“সত্যি বলতে, আমাদের ইভিএমগুলি ভারতে চালু থাকা ইভিএমগুলির চেয়ে অনেক ভাল। কিন্তু সমস্যা হল যখন নতুন কিছু শুরু করেন, তখন বেশিরভাগ মানুষই মনে করেন এতে নিশ্চয়ই কিছু ভুল আছে!(তারা ভাবে) এটা যেন একটা ‘ম্যাজিক মেশিন’, এখানে ভোট দিলে ওখানে গিয়ে ভোট পড়বে!
বক্তা হলেন বাংলাদেশের প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কাজী হাবিবুল আউয়াল।
বাংলাদেশের দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের প্রাক্কালে একটি ভারতীয় সংবাদ সংস্থাকে দেওয়া তার বক্তব্য ইতিমধ্যেই প্রতিবেশী দেশের সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ও মূলধারার গণমাধ্যমে দ্রুত ছড়িয়ে পড়েছে।
তা ছাড়া ভারতের নির্বাচনে ইভিএম ব্যবহার করা উচিত কি না, এই রাজনৈতিক বিতর্কও শুরু হয়েছে নতুন করে।
প্রকৃতপক্ষে, ভারতের ক্ষমতাসীন বিজেপির বিরুদ্ধে সম্প্রতি ‘ভারত’ নামে একটি জোট গঠন করা প্রধান বিরোধী দলগুলির দ্বারা নির্বাচনে ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিন বা ইভিএম ব্যবহার নিয়ে বেশ কিছু আপত্তি উত্থাপিত হয়েছে। ইন্ডিয়া অ্যালায়েন্সের পক্ষে কংগ্রেস নেতা এবং দলের প্রধান মুখপাত্র জয়রাম রমেশ ভারতের নির্বাচন কমিশনকে একটি অফিসিয়াল চিঠি লিখেছেন – ইভিএম নিয়ে তাদের আপত্তি ঠিক কোথায়।
একই সময়ে বাংলাদেশে সংসদ নির্বাচনও অনুষ্ঠিত হয়- যেখানে সে দেশের নির্বাচন কমিশন ইভিএম চালুর জন্য অনেক চেষ্টা করেও সফল হয়নি। বাংলাদেশের প্রধান রাজনৈতিক দলগুলো ইভিএম ব্যবহারের বিষয়ে একমত হতে পারেনি। ফলে বাংলাদেশ এবারের নির্বাচনেও ব্যালট পেপারের পুরনো পদ্ধতির আশ্রয় নিয়েছে।
আসলে, রোববার (৭ জানুয়ারি) সকালে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাও নিয়ম অনুযায়ী ব্যালট পেপারে স্ট্যাম্প লাগিয়ে ভোট দেন। তিনি সেই ব্যালট পেপারটি ব্যালট বাক্সে ভরে দিচ্ছেন – ভারতের কংগ্রেস নেতারাও সেই ভিডিও পোস্ট করে ব্যালট বাক্স ব্যবস্থা ফিরিয়ে আনার দাবি জানিয়েছেন।
রাজস্থানের কংগ্রেস নেতা সুরেন্দ্র চৌধুরী ‘এক্স’ হ্যান্ডেলে (আগের টুইটার) শেখ হাসিনার ভোটের ছবি পোস্ট করে লিখেছেন- ‘আহা! ভারতেও যদি ইভিএম ব্যবহার না করে বাংলাদেশের মতো ব্যালট পেপারে ভোট দেওয়া হতো, তাহলে হয়তো দেশের পরিস্থিতি ও ভোটের ফলাফল অন্যরকম হতো!
ফলে ভারতে যেহেতু এই মুহূর্তে ইভিএম নিয়ে বিতর্ক চলছে, তাই সে প্রেক্ষাপটে ইভিএম নিয়ে বাংলাদেশের সিইসির মন্তব্যও এদেশে বিশেষ গুরুত্ব পাচ্ছে। কিন্তু এ বিষয়ে তিনি ঠিক কী বললেন?
