দেশের মানুষের জন্য কাজ করছি জীবনের সব কিছু হারিয়ে বলেন প্রধানমন্ত্রী। কিন্তু একটি মহল দেশের বিরুদ্ধে ষ/ড়যন্ত্র করে যাচ্ছে আগেও দেশেকে ধ্বং/স চেষ্টা করছে আজও করে যাচ্ছে। এ দেশকে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছি তবে সেটা তারা কোনো ভাবে মেনে নিতে পারছে না। বুকে ব্যথা নিয়ে কাজ করে চলেছি বলে মন্তব্য করে যা বললেন প্রধানমন্ত্রী।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, বাবা-মা ও ভাইদের হারিয়ে বুকে ব্যথা নিয়ে এগিয়ে চলছি, মানুষের জন্য কাজ করে যাচ্ছি। আমি সবাইকে নিয়ে রাজনীতি করছি।
আমি কারো বিরুদ্ধে প্রতিশোধ নিতে চাই না। আমি ন্যায়বিচারে বিশ্বাস করি। এই চক্রন্তের নেপথ্যে কারা একদিন বের হবে। আমি জানি না আমরা দেখতে পারবো কিনা? সব শোক নিয়ে এগিয়ে যাচ্ছি। আমি তো নীলকণ্ঠ হয়ে বেঁচে আছি।
বুধবার (৩১ আগস্ট) রাতে জাতীয় সংসদ অধিবেশনে ১৪৭ ধারায় আনা প্রস্তাবের ওপর সাধারণ আলোচনায় অংশ নিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এ কথা বলেন।
প্রায় পাঁচ ঘণ্টা আলোচনার পর সংসদে প্রস্তাবটি সর্বসম্মতিক্রমে গৃহীত হয়।
এ সময় সংসদে অনুপস্থিত ছিলেন বিএনপির সংসদ সদস্যরা। তবে বিরোধী দল জাতীয় পার্টিসহ অন্যান্য দলের সংসদ সদস্যরা উপস্থিত ছিলেন এবং আলোচনায় অংশ নেন।
সংসদ অধিবেশনের শুরুতে আওয়ামী লীগের সংসদ সদস্য রাম উবায়দুল মোকতাদির চৌধুরী কার্যপ্রণালী বিধির ১৪৭ নং বিধিতে প্রস্তাবটি উত্থাপন করেন।
প্রস্তাবটি হচ্ছে, ‘পঁচাত্তরের খু/নি চক্রান্তকারীদের প্রেতাত্মারা এখনও ক্ষান্ত হয়নি। আজও তারা ঘৃণ্য তৎপরতা চালিয়ে যাচ্ছে পুনরায় রাষ্ট্র ক্ষমতায় ফিরে এসে ইতিহাসের ঢাকাকে ঘুরিয়ে দিতে এমন দাবি করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে সব চক্রান্ত ব্যর্থ করার শপথ নিতে জাতীয় সংসদে এ সাধারণ প্রস্তাব উপস্থাপন করা হয়।
আলোচনায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানসহ পরিবারের সদস্যদের হ/ত্যার ঘটনা তুলে ধরতে গিয়ে আবেগাপ্লুত হয়ে পড়েন।
তিনি বলেন, আমি শোক বুকে নিয়ে সেদিন দেশে এসেছিলাম। এ দেশের মানুষের জন্য কিছু করার জন্য। আমি সব সময় ভাবতাম এদেশের মানুষের জন্য কিছু করা উচিত। কারণ আমার বাবা সারা জীবন এদেশের মানুষের জন্য উৎসর্গ করেছেন। মানুষের জন্য কাজ করব। কিন্তু আমার পথ সহজ ছিল না। আমি জানি একদিন ম/রে যাবো কিন্তু ম/রার আগে ম/রতে রাজি ছিলাম না।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, আমি সব সময় ন্যায়বিচারে বিশ্বাস করি। আমি কোনোভাবেই প্রতিশোধ নিতে চাইনি। আমি আইনের মাধ্যমে বঙ্গবন্ধুর খু/নিদের বিচার করেছি। যারা সরাসরি হ/ত্যাকাণ্ডে জড়িত তাদের বিচারের আওতায় আনা হয়েছে। কিন্তু ১৫ আগস্টের ষড়যন্ত্র শুধু আমাদের বিরুদ্ধে নয়, রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে, স্বাধীনতার বিরুদ্ধে, ঐতিহ্যের বিরুদ্ধে, আদর্শের বিরুদ্ধে। তবে আমার বিশ্বাস এই ষড়যন্ত্রের পেছনে যারা আছে তারা একদিন বেরিয়ে আসবে।
