Thursday , November 14 2024
Breaking News
Home / Countrywide / এডিসি হারুনের বিষয় নিয়ে পুলিশের মাঝে তীব্র মতানৈক্য, জানা গেল কারন

এডিসি হারুনের বিষয় নিয়ে পুলিশের মাঝে তীব্র মতানৈক্য, জানা গেল কারন

শাহবাগ থানার ওসির (তদন্ত) কক্ষে ছাত্রলীগ নেতাদের মারধরের ঘটনায় পুলিশের এক শ্রেণির কর্মকর্তার মধ্যে মতানৈক্য দেখা দিয়েছে। এক পক্ষ মনে করছে, ওই রাতে যা ঘটেছে তা অতিরঞ্জিত করা হচ্ছে। পুলিশের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন করার জন্য এটা করা হচ্ছে। অন্যদিকে এডিসি হারুন-অর-রশীদের বিতর্কিত কর্মকাণ্ডে জড়িত থাকার ঘটনা নতুন নয়। আগের বিতর্কিত কর্মকাণ্ডের জন্য তাকে জবাবদিহি করা হয়নি বলে তিনি বেপরোয়া হয়ে উঠেছেন। এ কারণে তার বিরুদ্ধে কঠোর শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়া হলে বাহিনীর সুনাম বাড়বে।

ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) কয়েকজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাও হারুন ইস্যুতে মতানৈক্যের ইঙ্গিত দিয়েছেন। এ নিয়ে পুলিশের মেসেঞ্জার ও হোয়াটসঅ্যাপের বিভিন্ন গ্রুপেও চলছে আলোচনা-সমালোচনা। শনিবার রাতের আলোচিত ঘটনার পর থেকে পুলিশের বিভিন্ন পর্যায়ে এ তথ্য জানা গেছে।

ঘটনার সূত্রপাত, পরবর্তী ঘটনাপ্রবাহ এবং উপস্থিত সবার ভূমিকা নির্ধারণে ডিএমপির তিন সদস্যের একটি দল কাজ করছে। পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, ডিএমপি কমিশনার কমিটিকে প্রতিবেদন দিতে দুই দিন সময় দেন। কিন্তু তদন্তের পরিধি বিস্তৃত হওয়ায় তারা আরও পাঁচ দিন সময় পেয়েছেন বলে জানিয়েছেন ডিএমপির ডিসি মো. ফারুক হোসেন। ইতোমধ্যে কমিটি এডিসি হারুন-অর-রশীদ, এডিসি সানজিদা আফরিন, পরিদর্শক মো. গোলাম মোস্তফা, ঘটনার মূল ভুক্তভোগী ছাত্রলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক আনোয়ার হোসেন নাঈম, আরেক আহত ছাত্রলীগের বিজ্ঞানবিষয়ক সম্পাদক শরীফ আহমেদ মুনিমসহ অন্তত ১০ জনের বক্তব্য নিয়েছে। এডিসি সানজিদা আফরিনের স্বামী রাষ্ট্রপতির এপিএস আজিজুল হক খান মামুনকে চিঠি দিয়ে বক্তব্য নেওয়ার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।

তদন্ত সূত্র জানায়, এডিসি হারুন ও সানজিদা তদন্ত কমিটির কাছে এ ঘটনার মূল দায় দিয়েছেন এপিএস মামুনের ওপর। অপরদিকে ভুক্তভোগীরা পুলিশ কমিটির কাছে ঘটনা ও নির্যাতনের বর্ণনা দিয়েছেন। এ ঘটনায় নাঈম ও মুনিম ছাড়াও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আরও দুই শিক্ষার্থী জড়িত থাকার তথ্য পেয়েছে কমিটি। তদন্ত কমিটি তাদের বক্তব্যও নেবে। তারা অপরাধের মাত্রা মূল্যায়ন করবে এবং সে অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়ার সুপারিশ করবে। এখন পর্যন্ত যেসব সাক্ষ্য গ্রহণ করা হয়েছে তার মধ্যে এডিসি হারুন ও পরিদর্শক মোস্তফার সেদিন সবচেয়ে আগ্রাসী ভূমিকায় থাকার তথ্য পাওয়া গেছে। তবে আহত ছাত্রলীগ নেতারা হামলায় ১০-১৫ জন অংশ নিলেও তদন্তে এ পর্যন্ত ৮-১০ জনের নাম পাওয়া গেছে। তদন্ত কমিটির একজন সদস্য নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, এ ঘটনার তদন্ত চলছে অত্যন্ত কঠোরভাবে। ওই দিন কী হয়েছিল, তদন্তে উঠে আসবে।

