Thursday , November 14 2024
Breaking News
Home / Countrywide / এডিসি হারুনের বিরুদ্ধে উঠল আরো বেশ কিছু গুরুতর অভিযোগ

এডিসি হারুনের বিরুদ্ধে উঠল আরো বেশ কিছু গুরুতর অভিযোগ

রাজধানীর নিউমার্কেট এলাকায় পুলিশ সদস্যদের সংঘ”র্ষ থামাতে যাওয়ার একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল হয়। সেখানে দেখা যায়, পুলিশের রমনা বিভাগের অতিরিক্ত উপ-পুলিশ কমিশনার (এডিসি) হারুন অর রশিদ এক পুলিশ কনস্টেবলকে চড় মা’রছেন। অনেকেই তার আচরণের নিন্দা করেন।

ঘটনাটি ঘটে গত বছরের ১৮ এপ্রিল রাতে। নিউমার্কেট এলাকায় ঢাকা কলেজের শিক্ষার্থীদের ওপর রাবার বুলেট ছোড়ার নির্দেশ দিচ্ছিলেন এডিসি হারুন। এ সময় তিনি ‘গুলি শেষ হয়ে গেছে’ বলায় পুলিশ কনস্টেবলকে চড় মারেন। এ নিয়ে গণমাধ্যমে খবরও প্রকাশিত হয়। এডিসি হারুনের নেতৃত্বে শাহবাগে এডিসি হারুন শুধু তার সহকর্মীদেরই মারধর করছেনন না, নিজেও আন্দোলনকারীদের লাঠি দিয়ে মারছেন এমন একটি ভিডিও ফেস”বুকে ভাইরাল হয় এবং সমালোচনার জন্ম দেয়। তবে এসব ভিডিও সোশ্যাল মিডিয়ায় বারবার ভাইরাল হলেও ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ (ডিএমপি) বা পুলিশ সদর দফতর থেকে তার বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। উল্টো তিনি দীর্ঘদিন পদে বহাল ছিলেন।

কিন্তু এবারও রক্ষা পাননি এডিসি হারুন। গত শনিবার (৯ সেপ্টেম্বর) রাজধানীর শাহবাগ থানায় ছাত্রলীগের দুই কেন্দ্রীয় নেতাকে পুলিশ নির্ম”মভাবে পি”টিয়ে আহত করেছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। আহতরা হলেন ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক ও ফজলুল হক হলের সভাপতি আনোয়ার হোসেন এবং ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় বৈজ্ঞানিক সম্পাদক ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শহীদুল্লাহ হলের সাধারণ সম্পাদক শরীফ আহমেদ।

রোববার (১০ সেপ্টেম্বর) ডিএমপি কমিশনার খন্দকার গোলাম ফারুক জানান, ছাত্রলীগের দুই কেন্দ্রীয় নেতাকে মা”রধরের ঘটনায় এডিসি হারুন অর রশিদকে প্রত্যাহার করা হয়েছে।

তিনি বলেন, এডিসি হারুনকে রমনা বিভাগ থেকে প্রত্যাহার করে পুলিশ অর্ডার ম্যানেজমেন্টে (পিওএম) সংযুক্ত করা হয়েছে।

বাংলাদেশ ছাত্রলীগের সহ-সভাপতি আল আমিন রহমান তার ভেরিফায়েড ফেসবুক স্ট্যাটাসে লিখেছেন, “আমরা বাংলাদেশ ছাত্রলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক বন্ধু আনোয়ার হোসেন নাঈমের পাশে আছি। সবাই তার সুস্থতার জন্য দোয়া করবেন। একজন সাইকোপ্যাথ ছাড়া আর কেউ এমন কাজ করতে পারে না।

আরেক সহ-সভাপতি শরিফুল আলম লিখেছেন, ছাত্রলীগ আসলেই এতিমদের সংগঠন। কাল থেকে আমাদের হাতে চুরি পরে ঘরে বসে থাকা উচিত।

কেন্দ্রীয় কমিটির উপ-দপ্তর সম্পাদক মনির হোসেন লিখেছেন, এডিসি হারুন মানসিক বিকারগ্রস্ত, তাকে স্থায়ীভাবে চাকরিচ্যুত করতে হবে।

আহত নাঈমের ছবি শেয়ার করে ছাত্রলীগের সাবেক সহ-সভাপতি ইয়াজ আল রিয়াদ লিখেছেন, আমার ছাত্রলীগের ছোট ভাই, কেন এমন হলো, কী জন্য এমন হলো জানতে চাই। এটা কি মেনে নেওয়ার মত ঘটনা!

ছাত্রলীগের সাবেক দপ্তর সম্পাদক ইন্দ্রনীল দেব শর্মা রনি লিখেছেন, আনোয়ার হোসেন নাঈম ও শরীফ আহমেদ মুনিমের বর্বরতার দ্রুত শাস্তি হওয়া উচিত। বাংলাদেশ ছাত্রলীগ বাংলাদেশের ইতিহাস ঐতিহ্যের গর্বিত অংশীদার। ইতিহাসের ধারাবাহিকতা রক্ষা করা সবার দায়িত্ব।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র সামি আবদুল্লাহ গত ৭ আগস্ট ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের জরুরি বিভাগে ব্যথায় ভুগছিলেন। তার মাথায় ১৪টি সেলাই পড়ে। জ্বালানি তেলের দাম বৃদ্ধির প্রতিবাদে শাহবাগে সমাবেশে অংশ নেন বলে জানান এই শিক্ষার্থী। ওই দিন ‘শান্তিপূর্ণ’ বিক্ষোভ কর্মসূচিতে পুলিশ লাঠিচার্জ করে। এতে তিনিসহ অন্তত ১২ জন আহত হয়েছেন।

