সম্প্রতি জেলা প্রশাসক ও পুলিশ সুপারদের সাথে ইসির বৈঠকে হট্টগোল সৃষ্টি হয়। বিষয়টি গণমাধ্যমে আসার পর ব্যাপক আলোচনার সৃষ্টি হয় বিভিন্ন মহলে। বৈঠকে জেলা প্রশাসক ও পুলিশ সুপারদের বিরুদ্ধে ইসি আনিছুর কিছু নিদিষ্ট অভিযোগ তুলে ধরলে এমন পরিস্থিতির তৈরী হয়। তবে বিষয়টি ইসির পক্ষ থেকে ভুল বোঝাবুঝি বলা হয়। এরপর থেকে অফিস করছেন না ইসি আনিছুর রহমান এ নিয়ে নতুন প্রশ্ন উঠেছে।
দায়িত্ব গ্রহণের পর শনিবার প্রথমবারের মতো ঢাকায় সব জেলা প্রশাসক ও পুলিশ সুপারদের সঙ্গে মতবিনিময় সভা করে নির্বাচন কমিশন। সভায় বক্তৃতাকালে নির্বাচন কমিশনার আনিছুর রহমান নির্বাচন ব্যবস্থার প্রতি জনগণের আস্থাহীনতার জন্য ডিসি-এসপিদের দায়ী করেন। এ ছাড়া তিনি ডিসিদের নিরপেক্ষতা নিয়ে প্রশ্ন তোলেন। তিনি বলেন, মাঠ প্রশাসনের কর্মকর্তাদের কোনো রেকর্ড নেই এবং মন্ত্রী-এমপি ছাড়া তারা চলতে পারে না। ডিসিরাও ম্যাজিস্ট্রেটদের বরাদ্দ গাড়ির তেলের টাকা দেন না। তার বক্তব্যের এ পর্যায়ে সভাকক্ষে একযোগে ডিসি-এসপিরা হৈচৈ শুরু করেন। একপর্যায়ে কমিশনার আনিচুর রহমান বলেন, তাহলে আপনারা কি আমার বক্তব্য শুনতে চান না? মাঠ প্রশাসনের কর্মকর্তারা নেতিবাচক প্রতিক্রিয়া জানালে তিনি ডায়াস ত্যাগ করেন এবং বক্তব্য না বাড়িয়ে মঞ্চে নির্ধারিত আসন গ্রহণ করেন। সভা-পরবর্তী প্রেস ব্রিফিংয়ে আরও তিন নির্বাচন কমিশনার আসলেও আনিসুর রহমান সেখানে উপস্থিত ছিলেন না। রবিবার থেকে তিনি কাজ করছেন না। এ ছাড়া গতকাল গাইবান্ধা-৫ আসনের নির্বাচন পর্যবেক্ষণে অন্য সব কমিশনার উপস্থিত থাকলেও তিনি উপস্থিত ছিলেন না।
এমন পরিস্থিতিতে ইসি আনিচুর রহমান পদত্যাগ করতে পারেন বলে গুঞ্জন রয়েছে।
তবে এই গুজব উড়িয়ে দিয়ে তিনি গণমাধ্যমকে বলেন, আমি এমন কোনো সিদ্ধান্ত নিইনি। আমি কোথাও বলিনি। যারা পত্রিকায় বলেছন তাদের জিজ্ঞেস করুন। কেন কাজ করছেন না জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমি আমার সুবিধা মতো কাজ করব। আমি কা/লও যেতে পারি। আমি র/বিবারও যেতে পারি। আনিছুর রহমানের একান্ত সচিব শাহ মো.কামরুল হুদার কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, স্যারের অফিস কক্ষ ডেকোরেশনের কাজ হচ্ছে। ডেকোরেশনের কাজ শেষ হ/বে আগামী রবিবার। হয়তো কাজের পর অফিস করবেন। তবে তার আগেও অফিস করতে পারেন। অন্যদিকে সোমবার ইসি রাশেদা সুলতানা বলেন, তাদের গোলমাল করা ঠিক হয়নি। সাময়িকভাবে বলবো- একটু খারাপ লাগছে। বিব্রত হবার মতো কারণ এমন ঘটনা কে চায়? এমন পরিস্থিতির সৃষ্টি হবে ভাবতেও পারিনি।
তিনি বলেন, যে বিষয়গুলো হঠাৎ করে উত্তেজনাকর পরিস্থিতি তৈরি করলো সেগুলো খুব একটা মিথ্যা নয়। বিষয়গুলো যে আমাদের সমাজে নেই তা নয়। প্র/সঙ্গগুলো সত্য। হয়তো তারা কথা বলার ধরণ নিতে পারেনি। এ বিষয়ে মঙ্গলবার প্রধান নির্বাচন কমিশনার কাজী হাবিবুল আউয়াল বলেন, সামান্য ভুল বোঝাবুঝি হয়েছে। এটা নিয়ে এত ভাবার কোনো কারণ নেই। অন্যদিকে নির্বাচন বিশেষজ্ঞরা বলছেন, যাদের নির্বাচন কমিশনের নির্দেশনা অনুযায়ী কাজ করার কথা, তারাই নির্দেশনা শুনেছেন না। নির্বাচন কমিশন তা মানতে নারাজ। প্রশ্ন উঠেছে, নির্বাচন কমিশনের এই অবস্থা হলে নির্বাচনকালীন পরিস্থিতি কেমন হতে পারে? এখনই যাদের নির্বাচন কমিশন নিয়ন্ত্রণ করতে পারছে না বা করছে না, নির্বাচন কমিশন নির্বাচনের সময় কীভাবে নিয়ন্ত্রণ করবে?
প্রসঙ্গত, জেলা প্রশাসক ও পুলিশ সুপারদের সঙ্গে বৈঠকে যে দ্বন্দ্বের সৃষ্টি হয়েছে সেটি কিসের ইঙ্গিত দিচ্ছে। বিষয়টি নির্বাচন বিশ্লেষকরা ভিন্ন ভাবে দেখছে বলে জানিয়েছে।