অর্থনীতির ভাষায় সুদ হলো, প্রয়োজনের সময়ে অর্থ বা সম্পদ ধার নেয়ার পরে মূল অর্থ বা সম্পদ থেকে অতিরিক্ত প্রদান করাকে বুঝায়। বিষয়টি লেনদেনের মত দুই পক্ষের ভিতরে হয়ে থাকে, ঋণদাতা ঋণগ্রহীতার নিকট সুদ ধার্য করে থাকে। চক্রবৃদ্ধি সুদের হারকে, গ্রাম্য মহাজনের সুদের হারও বলা হয়ে থাকে। এটি অত্যন্ত খারাপ দিক, কারণটা হচ্ছে মূল টাকাটা কোনদিন শোধ হবে না, যতদিন মূল টাকাটা ফেরত দিতে না পারবে, ততদিনই চক্রবৃদ্ধি হারের টাকাটা দিয়ে যেতে হবে। অনেক সময় দেখা গেছে, মূল টাকা থেকে বেশি টাকা প্রদান করা হলেও মহাজনের হিসাবে টাকা এখনো তাকে ফেরত দেওয়া হয়নি। বাস্তবে বিষয়টি ঘটেছে নেত্রকোনার দুর্গাপুর ( Durgapur Netrokona ) উপজেলার বিরিশিরি ইউনিয়নের দক্ষিণাল ( Southern ) গ্রামে।
ঐ গ্রামের কয়েকটি পরিবার প্রতিনিয়ত সুদের কলে পি”ষ্ট হচ্ছেন। একজনের কাছ থেকে ৬ লাখ টাকা নিয়েছিলেন, ২১ লাখ টাকা দিয়েও পরিশোধ হয়নি। মহাজন আরও ১৩ লাখ টাকা দাবি করেছে। এছাড়া আরও দুইজনের কাছ থেকে ৪ লাখ ৭০ হাজার টাকা নিয়ে এবং ৮ লাখ টাকা পরিশোধ করা হয়নি। দুই মহাজন আরও ৬ লাখ টাকা দাবি করেছেন।
উপজেলার বিরিশিরি ইউনিয়নের দক্ষিণাল ( Southern ) গ্রামের বাবুল চন্দ্র দাস ( Babul Chandra Das ) (৪২) চাষ ও বাবার জন্য চড়া সুদে টাকা নেন। আসল টাকার চেয়ে অনেক বেশি টাকা দেওয়ার পরও বেশি টাকার জন্য মহাজনদের অপমান ও মানসিক চাপের স্বীকার হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন। ভুক্তভোগীর পরিবার জানিয়েছে, তারা দুর্গাপুর ( Durgapur ) থানায় অভিযোগ করেছেন।
ভুক্তভোগীরা মঙ্গলবার বিকেলে ( Tuesday afternoon ) স্থানীয় সাংবাদিকদের জানান, তারা বিভিন্ন সময় সুদের টাকা এনে চাষাবাদ করতেন। পরপর বেশ কিছু ফসল নষ্ট হওয়ায় সুদের হার বেড়ে যায়। সুদ পরিশোধকারী ব্যক্তির দাবি অনুযায়ী, টাকা পরিশোধ করতে না পারলেও প্রকৃত টাকা নিয়ে ছেড়ে দিতে চাইলে শনিবার দুপুরে ( Saturday noon ) ওই পরিবারের বাড়িতে এসে গালিগালাজ শুরু করে। একপর্যায়ে বাবুল চন্দ্র দাস ( Babul Chandra Das ) গুরু”তর অসুস্থ হয়ে পড়েন। পরে স্থানীয়দের সহায়তায় তাকে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ( Upazila Health Complex ) ভর্তি করা হয়।
বাবুল সাংবাদিকদের জানান, ওই এলাকার আব্দুল অজিত নামে এক ব্যক্তির কাছ থেকে ছয় লাখ টাকা সুদে নিয়ে দীর্ঘদিন ধরে ২১ লাখ টাকা দেন। সুদ ব্যবসায়ী আব্দুল অজিত আরও ১৩ লাখ টাকা দাবি করেন। অপরদিকে শহিদ মিয়ার কাছ থেকে দেড় লাখ টাকা সুদ নিয়ে আসেন। তাকে প্রায় ৩ লাখ টাকা দেওয়ার পর অসহায় পরিবারকে দেখে আরো ৩ লাখ টাকা দাবি করেন। এছাড়া বাবার চিকিৎসার জন্য একই এলাকার হাসান আলীর কাছ থেকে ৫ লাখ টাকা নিয়ে আসার পর আরও তিন লাখ টাকা দাবি করেন।
এমতাবস্থায় সুদ ব্যবসায়ীরা পরিবারের ওপর নানাভাবে চাপ সৃষ্টি করে চলেছে। যখন সে তার টাকা ফেরত নিতে বাড়িতে আসে, সর্বদা চাপ প্রয়োগ করা হয় এবং অশ্লী’ল ভাষায় অভিশাপ দেওয়া হয়। ঘটনার দিন তিনজন সুদখোর একসঙ্গে তাদের বাড়িতে এসে বাবুল চন্দ্র দাসকে হুমকি-ধমকি দেয়।
নির্যা ”তনের হাত থেকে বাঁচতে বাবুল দাসের স্ত্রী শিপা রানী বিশ্বাস বাদী হয়ে দুর্গাপুর থানায় অভিযোগ দায়ের করেছেন।
সুদ পরিশোধের বিষয়ে আব্দুল অজিত বলেন, বাবুল দাস আমার কাছ থেকে ১৩ লাখ টাকা নিয়েছে। প্রতি হাজারে ২০ কেজি ধান দেওয়ার কথা বলা হয়। তিনি এ পর্যন্ত কত টাকা দিয়েছেন, তা পরে বলতে পারব। আমি পরে এই বিষয়ে আপনার সাথে কথা হবে।এলাকার অপর দুই সুদ ব্যবসায়ী হাসান আলী ও শহিদ মিয়া জানান, পারিবারিক কলহের পর টাকা আত্মসাৎ করা হয়। আমরা কোনো সুদ দেইনি। তবে নির্ধারিত সময়ের মধ্যে টাকা পরিশোধ না করলে ধানক্ষেত ও পুকুর নামে লিখে দিতে হবে।এ বিষয়ে ইউপি চেয়ারম্যান রফিকুল ইসলাম রুহু বলেন, বিষয়টি শুনেছি। থানায় অভিযোগও করা হয়েছে। সমস্যা সমাধানেরও চেষ্টা করা হয়েছে। এখন আইনি ব্যবস্থার মাধ্যমে নিষ্পত্তি করাই ভালো।
প্রসঙ্গত, গ্রাম্য মহাজনরা যেভাবে সুদের ব্যবসা করেন, অর্থ নিয়ে অর্থনীতির নিয়মে এমনভাবে ব্যবসা করার কোনো সুযোগ নেই। অর্থনীতির ভাষায় কাউকে ধার দিলে, মূল অর্থ বা সম্পদ থেকে কিছুটা লভ্যাংশ প্রদান করতে হয়। গ্রাম্য মহাজনদের যে অবস্থা এতে করে বিপদগ্রস্ত মানুষজন ধ্বং”স হয়ে যাবে। অবশ্যই এদেরকে আইনের আওতায় এনে সঠিকভাবে বিচার করতে হবে।