এদিকে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে এ ঘটনায় তীব্র প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন ক্ষমতাসীন দলের ছাত্র সংগঠন ছাত্রলীগের সাবেক ও বর্তমান নেতাকর্মীরা। এডিসি হারুন-অর-রশিদকে বরখাস্ত ছাড়া এখন পর্যন্ত প্রায় সব দাবি পূরণ হয়েছে। ছাত্রলীগ, পুলিশ ও সরকারের একাধিক দায়িত্বশীল সূত্র বলছে, ঘটনাকে ঘিরে যাতে কোনো বিশৃঙ্খল পরিস্থিতির সৃষ্টি না হয় তা নিশ্চিত করাই ছিল মূল লক্ষ্য। এ কারণে ঘটনার পরপরই আওয়ামী লীগ ছাত্রলীগের শীর্ষ নেতৃত্বকে দায়িত্বশীল ভূমিকা পালনের নির্দেশনাও দেয়। বিক্ষুব্ধ ছাত্রলীগ নেতাকর্মীরা শাহবাগ থানার গেটে গিয়ে বিক্ষোভ শুরু করলে কেন্দ্রীয় নেতাদের হস্তক্ষেপে তা নিয়ন্ত্রণে আসে। পরদিন এডিসি হারুনকে রমনা জোন থেকে প্রত্যাহার করে পাবলিক অর্ডার ম্যানেজমেন্টে (পিওএম) সংযুক্ত করা হয়। আবার একই দিনে তাকে এপিবিএনে বদলি করা হয়। এতে তিনি আপত্তি জানালে তাকে সাময়িক বরখাস্ত করে পুলিশ সদর দফতরে সংযুক্ত করা হয়। এতে আপত্তিও করেন ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা। তিনি সর্বশেষ রংপুর রেঞ্জে সংযুক্ত ছিলেন। এতে ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা অনেকটা শান্ত হয়েছে।

এসব ঘটনা নিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে পুলিশের অন্তত তিনটি গ্রুপে আলোচনা-সমালোচনার তথ্য পেয়েছে দেশের একটি জনপ্রিয় দৈনিক। যেখানে সংশ্লিষ্ট খবরের লিঙ্ক ও বিভিন্ন মন্তব্য শেয়ার করা হয়েছে। এর পরিপ্রেক্ষিতে কেউ কেউ তাদের মতামত ব্যক্ত করেছেন। অনেকেই সম্পূর্ণ নীরব থেকেছেন। অনেক পুলিশ সদস্য নিজেদের মধ্যে মতামত প্রকাশ করছেন এবং মিডিয়াকে বার্তা দিচ্ছেন।

এ ঘটনায় কড়া প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন পুলিশের একাংশ। তাদের দাবি, এপিএস মামুন প্রথমে এডিসি হারুনের ওপর হামলা চালায়। বিষয়টি এড়িয়ে যাওয়া এবং হারুনের বিরুদ্ধে একের পর এক ‘অ্যাকশন’ নিলে পুলিশ সদস্যদের মনোবল ভেঙে পড়বে। সোশ্যাল মিডিয়ায় পুলিশ সম্পর্কে বিভিন্ন ধরনের নেতিবাচক মন্তব্য তাদের কাজের পরিবেশকে প্রভাবিত করবে। এ ছাড়া এ ঘটনায় পুলিশ সদস্যদের জড়িত থাকার কারণে অনেক রাজনৈতিক নেতা-কর্মীর পাশাপাশি অন্য কর্মীরাও বিরূপ মন্তব্য করছেন।

ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের অতিরিক্ত কমিশনার মোহাম্মদ হারুন-উর-রশিদ মঙ্গলবার বলেন, ‘এ ঘটনার সূত্রপাত যে কারণে হয়েছে, যিনি সূত্রপাত করেছেন, তিনিও (রাষ্ট্রপতির এপিএস আজিজুল হক) একজন সরকারি কর্মকর্তা। উনি আমাদের পুলিশের ওপর হামলাটি করেছেন। তিনি তো ইচ্ছা করলে আমাদের (পুলিশ) ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানাতে পারতেন, অবহিত করতে পারতেন। অথবা তার ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানাতে পারতেন। সেটি না করে হাসপাতালের ভেতরে অসংখ্য মানুষের সামনে একজন পুলিশ কর্মকর্তাকে ধাওয়া করা, তার চশমা ভেঙে ফেলা, তার ওপর আঘাত করা-এটা সঠিক করেছেন কি না, আমি জানি না। তবে এটা তদন্ত হওয়া উচিত।’

এদিকে এ বক্তব্যের বিষয়ে জানতে চাইলে ডিএমপি কমিশনার খন্দকার গোলাম ফারুক বলেন, তদন্ত কমিটির প্রতিবেদন না পাওয়া পর্যন্ত আমি কিছু বলতে পারব না। এখন হারুন (গোয়েন্দা প্রধান) বলতে পারবেন তিনি এই তথ্য কোথা থেকে পেয়েছেন।

এদিকে এডিসি হারুনের অপরাধকে পুলিশের অপরাধ হিসেবে উল্লেখ করা কখনোই সঙ্গত হতে পারে না বলে মনে করছেন পুলিশের অন্য একটি মহল। এখানে এক ক্যাডারের সঙ্গে অন্য ক্যাডারের দ্বন্দ্বের কোনো বিষয় নেই। সে অপরাধ করলে তাকে অপরাধী হিসেবে বিচার করা হবে। এ ঘটনায় ভিন্ন রঙের একটি পক্ষ মূলত এডিসি হারুনকে বাঁচানোর চেষ্টা করছে।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে ডিএমপির দুই ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা বলেন, এই অপ্রীতিকর ঘটনার বিষয়ে সরকার ও পুলিশ প্রশাসন অত্যন্ত সতর্কতার সঙ্গে কাজ করেছে। কিন্তু এ ঘটনায় এক পক্ষ এতটাই উৎসাহী যে তারা বিভিন্ন গ্রুপে এডিসি হারুনকে সাফাইয়ের চেষ্টা চালাচ্ছে।

About bisso Jit

Check Also

উপদেষ্টা পরিষদেই বৈষম্য

অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের উপদেষ্টা পরিষদে আঞ্চলিক বৈষম্যের অভিযোগ উঠেছে। ২৪ সদস্যের এই পরিষদে ১৩ জনই চট্টগ্রাম …

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *