সংক্রমণের রেশ কাটতে না কাটতেই সারা-দেশজুড়েই লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়ছে নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যের দাম। আর এর ফলে রীতিমতো নানান সমস্যার মুখে পড়তে হচ্ছে দেশের সাধারণ মানুষে। নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যের মধ্যে অন্যতম জ্বালানি তেল। এক লাফে জ্বালানি তেলের দাম ৪০-৪৫ টাকা বেড়ে যাওয়ায় বেশ বিপাকে পড়েছে সাধারণ মানুষ।
আর এদিকে এবার জ্বালানি তেল নিয়ে যে কোনো ধরনের কারসাজি করলেও এখন থেকে পেট্রোবাংলার বিরুদ্ধে কোনো মামলা করা যাবে না, সংসদে এমন আইন নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী ব্যারিস্টার সৈয়দ সায়েদুল হক সুমন।
রোববার (১৮ সেপ্টেম্বর) তিনি তার ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজে লাইভে এসে ক্ষোভ প্রকাশ করেন।
ব্যারিস্টার সুমন বলেন, তেলের দাম বেশি দেই, কিন্তু কিছু বলি না। বলা হয় বিশ্ববাজারে দাম বাড়ায় দেশেও দাম বেড়েছে। কিছু বলি না। কিন্তু কষ্টটা কখন হয়েছে, যখন সকালে খবর পেলাম পেট্রোবাংলা থেকে সংসদে একটি আইন পাঠানো হয়েছে- পেট্রোবাংলা এখন থেকে গুড ফেইথে যা কাজ করবে তাদের বিরুদ্ধে কোনো মামলা করা যাবে না। বঙ্গবন্ধুকে মা’রা’র পর যেভাবে ইনডেমনিটি চাওয়া হয়েছিল, এ হ”ত্যা”কা”ণ্ডে’ যেন কারও বিরুদ্ধে কোনো মামলা করা না যায়, ঠিক একইভাবে তেলচুরির বিষয়ে পেট্রোবাংলা যা-ই করুক না কেন তাদের বিরুদ্ধে এখন কোনো মামলা করা যাবে না।
আইনজীবী আরও উল্লেখ করেন যে পেট্রোবাংলা ও বিপিসি ২০১৫-১৬ ও ২০১৬-১৭ অর্থবছরে বাংলাদেশ সরকারকে ৪ হাজার ৭০০ কোটি টাকার দুর্নীতি করেছে।
তিনি বলেন, অবাক হবেন, কে নাই-জালালাবাদ গ্যাস, বিবিয়ানা সবাই যে কোনোভাবে সরকারকে লুটপাট করছে। সরকারের কিছু লোক ভাগ পেয়ে স্বস্তি পাচ্ছে। সেজন্য সে কিছু বলে না। কিন্তু মূল্যবৃদ্ধির বিষয়ে দুটি কথা বললে আমাদেরকে বারোটা বাজিয়ে দেওয়া হবে।। যারা সরকারকে ধ্বংস করতে চায়, যারা বঙ্গবন্ধুর আদর্শের এই সরকারকে বিপন্ন করতে চায় তাদের বিরুদ্ধে কারও কিছু বলার নেই।
‘এটা একমাত্র আমাদের প্রধানমন্ত্রী ছাড়া আমাদের আর জায়গা নেই এখন। পেট্রোবাংলা নিজেই কর্ণফুলী গ্যাস কোম্পানির ১২ কর্মকর্তার বিরুদ্ধে চুরির মামলাসহ দুর্নীতির অভিযোগ পেয়েছে। কোম্পানির এমডি কোথায় আছেন। আমরা জানি না যে সেখানে আছে। তাদের বিরুদ্ধে কোনো বিচার হয়েছে কিনা।
ব্যারিস্টার সুমন বলেন, এই দেশে আপনি কি কি করলে শেয়ার মার্কেটে যাবেন, আপনি তেলের ব্যবসা করবেন পেট্রোলিয়ামে যাবেন হাজার কোটি মেরে দিলেও আপনার কোনো বিচার হবে না। তেলের ব্যবসা করবেন, পেট্রোলিয়ামে যাবেন, হাজার কোটি টাকা মারলেও বিচার হবে না। জিজ্ঞেস করলে বলবে, ভাই আমরা বঙ্গবন্ধুর আদর্শের মানুষ। যারা শেখ হাসিনাকে নেতা মনে করেন তারা বঙ্গবন্ধুর আদর্শের ক্ষতি করে এমন কিছু করতে পারেন। কিন্তু তাদের সামনে কিছু বলতে পারবেন না। এই অবস্থা। বেশি কথা বললে অমুক অমুক সমস্যা হবে। আমি কিছু বলতেও পারি না।
তিনি আরও বলেন, কিন্তু আমার একটাই অনুরোধ, আমি যে বিশ্বাসটির কারণে এখনো বাংলাদেশে রয়ে গেছি, বিশ্বাস করি প্রধানমন্ত্রীর কারণেই এখনো বেঁচে আছে বাংলাদেশ। এজন্য এখনো আশা হারাইনি। মনে করি উনার নেতৃত্বে একসময় ইনডেমনিটি বাতিল করে যেভাবে বঙ্গবন্ধু ‘হ”’ত্যা’র বিচার হয়েছে, একইভাবে তেলচোরদেও যেন ইনডেমনিটি দেওয়া না হয়। সংসদে যেন এ বিলটা পাস করা না হয়। এজন্য সরকারের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের প্রতি আমি দাবি জানাই।
‘এক সপ্তাহের জন্য বাসায় এসেছি, এখন মনে হচ্ছে ঢাকায় এসব চোরদের কাছে যাওয়ার চেয়ে বাসায় থাকাই ভালো। গবাদি পশু বা এ জাতীয় কিছু ব্যবসা করে অন্তত একজন সৎ জীবিকা অর্জন করা যাবে। আজ বিদায় জানাচ্ছি। ভালো থাকুন, সুস্থ থাকুন’
এদিকে নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যের দাম কমানোর কথা বললেই সরকারের পক্ষ থেকে জানানো হয়, সারাবিশ্বেই নাকি মন্দ চলছে। অথচ বিশ্বের অনেক দেশেই নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যের মূল্য কমতে শুরু করেছে, কিন্ত বাংলাদেশে ঘটছে এর উল্টোটা।