বর্তমান সময়ে শোবিজ অঙ্গনের জনপ্রিয় অভিনেতা আফরান নিশো। তিনি তার কাজের মধ্যে দিয়ে দর্শক মন জয় করতে সক্ষম হয়েছেন। এবং জনপ্রিয়তার শীর্ষ স্থানে রয়েছেন তিনি। বর্তমানে তিনি নাটকের পাশাপাশি অনলাইন প্লাটফার্মেও কাজ করছেন। সম্প্রতি তার কাজ এবং চলমান ব্যস্ততা নিয়ে বেশ কিছু কথোপকথন হলো তার সঙ্গে।
কাজের পরিধি বাড়িয়েছেন আফরান নিশো। এখন আর শুধু নাটকই করছেন না, ওটিটিতেও তাঁর আগ্রহ বেড়েছে। পাশাপাশি নানান ধরনের ইভেন্টেও অংশ নিচ্ছেন এই তারকা। নতুন কাজের খবরও দিয়েছেন তিনি।
নাটকে কাজ কম করছেন নাকি?
ক/রো//নার ভ/য়া/বহ বিস্তারের সময় থেকে কাজ কম করছি। গেল বছর ঈদুল ফিতরে একটা কাজও করিনি। ঈদুল আজহায় ১০টি কাজ করেছিলাম। এরপর থেকে মাসে তিন–চারটি কাজ করি। আগে মাসে প্রায় ২৫ দিন শুটিং করতাম। এখন মাসে ১০ থেকে ১২ দিন কাজ করি। এই ফাঁকে ওটিটিতে কাজের একটা আবহ তৈরি হয়েছে।
ওটিটির প্রতি তাহলে আগ্রহ বাড়ছে?
একজন অভিনেতার জন্য সেটা তো হতেই পারে। কারণ, ওটিটি বড় প্ল্যাটফর্ম। এখানে কাজের সুবিধা আছে। ধরুন, ৫ লাখ টাকা বাজেটের একটি কাজে একজন পরিচালক যা দেখাতে পারবেন, ৫০ লাখ টাকা বাজেটে তার চেয়ে ভালো কিছু দেখাতে পারেন। তা ছাড়া ওটিটির কাজে আয়োজনটাও বড়। এখানে অভিনয় দেখানোর জায়গা আছে। একইভাবে আর্থিক সচ্ছলতার সুযোগ থাকছে। সব মিলে একজন অভিনেতা তো সেই সুযোগ নেবেনই।
অনেক পরিচালকেরই অভিযোগ, আপনি ফোন ধরেন না।
এটি হতেই পারে, হওয়ারই তো কথা। সবার ফোন ধরতে হবেই বা কেন। সব শিল্পী সব পরিচালকের ফোন ধরবেন না, এটাই স্বাভাবিক। আমি যদি বলি, সব শিল্পীর ফোন কি সব পরিচালক ধরেন? এমনও তো শুনি, অনেক নতুন শিল্পী আছেন, ভালো কাজের প্রত্যাশায় যাঁরা নিয়মিতই বড় পরিচালকদের ফোন দেন, তাঁরাও তো ফোন ধরেন না। আমার ক্ষেত্রে কী হয়, অনেক চিত্রনাট্য আসে, পছন্দ না হওয়ায় সব কাজ করি না। যাঁদের কাজ করছি না, তাঁদের জানানোর পরও ফোন দেন। এখন যদি ফোন ধরেই সমাধান হতো তাহলে ধরা যেত, কিন্তু না, তাঁরা শুনতে চান না। আমি যদি সারা দিন এ ধরনের ফোনই ধরতে থাকি, কথা বলতে থাকি, তাহলে আমি কাজ করব কখন?
কদিন আগে আপনার এক সহশিল্পী বলেছেন, বছরে দু-তিনটি ভালো কাজ ভাগ্যে জোটে। আপনার বেলায়ও কি তাই?
ওই সহশিল্পীর সঙ্গে আমি একমত নই। কাজ বন্ধ রাখার ব্যাপারটা তাঁর পলিসিগত কারণ হতে পারে অথবা তাঁর হাতে হয়তো সে ধরনের গল্প বেশি আসছে না। কিন্তু আমার কাছে তো ভালো গল্পের অভাব মনে হচ্ছে না। আমাদের ইন্ডাস্ট্রিতে সব সময়ই কিন্তু প্যারালাল গল্পের ব্যাপারটি ছিল, আছে। তা ছাড়া পৃথিবীতে গল্পের পরিমাণ কিন্তু বেশি নয়। যা আছে, তার শাখা–প্রশাখা নিয়ে কাজ হচ্ছে। তার মধ্য থেকে ভালো–মন্দ বেছে নিয়ে কাজ করতে হবে। আমার কাছে মনে হয়, এখন দুর্দান্ত সব গল্পের কাজ হচ্ছে। কারিগরি দিকটাও আগের চেয়ে উন্নত। এখনকার সব তরুণ পরিচালক মেধাবী, তাঁরা ভালো কাজ করতে চান, করছেনও। এ সময় কাজ কম করার ব্যাপারটা একান্তই আমার নিজের। হতে পারে, এটি আমার নিজের শারীরিক সমস্যা বা আমি অন্য কোনো কাজে নিজেকে ব্যস্ত রাখতে নাটকের কাজ কম করছি। তাই বলে গল্প, কাজের মানের কারণে কাজ কম করছি, ব্যাপারটা তা নয়।
ইদানীং আপনাকে স্টেজ শোসহ নানা ধরনের ইভেন্টে অংশ নিতে দেখা যাচ্ছে। কিন্তু আগে দেখা যায়নি…
সামগ্রিকভাবে আমি নাটকের মানুষ। এর বাইরে আমি আগে কিছুই করতাম না। শুধুই নাটকের কাজ আমার কাছে এখন একধরনের চাপ মনে হয়। দেশজুড়ে আমার হাজার হাজার ভক্ত-শুভাকাঙ্ক্ষী ছড়িয়ে–ছিটিয়ে আছে। তাঁদের প্রতি আমার দায়িত্বও আছে। কদিন আগে কুমিল্লায় একটি শোরুমের উদ্বোধনীতে গিয়েছিলাম। সেখানে ভক্তদের ভালোবাসায় আমি আপ্লুত হয়েছি। ইচ্ছা হয় দেশের ৬৪টি জেলাতেই সশরীর যেতে। শুটিংয়ে গেলে ভক্তদের সঙ্গে কথা বলার সময় হয় না। অন্য কোনো কাজে গেলে ভক্ত-শুভাকাঙ্ক্ষীদের সঙ্গে সরাসরি কথা বলার সুযোগ পাওয়া যায়। এটি কিন্তু আবেগেরও একটা জায়গা। এটি শিল্পী ও ভক্তের মেলবন্ধন তৈরি করে। এ কারণে এখন এ ধরনের কাজ করছি। ভক্তদের কাছাকাছি যাচ্ছি।
আপনি নাকি সিন্ডিকেট করে মেহ্জাবীনকে সহশিল্পী নিয়ে কাজ বেশি করেন। সত্যি নাকি?
