গরিব এক ভ্যান চালক সারাদিনের রোজগার দিয়ে তার সংসার চলে। তবে মানুষের সেবায় তিনি যেন সবার উর্দ্ধে। একদিন গাড়ির চাকা না ঘুরলে তার সংসার চলবে না যেনেও মানুষের জন্য রাস্তা মেরামতে নিজেই নেমে পড়েন কাজে।
জেলার পূর্বাঞ্চলের পাকা রাস্তার ইট ও ইট, বালু উঠে গেছে কয়েক বছর আগে। প্রায় দশ বছর ধরে সড়কটি চলাচলের অনুপযোগী। রাস্তা মাঝে মাঝে জরাজীর্ণ হয়ে পড়ে। জীবনের ঝুঁকি নিয়ে পথচারীরা। ঘটছে ছোট-বড় দুর্ঘটনা। বড় ধরনের দুর্ঘটনার আশঙ্কা থাকলেও নড়েনি কর্তৃপক্ষ।
অবশেষে নিজ উদ্যোগে সড়কটি মেরামত করছেন উজ্জ্বল বাবুর্চি নামের এক ভ্যানচালক। তিনি পূর্বধলা উপজেলার আগিয়া ইউনিয়নের পূর্ব বুধী গ্রামের বাসিন্দা।
গত ৬ জুন সকালে তিনি একাই ভ্যানে করে রাস্তা মেরামত শুরু করেন। শুক্রবার (১০ জুন) সকাল সাড়ে ১০টার দিকে তাকে পূর্বধলা স্টেশন রোডের বড় বড় গর্ত ইট দিয়ে ভরাট করতে দেখা যায়। ভাঙা এ সড়ক নিয়ে এলাকার দুর্ভোগের সীমা নেই। ভ্যানচালক উপজেলা পরিষদসহ বিভিন্ন স্থান থেকে পরিত্যক্ত সরকারি ইটভাটা এনে হাতুড়ি দিয়ে পিটিয়ে ভাঙা রাস্তার বড় গর্ত ভরাট করার চেষ্টা করছেন।
ভ্যানচালক উজ্জ্বল বাবুর্চি বলেন, পূর্বধলা উপজেলার মানুষের জন্য এটাই একমাত্র সড়ক। একদিকে পূর্বধলা বাজার অন্যদিকে হাসপাতাল ও উপজেলা পরিষদ ও স্টেশন বাজার। সড়কে বড় বড় গর্তের কারণে রিকশা, ভ্যান, অটোরিকশাসহ অন্যান্য যান চলাচলে অসুবিধা হচ্ছে। তারপর আবার কয়েকটি জায়গায় এটি ভাঙা এবং গর্ত দিয়ে যাওয়ার জন্য প্রায় অনুপযুক্ত।
তিনি বলেন, কিছুদিন আগে সড়কের কাজ করলেও অল্প সময়ের মধ্যেই সড়কটি ভেঙে যায়। এ সড়ক দিয়ে বিভিন্ন এলাকার যোগাযোগ। এই ভাঙা রাস্তা নিয়ে আমাদের দুর্ভোগের সীমা ছিল না। আপাতত বড় গর্ত মেরামত করে যান চলাচল স্বাভাবিক করার চেষ্টা করছি।
বেতনের বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, জনগণের দুঃখ-কষ্টের কথা চিন্তা করে তিনি এ কাজ করেছেন এবং মানুষের দোয়া কামনা করেছেন।
এ সময় পথচারী শফিকুল ইসলাম বলেন, কয়েকদিন আগে ভাঙা রাস্তাটি ইট-বালু দিয়ে গড়িয়েছে। নৌ চলাচলের উপযোগী করা হয়। কিন্তু ড্রেনেজ ব্যবস্থা না থাকায় বৃষ্টির পানি আটকে অল্প সময়ের মধ্যে সড়কটি ক্ষতিগ্রস্ত হয়। সরকারি দপ্তর মেরামত করবে এমন আশায় বসে থাকলে স্বস্তি পাবে না এলাকার মানুষ। তবে রাস্তা মেরামত করা খুবই জরুরি।
সড়ক সংস্কার দেখতে এসে মো. এমদাদুল ইসলাম বলেন, এ ভালো উদ্যোগ এলাকার মানুষের দুর্ভোগ কমানোর পাশাপাশি অন্য মানুষকেও ভালো কাজে উদ্বুদ্ধ করবে। তার কাছ থেকে জনপ্রতিনিধিদের শিক্ষা নেওয়া উচিত।
সড়ক সংস্কারে সাধুবাদ জানিয়েছেন এলজিইডি পূর্বধলা উপজেলা প্রকৌশলী মো. সাদিকুল জাহান রিদান বলেন, “স্বেচ্ছাসেবকদের কাজের কথা আমি জানতাম না। এলজিইডির রাস্তাগুলো বড় ধরনের ভাঙা ছাড়া মেরামত করা যাবে না।” পূর্বধলা সদরের রাস্তার বেহাল দশা সম্পর্কে অবগত আছি। রাস্তার জন্য প্রস্তাব পাঠানো হয়েছে, আগামী অর্থবছরে পাস হলে টেন্ডার হবে এবং কাজ শুরু হবে। সেক্ষেত্রে মেরামতের কাজ শেষ হলে মানুষের দুর্ভোগ কেটে যাবে। স্থানীয় জনগণের এভাবে এগিয়ে আসা খুবই জরুরি।
ওই ভাঙ্গা রাস্তার জন্য তিনি সহ সকল গাড়ি চালক ও পথ যাত্রিদের ভোগান্তিতে পড়তে হয়। যার জন্য তিনি অনেকের কাছে রাস্তা মেরামতের জন্য সাহায্য চেয়েছেন। একপযায়ে কারো সাড়া না পেয়ে নিজেই কাজে নেমে পড়েন। তিনি সরকারের কাছে আবেদন করেছেন যাতে ওই রাস্তাটা নতুন করে যেন সংস্করন হয়।