ওইদিন ঘটনার নেতৃত্ব দেন এডিসি হারুন অর রশিদ। এডিসি হারুন সম্পর্কে এ ধরনের ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী ও ভুক্তভোগীদের মন্তব্য, ‘তিনি (এডিসি হারুন) শুধু পেটান।’

রাজধানীর রমনা জোনের এডিসি হারুন অর রশিদের নেতৃত্বে শান্তিপূর্ণ ও গণতান্ত্রিক কর্মসূচিকে ‘বিনা উস্কানিতে’ মারধর করা হয়েছে বলে প্রত্যক্ষদর্শীরা অভিযোগ করেছেন। শুধু তাই নয়, এ ধরনের একাধিক ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী ও ভুক্তভোগীরাও একই অভিযোগ করেছেন।

এডিসি হারুনের নেতৃত্বে শাহবাগে বিক্ষোভকারীদের মারধরের একটি ভিডিও, এমনকি নিজেকে লাঠি দিয়ে বিক্ষোভকারীদের মারধরের ভিডিও ফেসবুকে ভাইরাল হয়েছে, সমালোচনার জন্ম দিয়েছে।

ভিডিওতে দেখা যায়, বিক্ষোভকারীরা সমাবেশ শেষে মিছিল বের করার আগে শাহবাগ মোড়ে দাঁড়িয়ে স্লোগান দিচ্ছেন। এ সময় রমনা জোনের এডিসি হারুন অর রশিদের নির্দেশে তিনি অন্য সহযোগীদের নিয়ে আন্দোলনকারীদের মা”রধর শুরু করেন।

পেটানোর আগে তার গায়ে জ্যাকেট এবং মাথায় হেলমেট পরিয়ে দেন তার সহকর্মীরা। হেলমেট পরানোর সঙ্গে সঙ্গেই তিনি মারমুখো হয়ে উঠেন। তিনি ও তার সহকর্মীরা বিক্ষোভকারীদের অমানুষিকভাবে লাঠিপেটা করেন।

রাজধানীর ডিএমপি রমনা জোনের মধ্যে শাহবাগ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, ঢাকা মেডিকেল কলেজ, বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয় (বুয়েট)সহ বেশ কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ শিক্ষা প্রতিষ্ঠান রয়েছে। এছাড়াও দেশের আলোচিত বিভিন্ন ইস্যু ও ঘটনা নিয়ে হাইকোর্ট ও জাতীয় প্রেসক্লাবের মতো প্রতিষ্ঠানে নিয়মিত প্রতিবাদ কর্মসূচি পালন করা হয়।

শিক্ষার্থীদের অভিযোগ, এর আগে রমনা জোনের দায়িত্বে থাকা কাউকে নিয়ে এমন সমালোচনা হয়নি। তাদের অভিযোগ, এডিসি হারুন ‘আক্র”মনাত্মক’ আচরণ করেন। এডিসি হারুনের মতো কর্মকর্তা থাকলে পুলিশ বাহিনীর সুনাম ক্ষুন্ন হবে বলে মনে করছেন শিক্ষার্থীরা।

গত বছরের ৯ সেপ্টেম্বর সরকারি চাকরিতে প্রবেশের বয়সসীমা ৩৫ বছর করার দাবিতে রাজধানীর শাহবাগ মোড়ে সড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ করেন চাকরিপ্রত্যাশীদের একটি দল। অবরোধ চলে প্রায় এক ঘণ্টা। পরে পুলিশ এসে সেখান থেকে তাদের সরিয়ে দেয়। সেখান থেকে শাহবাগ থানার দিকে যাওয়ার পথে চাকরি প্রত্যাশীদের কয়েকজনকে লাঠিপেটা করে পুলিশ। এডিসি হারুনও লাঠিসোঁটা নিয়ে যুবকদের ধাওয়া করেন বলে বিক্ষোভকারীরা জানান। এডিসি হারুন ছবি তুলতে গেলে কয়েকজন সাংবাদিকের সঙ্গে দুর্ব্যবহার করেন বলেও অভিযোগ পাওয়া গেছে।

এরপর শাহবাগ মোড় থেকে আন্দোলনকারীদের জোরপূর্বক সরিয়ে দিলে পুলিশ সাংবাদিকদের সঙ্গে দুর্ব্যবহার করে এবং ছবি তোলার চেষ্টা করলে কয়েকজনকে ধাক্কা দেয় বলে সাংবাদিকদের অভিযোগ।

রোববার (১০ সেপ্টেম্বর) ডিএমপির মিডিয়া সেন্টারে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে ডিএমপির অতিরিক্ত কমিশনার ও গোয়েন্দা প্রধান মোহাম্মদ হারুন অর রশিদ বলেন, ছাত্রলীগের দুই নেতাকে থানায় নিয়ে গিয়ে বেধড়ক মারধর করা হয়েছে তা প্রমাণিত হলে। ডিএমপির অতিরিক্ত উপ-কমিশনার (এডিসি) হারুন অর রশিদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

তিনি বলেন, বিষয়টি ডিএমপি কমিশনারসহ ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ অবগত আছেন। এটা তদন্ত করা হবে। তদন্তে দোষী প্রমাণিত হলে এডিসি হারুনের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে হবে।

 

About bisso Jit

Check Also

উপদেষ্টা পরিষদেই বৈষম্য

অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের উপদেষ্টা পরিষদে আঞ্চলিক বৈষম্যের অভিযোগ উঠেছে। ২৪ সদস্যের এই পরিষদে ১৩ জনই চট্টগ্রাম …

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *