেন, ক্ষুব্ধ নেতাদের সঙ্গে কথা বলে দলীয় প্রধানকে অবহিত করা হবে। ছাত্রলীগে শৃঙ্খলা ফেরানো জরুরি।

সম্প্রতি ধানমন্ডিতে আওয়ামী লীগ সভাপতির কার্যালয়ে বিভিন্ন ‘অনিয়মের’ তালিকা জমা দেন বিক্ষুব্ধ কয়েকজন নেতা। অভিযোগপত্রে সংগঠনের কেন্দ্রীয় কমিটির কয়েকজন সহসভাপতিসহ শতাধিক নেতা অভিযোগ জানানোর পক্ষে সম্মতি দিয়ে স্বাক্ষর করেছেন বলে দাবি করেন ছাত্রলীগের বর্তমান কমিটির সহসভাপতি কামাল খান, যিনি এ বিষয়টির সমন্বয় করছেন। তাদের দাবি, দলের গঠনতন্ত্র পরিপন্থী কাজে লিপ্ত জয়-লেখক।

‘অনিয়মের’ তালিকা জমা দেওয়ার পর একজন ক্ষুব্ধ নেতা বলেন, “আমরা, বাংলাদেশ ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী কমিটির সিনিয়র নেতারা, আমাদের সর্বোচ্চ অভিভাবক দেশরত্ন শেখ হাসিনার কাছে এসেছি। আপনারা জানেন, ৩০তম সম্মেলনের নির্দেশনা রয়েছে। ইতিমধ্যেই আমাদের নেতা ওবায়দুল কাদেরের কাছ থেকে এসেছেন, সে অনুযায়ী আমরা আমাদের সভাপতি-সাধারণ সম্পাদকের সঙ্গে কথা বলেছি, কিন্তু তারা বলেছেন, এ বিষয়ে তাদের কাছে কোনো নির্দেশনা আসেনি। সেই প্রেক্ষিতেই আমাদের সম্মেলনের বিষয়ে কথা বলতে আমাদের নেত্রীর কাছে এসেছি।আমাদের কিছু দাবি-দাওয়া নিয়ে নেত্রীর সঙ্গে কথা বলতে এসেছি।আমরা যেহেতু ছাত্রলীগ করি তাই আমাদের কিছু আবেগমিশ্রিত কথা রয়েছে সেসব বিষয়ে কথা বলতে এসেছি।

ক্ষুব্ধ এই নেতা বলেন, আমরা অবিলম্বে ৩০তম সম্মেলনের তারিখ চাই, এটাই আমাদের দাবি। এছাড়া ছাত্রলীগের সভাপতি-সাধারণ সম্পাদকের বিরুদ্ধে গঠনতন্ত্র লঙ্ঘনের বিষয়ে কিছু সারসংক্ষেপ দিয়েছি। আমরা এখানে সিনিয়র কিছু নেতা আসলেও যে পত্র নিয়ে এসেছি সেখানে এক তৃতীয়াংশের স্বাক্ষর রয়েছে।

ক্ষুব্ধ নেতাদের অভিযোগ, সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের অনিয়মের সীমা নেই। ছাত্রলীগের গঠনতন্ত্র অনুযায়ী প্রতি দুই মাস অন্তর কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী সংসদের সাধারণ সভা হওয়ার কথা থাকলেও পুরো তিন বছরে মাত্র একটি সভা করেছে বর্তমান কমিটি।

তাদের অভিযোগ, জয়-লেখার সময় যে কমিটি দেওয়া হয়েছিল তার ৯০ শতাংশই দুর্বল। এছাড়া অছাত্র, বিবাহিত, বিএনপি-জামায়াত পরিবারের সদস্য, মা/দক ব্যবসায়ী ও চিহ্নিত অপরাধীদের কমিটিতে রাখা হয়েছে। তারা প্রেস বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে কমিটি করছেন। এটা প্রধানমন্ত্রীর দেওয়া আমানতের খেয়ানত। এছাড়া কমিটিগুলোতে অনৈতিক লেনদেন হচ্ছে বলেও অভিযোগ করেন তারা।

ব্যক্তিগত চলাফেরার বিষয়ে অভিযোগ তুলে ক্ষুব্ধ নেতারা বলেন, জয়-লেখক নেতৃত্বে আসার পর থেকেই তারা বিলাসী জীবনযাপন শুরু করেন। তারা হল ছেড়ে দুটি অভিজাত অ্যাপার্টমেন্টে বসবাস শুরু করেন। তাদের একাধিক গাড়ি ব্যবহারের নজির রয়েছে বলেও অভিযোগ তাদের।

