রাজধানীর মতিঝিলে জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ড (এনসিটিবি) ভবনের সামনে বৃহস্পতিবার (১৬ জানুয়ারি) শিক্ষার্থীদের মধ্যে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। পাঠ্য বইয়ে ‘আদিবাসী’ শব্দের সংযোজন ও পরে তা সরিয়ে ফেলার সিদ্ধান্তের প্রেক্ষাপটে এই সংঘর্ষ হয়।
দুই পক্ষের কর্মসূচির কারণে উত্তেজনাপূর্ণ পরিস্থিতি তৈরি হয়। একটি পক্ষ ‘স্টুডেন্ট ফর সভরেন্টি’ নামে একটি সংগঠনের ব্যানারে এনসিটিবি ভবন ঘেরাও করে পাঁচ দফা দাবি জানায়। দাবির মধ্যে উল্লেখযোগ্য ছিল অবাঙালিদের ‘আদিবাসী’ বলে উল্লেখ না করা এবং বাঙালিদের বাংলাদেশের একমাত্র আদিবাসী হিসেবে সাংবিধানিক স্বীকৃতি নিশ্চিত করা।
অন্যদিকে, ‘সংক্ষুব্ধ আদিবাসী ছাত্র-জনতা’ ব্যানারে একদল মানুষ পাঠ্য বইয়ে ‘আদিবাসী’ শব্দটি পুনর্বহালের দাবি জানায়।
দুপুর ১২টার দিকে দুই পক্ষ মুখোমুখি হলে প্রথমে হাতাহাতি হয়। পুলিশ প্রাথমিকভাবে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনলেও দুপুর ১টার দিকে উত্তেজনা বৃদ্ধি পায় এবং ‘সংক্ষুব্ধ আদিবাসী ছাত্র-জনতা’র ওপর হামলা চালানো হয়। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া ছবিতে দেখা যায়, হামলাকারীরা লাঠি ও বাঁশ দিয়ে তাদের আঘাত করছে।
উভয় পক্ষই একে অপরের বিরুদ্ধে হামলার অভিযোগ করেছে। আহতদের মধ্যে সাংবাদিকসহ মোট ১২ জন ছিলেন। আহতদের তালিকায় রয়েছেন রূপায়া শ্রেষ্ঠা তঞ্চঙ্গ্যা, ইসাবা, রেংইয়ংরূ, ধন জেত্রা, সৈয়দ আওলাদ, জুয়েল মারার্ক, মারিয়া নওমি, শৈলী, মিশাল, আরতি, টনি ও শান্তিময় চাকমা।
আহত শান্তিময় চাকমা জানান, তারা শান্তিপূর্ণভাবে কর্মসূচিতে অংশ নিচ্ছিলেন। কিন্তু পথে তাদের ওপর অতর্কিত হামলা চালানো হয়। আহত রূপায়া শ্রেষ্ঠা তঞ্চঙ্গ্যা বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নির্বাহী কমিটির সদস্য বলে জানা যায়।
‘স্টুডেন্ট ফর সভরেন্টি’র যুগ্ম আহ্বায়ক মুহম্মদ ইয়াকুব মজুমদার দাবি করেন, তাদের পক্ষ থেকে কোনো হামলা চালানো হয়নি। অন্যদিকে, বাংলাদেশ আদিবাসী ফোরামের কেন্দ্রীয় সদস্য দীপায়ন খিসা অভিযোগ করেন, পরিকল্পিতভাবে ‘মব’ তৈরি করে আদিবাসী ছাত্র-জনতার ওপর হামলা চালানো হয়েছে।
এই ঘটনায় ছাত্রলীগের কিছু কর্মীর সম্পৃক্ততার অভিযোগও উঠেছে। তবে ‘স্টুডেন্ট ফর সভরেন্টি’র পক্ষ থেকে দাবি করা হয়, তারা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়কেন্দ্রিক একটি সংগঠন এবং সার্বভৌমত্ব রক্ষার ইস্যুতে তাদের সঙ্গে বিভিন্ন মহল একাত্মতা প্রকাশ করেছে।
উভয় পক্ষের দাবি ও পাল্টা দাবির মধ্য দিয়ে এই ঘটনা শিক্ষাঙ্গনে নতুন বিতর্ক উস্কে দিয়েছে।