ভারতীয় বার্তা সংস্থা এএনআই নির্বাচনের ঠিক আগে (৬ জানুয়ারি) বিকেলে ঢাকায় সিইসিকে জিজ্ঞেস করেছিল, এবার সম্ভব না হলেও ভবিষ্যতে ইভিএম চালু করার কোনো উদ্যোগ বাংলাদেশ সরকার বা নির্বাচন কমিশন নেবে কি না।
জবাবে প্রধান নির্বাচন কমিশনার কাজী হাবিবুল আউয়াল বলেন, ‘আমরা ইতিমধ্যে ইভিএম চালু করেছি। আমাদের মেশিনগুলোও চমৎকার। আসলে ভারতের সাথে তুলনা করলে বলতে হবে- আমাদের ইভিএমগুলো ভারতীয় ইভিএমের চেয়ে অনেক ভালো।
“কিন্তু সমস্যা হল, যখনই আপনি একটি নতুন জিনিস চালু করবেন, বেশিরভাগ লোক সন্দেহজনক হবে – সেখানে অবশ্যই কোনও ধরণের হেরফের হতে হবে,” তিনি বলেছিলেন। (তারা ভাববে) এটা কোন জাদুর যন্ত্র, এখানে ভোট বোধহয় সেখানে যাবে!’
বাংলাদেশের সিইসি আরও বলেন, ‘ফলে আমরা দেশের রাজনৈতিক দলগুলোকে বোঝাতে পারিনি- এটি সত্যিই একটি অনন্য (অনন্য) মেশিন, যাতে নির্বাচন প্রক্রিয়া অনেক সহজ ও মসৃণ হবে।’
হাবিবুল আউয়াল সংবাদ সংস্থা এএনআইকে বলেন, “তবে আমি আমার হৃদয়ের গভীর থেকে বিশ্বাস করি, আমাদের ইভিএম চালু করতে হবে (নির্বাচন প্রক্রিয়া শান্তিপূর্ণ করতে)। আমরা যদি ভবিষ্যতে সবাইকে বোঝাতে পারি বা ধরুন ভারত একটি ভালো ইলেকট্রনিক ভোটিং সিস্টেম আবিষ্কার করে – তাহলে অবশ্যই আমরা এখানেও তা বাস্তবায়ন করতে পারব।কারণ সেই প্রক্রিয়াটি ‘শারীরিক ভোট’ (ব্যালট ভোট) থেকে অনেক বেশি শান্তিপূর্ণ।
তিনি বলেন, আসলে আমি ভারতের বর্তমান প্রধান নির্বাচন কমিশনার (রাজীব কুমার) কে এই বিষয়ে জিজ্ঞাসা করেছি। তিনি আমার কাছে স্বীকার করেছেন যে ভারতেও ইভিএম প্রবর্তনের আগে শান্তিপূর্ণভাবে নির্বাচন প্রক্রিয়া পরিচালনা করা খুব কঠিন ছিল। ইভিএম চালুর পর পুরো প্রক্রিয়া অনেক বেশি শান্তিপূর্ণ হয়েছে, নির্বাচন অনেক বেশি বিশ্বাসযোগ্য হয়েছে- এটাই ভারতের সিইসি আমাকে বলেছেন।’
ফলে বাংলাদেশের নির্বাচনে ইভিএম চালুর পরিকল্পনা থেকে কোনো বিচ্যুতি নেই বলে সাফ জানিয়ে দিয়েছেন সিইসি কাজী হাবিবুল আউয়াল।
যাইহোক, ইভিএম নিয়ে তার মন্তব্য এবং ‘ম্যাজিক মেশিন’ এর সাথে তুলনা (যা তিনি বলেছিলেন যে দেশের বেশিরভাগ মানুষ মনে করেন) ইতিমধ্যেই বিভিন্ন ভারতীয় টিভি চ্যানেল এবং সোশ্যাল মিডিয়ায় ভাইরাল হয়েছে। আর এ নিয়ে ভারতে দিনভর চলছে বিতর্ক।