অতিরিক্ত উপ-পুলিশ কমিশনার (এডিসি) সানজিদা আফরিনকে কেন্দ্র করে এডিসি হারুন-অর রশিদ তিন ছাত্রলীগ নেতাকে মা”রধর করেন। গত শনিবার এ ঘটনা ঘটে।
ওইদিন মারধরের ঘটনার পর এডিসি হারুনকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়। পরে তাকে আবার রংপুর রেঞ্জে বদলি করা হয়। ওই দিন বারডেম হাসপাতালে সানজিদার ফোন পাওয়ার পর কী ঘটেছিল সে বিষয়ে প্রথমবারের মতো গণমাধ্যমের সঙ্গে কথা বলেন এডিসি হারুন।
এডিসি হারুন-অর-রশিদ গণমাধ্যমকে বলেন, শনিবার (৯ সেপ্টেম্বর) আমি আমার বাবা-মাকে নিয়ে চিকিৎসার জন্য বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ে (বিএসএমএমইউ) ডাক্তার পবিত্র কুমারের কাছে দেখাতে যাই।
এরপর দুপুর ২টার দিকে আমাদের এডিসি ক্রাইম-১ ফোন করে বলেন, তার চেস্ট পেইন (বুকে ব্যথা)। সে জন্য বারডেম হাসপাতালের ডাক্তার প্রফেসর রশিদ স্যারের সিরিয়াল (অ্যাপয়েন্টমেন্ট) নেওয়া যায় কিনা।
তখন আমি আমাদের রমনা থানার ওসি আবুল হাসানকে সিরিয়াল ম্যানেজ করতে বলি। আবুল হাসান সাহেব পরে আমাকে জানান যে, সন্ধ্যা ৬টায় একটি সিরিয়াল দেওয়া হয়েছে। আমি সেটা এডিসি ক্রাইম-১-কে জানাই। উনি সন্ধ্যা ৬টায় ওখানে চলে যান।’
এডিসি হারুনের ভাষ্য অনুযায়ী, পরবর্তীতে প্রফেসর ড. আবদুর রশীদ স্যার বারডেম সম্মেলন বা প্রশাসনিক কাজে ব্যস্ত থাকায় তাকে সময় দিতে পারেননি। কিন্তু রোগী (এডিসি সানজিদা) সেখানে গিয়ে অসুস্থ বোধ করেন।
এরপর সানজিদা আমাকে বললেন, স্যার, এখানে ডাক্তার সম্ভবত ব্যস্ত, তিনি আজকে সময় দিতে পারবেন না। কিন্তু আমি সিক ফিল (অসুস্থ বোধ) করছি। তখন আমি বললাম, আমি কাছেই আছি, দেখি কথা বলি ডাক্তারের সঙ্গে। আমি সেখানে যাই। ডাক্তারের সঙ্গে কথা বলার পর ডাক্তার দেখেন।
হারুন বলেন, এরপর চিকিৎসকরা এডিসি সানজিদার তিনটি পরীক্ষা করেন। ইসিজি, ইকো এবং ইটিটি। রোগী যখন ইটিটি রুমের ভিতরে ছিল, আমি বাইরে ছিলাম যেখানে ভিজিটরেরা অপেক্ষা করছিলেন।
তখন আজিজুল হক মামুন (এডিসি সানজিদার স্বামী) এবং তার সঙ্গে আরও চার-পাঁচজন আসেন। তিনি পেশেন্টের রুমে যান, পেশেন্ট দেখেন। দেখে বাইরে এসে কোনো কথাবার্তা ছাড়াই আমার বাম চোখের ওপরে একটা ঘুষি মারেন।
আমি খুব অপ্রস্তুত ছিলাম. আমি তাকে জিজ্ঞেস করলাম, ভাই আপনি আমাকে মারলেন কেন? আপনি আমাকে স্পর্শ করতে পারেন না। তখন তার সাথে থাকা অন্যান্য ছাত্ররাও আমার উপরে চড়াও হয়। তারা আমাকে জোর করে ইটিটি রুমের ভিতরে টেনে নিয়ে যায়। সেখানে পেশেন্টের সঙ্গে কথা হয়। তারা ওখানেও আমাকে মারধর করেন। পরে আমি আত্মরক্ষার্থে শাহবাগ থানাপুলিশকে কল করি। শাহবাগ থানাপুলিশ এসে সবাইকে থানায় নিয়ে যায়।
এদিকে ঘটনার দিন সানজিদা আফরিন গণমাধ্যমকে বলেন, আমার হৃদযন্ত্রের কিছু সমস্যা বোধ করছিলাম। চার-পাঁচ মাস বুকের ব্যথা বেড়েছে। আমি ল্যাবএইডে যে ডাক্তারের অধীনে চিকিৎসা নিচ্ছিলাম সে দেশের বাইরে ছিল।
আমার জরুরি চিকিৎসার প্রয়োজন হওয়ায় গত শনিবার ইব্রাহীম কার্ডিয়াকে যাই। স্যার (এডিসি হারুন) রমনা থানার ওসিকে দিয়ে একজন চিকিৎসকের অ্যাপয়েন্টমেন্ট করিয়ে দেন। আমার একজন কার্ডিয়াক চিকিৎসকের দরকার ছিল, তাই আমি অফিস থেকে বের হয়ে সন্ধ্যা সাড়ে ৬টার দিকে সেখানে যাই।
সানজিদা বলেন, তবে ওই সময় একটি কনফারেন্সে ছিলেন চিকিৎসক। এরপর বিষয়টি স্যারকে (এডিসি হারুন) জানাই। তিনি হাসপাতালের আশেপাশে ছিলেন। কিছুক্ষণ পর স্যার এলেন। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের সঙ্গে কথা হয়। তিনি চিকিৎসক ম্যানেজ করেন। এর পর আমি চিকিৎসক দেখিয়ে বেশ কিছু টেস্ট করাই।
ঘটনার সময় ইটিটি করা সানজিদা আফরিন বলেন, “ইটিটি করতে অনেক সময় লাগে। ২০/২৫ মিনিটের মতো। ইটিটি যখন শেষ পর্যায়ে ছিল তখন আমি হট্টগোল শুনতে পাই।
এ সময় এডিসি স্যারকে বলতে শুনলাম- ভাই, আমার গায়ে হাত তোলেন কেন? আপনি তো আমার গায়ে হাত তুলতে পারেন না। আমি ভাবছিলাম অন্য কারও ঝামেলা। পরে আমি এসে দেখি আমার হাজব্যান্ড। ওনাকে আউট অব মাইন্ড লাগছিল। তাকে উত্তেজিত লাগছিল। তার সঙ্গে আরও কয়েকজন ছিলেন।
তাদের হাত থেকে বাঁচতে স্যার ইটিটি রুমের এক কোণে চলে যান। আমার স্বামী তখন ওই ছেলেদের বললেন, এই দুজনের একটা ভিডিও কর। আমি তখন ইটিটির পোশাকে ছিলাম। সেই কক্ষে কোনো ছেলে প্রবেশের কথা না। আমি এ বিষয়টি নিয়ে স্বামীর সঙ্গে শাউট (উচ্চ স্বরে কথা) করি। তখন আমার স্বামী আমাকে দুটি চড় দেয়।
এ সময় আমার ড্রাইভার মাঝখানে দাঁড়াল। আমি তখন অন্য একজন ছেলেকে ভিডিও করতে দেখেছি, তাই আমি তার কাছ থেকে ক্যামেরা নেওয়ার চেষ্টা করি। তখন তার সাথে আমার বিবাদ হয়।
সানজিদা বলেন, আমার স্বামী আমার গায়ে হাত তুলেছেন। এরপর তারা এডিসি স্যারকে টেনেহিঁচড়ে কক্ষ থেকে বের করার চেষ্টা করে। এডিসি স্যার তখন বলতে থাকেন- এখান থেকে আমাকে বের করলে তো মেরে ফেলবেন। এর পর এডিসি স্যার ফোর্সকে খবর দেন।
এর মধ্যে হাসপাতালের নিরাপত্তাকর্মীরাও আসেন। ফোর্স না আসা পর্যন্ত এডিসি হারুন ইটিটি রুমেই ছিলেন। ১০-১৫ মিনিট পরে ফোর্স আসে। এরপর এডিসি হারুন চলে যান। তারা আমার দেহরক্ষীর গায়েও হাত তুলেছে।