না, এটি সত্য নয়। আমি কাউকে বেছে নিয়ে কাজ করি না। গল্পের চাহিদা থেকে আমার কাছে যখন কোনো কাজ আসে, তখন প্রযোজক–পরিচালক দেখেন শিল্পীর জনপ্রিয়তা, অভিনয়ের দক্ষতা, যে দুজনকে নিয়ে কাজ হবে, তাঁদের মধ্যে বোঝাপড়া, তাঁদের প্রতি দর্শকের চাহিদা কেমন। এসব দেখেই নাটকের পুরো টিম শিল্পী নির্ধারণ করে। কারণ, এর সঙ্গে বাণিজ্য জড়িত। প্রযোজক কাজ করেন বাণিজ্য করার জন্য। বাণিজ্য যাঁদের দিয়ে হবে, তাঁদের নিয়েই কাজ করবেন। সেটা মেহ্জাবীন, তানজিন তিশা যে কেউ হতে পারে। সে ক্ষেত্রে হয়তো প্রযোজক ও পরিচালক ভাবেন, আমার আর মেহজাবীনকে দিয়ে বাণিজ্য হচ্ছে। তা ছাড়া দীর্ঘদিন ধরে আমাদের দুজনের একসঙ্গে কাজ পছন্দও করছেন দর্শক। সত্যি কথা কী, কার সঙ্গে কার কাজ হবে, না হবে, সেটা এখানকার পরিবেশই ঠিক করে দেয়।
প্রায় দুই বছর ধরে বলে আসছেন, সিনেমার জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছেন, প্রস্তুতি কি আর শেষ হবে না?
কোভিডের কারণে সব পরিকল্পনা এলোমেলো হয়ে গেছে। যেসব কাজ নিয়ে আলাপ–আলোচনা চলছিল, পিছিয়ে গেছে। এক–দুইটা কাজ ব্যাটে–বলে মেলেনি, ছেড়ে দিয়েছি। তবে ওটিটির জন্য ওয়েব ফিল্ম করতে যাচ্ছি। এ মাসেই শুটিং শুরু হবে। পরে বিস্তারিত বলতে পারব। ফিল্ম তো ফিল্মই। হোক সেটা বড় পর্দায় বা ছোট পর্দায়। তা ছাড়া ওটিটির জন্য এসব ফিল্ম প্রেক্ষাগৃহে মুক্তির আদলেই তৈরি হচ্ছে।
কেউ কেউ দেশের বাইরের ওটিটি প্ল্যাটফর্মের জন্যও কাজ করছেন। আপনার কাছে সে ধরনের প্রস্তাব আসেনি?
এসেছে। দেশের বাইরে একটি বড় ওটিটি প্ল্যাটফর্মের জন্য ওয়েব ফিল্মের কাজের প্রস্তাব এসেছে। গল্প পেয়েছি। আলাপ–আলোচনা চলছে। সবকিছু ঠিকঠাক না হলে বিস্তারিত বলা ঠিক হবে না। এতটুকু বলি, ফিল্মটি এর আগে ওয়েব সিরিজ আকারে দেশের বাইরের আরেকটি নামকরা প্ল্যাটফর্মে প্রচারিত হয়েছে। সেটিই এখন ফিল্ম আকারে হবে। সেখানে বলিউডের বড় মাপের দুই তারকাও আছেন। গল্পে বাংলাদেশের একটা অংশ আছে। সেখানে কাজের ব্যাপারে আমাকে প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে। বাংলাদেশের কেউ এখনো ওই ওটিটির জন্য কাজ করেননি।
দেশের অনেক অভিনেতা-অভিনেত্রী বর্তমান সময়ে অনলাইন প্লাটফার্মেও কাজ করছেন। এদের মধ্যে অন্যতম একজন আফরান নিশো। তার অভিনীত উল্লেখযোগ্যে দর্শক নন্দিত জনপ্রিয় বেশ কয়েকটি নাটক রয়েছে। ইতিমধ্যে তিনি একটি সিনেমায় অভিনয় করেছেন। এবং বর্তমান সময়ে নতুন সিনেমায় কাজ নিয়ে ব্যস্ত সময় পার করছেন। দেশ জুড়ে এই অভিনেতার অসংখ্য ভক্ত-অনুরাগী এবং জনপ্রিয়তা রয়েছে।