এসব অভিযোগ প্রসঙ্গে ছাত্রলীগের সভাপতি আল-নাহিয়ান খান জয় বলেন, বাংলাদেশ ছাত্রলীগ দক্ষিণ এশিয়ার সবচেয়ে বড় সংগঠন। প্রায় ৫০ লাখ নেতাকর্মীর সংগঠন এটি। কেন্দ্রীয় নির্বাহী সংসদ ৩০১ সদস্যের কমিটির সঙ্গে সুশৃঙ্খলভাবে আমাদের কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছি। বিশ্বব্যাপি ছড়িয়ে পড়া রোগের সময়েও ছাত্রলীগের কর্মকাণ্ডের অনেক প্রশংসা হয়েছে। এখন আমার কথা হলো ৩০১ সদস্যের কমিটির মধ্যে ৫ থেকে ৬ জন বিভিন্নভাবে অভিযোগ করতে পারে। কিন্তু অভিযোগের সত্যতা কী, সেটাই দেখার বিষয়।

জয় বলেন, আমরা দেখছি কোনো রকম বাছবিচার ছাড়াই সংবাদ ছড়িয়েছে যে ছাত্রলীগের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের বিরুদ্ধে প্রধানমন্ত্রীর কাছে নালিশ করা হয়েছে। সত্যি বলতে মিথ্যা নালিশ দেয়ার পাঁয়তারা চলছে। আমার প্রথম পরিচয় হচ্ছে যে আমি একজন শিক্ষার্থী এবং তারপর আমি ছাত্রলীগের সভাপতি। কিন্তু আমার তো একটা পরিবার আছে। ২০/২২ হাজার টাকা ভাড়ায় আমি এখন একটা ফ্ল্যাটে থাকি। সেখানে যদি অভিযোগকারীরা মনে করে যে এই ফ্ল্যাটে আমার বাবা-মায়ের সঙ্গে থাকার আমার যোগ্যতা নেই, তবে সেটা তারা ভুল ভেবেছেন। কারণ আমি ছাত্রলীগের সভাপতি হওয়ার আগে থেকেই পারিবারিকভাবেই এই জায়গাটাকে মেইনটেইন করে চলছি।

তিনি বলেন, তারা (অভিযোগকারী) নানাভাবে ভুল অভিযোগ করেছেন। এই ৫ থেকে ৭ জন লোক যে উদ্দেশ্য নিয়ে অভিযোগ করছে তা যদি সত্যি হয়, তাহলে আমি শাস্তি মেনে নেব। আমি বিশ্বাস করি, যারা অভিযোগ করছেন, তাদের উদ্দেশ্য সৎ নয়। ছাত্রলীগকে নিয়ে জামায়াত-বিএনপি যেভাবে মিথ্যা অপপ্রচার চালাচ্ছে, তারা (অভিযোগকারী) একই কাজ করছে।

তিনি আরও বলেন, আমরা যদি কোনো খারাপ কাজে জড়িত থাকি তাহলে অবশ্যই আমাদের নেত্রী ব্যবস্থা নেবেন। কারণ এদেশে যারাই দুর্নীতি করেছেন, তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিয়েছেন বঙ্গবন্ধুকন্যা। এর আগে আগের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদককেও অপসারণ করতে হয়েছে।

প্রসঙ্গত, ২০১৮ সালের ১১ ও ১২ মে ছাত্রলীগের ২৯তম জাতীয় সম্মেলনের মাধ্যমে নেতৃত্বে আসেন সভাপতি রেজওয়ানুল হক চৌধুরী শোভন ও সাধারণ সম্পাদক গোলাম রাব্বানী। জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে চাঁদাবাজিসহ বিভিন্ন অভিযোগে ২০১৮ সালের ১৪ সেপ্টেম্বর শোভন ও রাব্বানীকে দায়িত্ব থেকে অব্যাহতি দেওয়া হয়। ওই সময় জ্যেষ্ঠ সহসভাপতি আল-নাহিয়ান খান জয়কে ভারপ্রাপ্ত সভাপতি ও জ্যেষ্ঠ যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক লেখক ভট্টাচার্যকে ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক ঘোষণা করা হয়। ২০২০ সালের ৪ জানুয়ারি দুই শীর্ষ নেতাকে পূর্ণ দায়িত্ব দেওয়া হয়। গঠনতন্ত্র অনুযায়ী বর্তমান কমিটি মেয়াদোত্তীর্ণ হয়ে পড়ে।

প্রসঙ্গত, তাদের বিরুদ্ধে যে সব অভিযোগ উঠেছে সেগুলো আদৌ কতটুকু সত্য সেটি প্রমাণের বিষয়। তদন্তে মাধ্যমে যদি কোন সত্যতা খুজে পাওয়া যায় তাহলে শাস্তি মেনে নিতে রাজি বলে জানান কেন্দ্রীয় সভাপতি।

About Babu

Check Also

উপদেষ্টা পরিষদেই বৈষম্য

অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের উপদেষ্টা পরিষদে আঞ্চলিক বৈষম্যের অভিযোগ উঠেছে। ২৪ সদস্যের এই পরিষদে ১৩ জনই চট্টগ্রাম …

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *