বাংলাদেশে যে সময় আর্থিক মন্দা দেখা দিয়েছে অর্থাৎ বৈদেশিক রিজার্ভের পরিমাণ কমে গিয়ে অর্থনীতিতে একটা নাজুক পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে, ঠিক সেইসময় দেশের ইতিহাসে সবচেয়ে বড় ঋণ কেলেঙ্কারির বিষয় ধরা পড়লো। দেশের একটি নামকরা শিল্প প্রতিষ্ঠান ৩০ হাজার কোটি টাকা ঋণ নেওয়ার ঘটনা দেশজুড়ে আলোচনায় এসেছে, আর এই শিল্প গ্রুপের নাম এস আলম গ্রুপ। জানা গেছে এই গ্রুপের পরিবারের সদস্যদের মোট আটটি ব্যাংকের মালিকানা আছে। তাছাড়া এই পরিবারের সদস্যদের নানা ধরনের ব্যবসা আছে। এবার এ বিষয়ে মুখ খুলেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সাবেক প্রটোকল অফিসার আলাউদ্দিন আহমেদ চৌধুরী নাসিম।
দেশের বর্তমান আইন অনুযায়ী প্রতিটি পরিবার থেকে সর্বোচ্চ ২ জন ব্যাংক পরিচালক হতে পারেন। ৪ বছর আগে আইন পরিবর্তন করে ৪ জনকে পরিচালক করার আইন করা হয়েছিল।
এক্ষেত্রে পরিবার মানে মা-বাবা-ভাই-বোন, ছেলে-মেয়ে সবাইকে মিলে বোঝানো হয়েছে। মালিকরা যাতে কোনো ব্যাংকে একক নিয়ন্ত্রণে রেখে অনিয়মে জড়াতে না পারে সেজন্য এই আইন করা হয়। ‘
ফেস”বুক পোস্টে এসব কথা লিখেছেন আলাউদ্দিন আহমেদ চৌধুরী নাসিম। কোনো ব্যাংক বা ব্যক্তির নাম উল্লেখ না করে তিনি লেখেন, ‘গত কয়েকদিন ধরে দেশের সব গণমাধ্যম ও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমগুলোতে ‘বাংলাদেশে একটি পরিবারের মালিকানাধীন ৭টি ব্যাংক ও ২টি আর্থিক প্রতিষ্ঠানের মালিকানা ও অনিয়ম নিয়ে গুঞ্জন চলছে। কোন আইনে একটি পরিবার এতগুলো ব্যাংকের মালিকানা পেল তা নিয়ে আমি কোথাও কোনো আলোচনা দেখি না। ‘
আলাউদ্দিন আহমেদ চৌধুরী নাসিম লিখেছেন, ‘বাংলাদেশ ব্যাংক, অর্থ মন্ত্রণালয় এমনকি সুশীল সমাজ যারা নিয়মিত আর্থিক খাতে দুর্নীতি ও অনিয়ম নিয়ে বিবৃতি দেয় তারাও এ বিষয়ে তাদেরও কোনো বক্তব্য পাওয়া যায় না। তাহলে কি এক পরিবারে সর্বোচ্চ ৪ জন পরিচালক থাকার আইন কার্যকর নয়?
আইনের ফাঁকফোকর নিয়ে প্রশ্ন তুলে তিনি লিখেছেন, আইনের ফাঁক খুঁজে অনিয়মের মাধ্যমে একাধিক ব্যাংকের একক মালিকানা অর্জিত হয়েছে কি না। তার ভাষায়, ‘একক নিয়ন্ত্রণের মাধ্যমে ব্যাংকিং খাতে দুর্নীতি ও অনিয়ম দূর করতে হলে এ বিষয়ে যথাযথ ব্যাখ্যা এবং বাংলাদেশ ব্যাংকসহ সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের পদক্ষেপ প্রয়োজন। ‘
প্রসংগত, সাধারণত ব্যাংক থেকে বিপুল পরিমান অর্থ ঋন নেওয়ার নামেই লুটপাট হয়। বাংলাদেশের ঋণ খেলাপির পরিমাণ এতটাই বেড়ে গেছে যে সেটার পরিমান অনেককে অবাক করে দিতে পারে। ব্যাংকের তথ্যমতে সোয়া লাখ কোটি টাকা খেলাপি ঋণের পরিমাণ ছেড়ে গেছে। গত বছরের ডিসেম্বর মাস পর্যন্ত বাংলাদেশে খেলাপি ঋণের পরিমাণ ছিল এক লক্ষ তিন হাজার কোটি টাকারও বেশি। বেশিরভাগ এই ঋণ নিয়েছেন দেশের প্রভাবশালী ব্যক্তিরা।