তিনি বলেন, ১৫ আগস্টের হ/ত্যাকাণ্ড একজন রাষ্ট্রপতিকে হ/ত্যা করা নয়, একটি আদর্শকে হ/ত্যা করা হয়েছে।
দেশের ইতিহাসে অন্যায় অবিচার ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট সংঘটিত হয়েছিল। বঙ্গবন্ধু হ/ত্যাকাণ্ডের পেছনের ষড়যন্ত্রকারীদের দিকে ইঙ্গিত করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, যারা খু/নিদের ক্ষমতা দিয়ে মন্ত্রী বানায়, গণতন্ত্রকে হ/ত্যা করে, সামরিক শাসন আনে তাদের দেখে আমি বিস্মিত। এদের সঙ্গে কীভাবে অনেক মানুষ চলে গেল? আমরা বাবা-মা ও ভাই হারিয়েছি। আমরা মা/মলা করতে পারিনি, বিচার চাইতে পারিনি। তাদের নিয়ে ক্ষমতায় বসায়। বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের বিরুদ্ধে জাতিসংঘে গিয়ে কথা বলে। আর তারাই হয়ে গেল প্রধানমন্ত্রী, রাষ্ট্রপতি।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, বঙ্গবন্ধু হ/ত্যাকাণ্ডের পরে সেনা বাহিনীতে একের পর এক ক্যু হয়েছে। অনেক সেনা কর্মকর্তাকে নির্মমভাবে হ/ত্যা করা হয়। অনেকের লাশ পাওয়া যায়নি। ঢাকা জেলে প্রতিদিন ১০/২০টা করে হাজার হাজার সেনা অফিসারকে নির্মমভাবে হ/ত্যা করা হয়েছে। মামলার নামে প্রহসন হয়েছে। হ/ত্যাকাণ্ডের পরে মামলা দেওয়ার ঘটনাও হয়েছে। এ হ/ত্যাকাণ্ড স্বাধীনতা বিরোধী ও যাদের আমরা পরাজিত করেছি তাদের হাত ছিল।
তিনি বলেন, দেশের মানুষের জন্য আপ্রাণ চেষ্টা করে যাচ্ছি। তবে অনেকেই সমালোচনা করছেন। আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলো বাংলাদেশকে ঝুঁকিপূর্ণ দেশ না বললেও দেশের কোনো কোনো সংস্থা বলছে আমাদের অনেক ঝুঁকি রয়েছে। বঙ্গবন্ধুর খু/নিদের মধ্যে যারা বিদেশে পালিয়ে বেড়াচ্ছেন, সংসদ নেতা বলেন, রাশেদ চৌধুরী আমেরিকায় আছেন। আমরা চেষ্টা করে করছি।নূর কানাডায় এবং আর একজন লিবিয়া পাকিস্তানে আসা যাওয়া করে। ওইসব দেশগুলো আমাদের মানবাধিকার নিয়ে কথা বলে কিন্তু তারাই বঙ্গবন্ধুর খু/নিদের আশ্রয় দিয়েছে। তারা আবার মুখে মানবাধিকারের কথা বলে কীভাবে?
আলোচনায় অংশ নেন আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য আমির হোসেন আমু, তোফায়েল আহমেদ। প্রেসিডিয়াম সদস্য মতিয়া চৌধুরী, শেখ ফজলুল করিম সেলিম, মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক, সাবেক তথ্যমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ নেতা আবুল কালাম আজাদ, ওয়ার্কার্স পার্টির সভাপতি রাশেদ খান মেনন, বিরোধীদলীয় উপনেতা জিএম কাদের প্রমুখ।
প্রসঙ্গত, যারা দেশের বিরুদ্ধে নানা ষ/ড়যন্ত্র করছে তাদের কোনো স্থান হবে না এদেশে মন্তব্য করেন প্রধানমন্ত্রী। তিনি বলেন, ষ/ড়যন্ত্রকারীদের মুখোশ খুলে যাবে একদিন।