আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে ঘিরে রাজনৈতিক দলগুলো তাদের সংগঠনকে নতুন করে ঢেলে সাজানোর চেষ্টা চালাচ্ছে। এদিকে সাম্প্রতিক সময়ে বিএনপি থেকে জামায়াতে ইসলামী বাংলাদেশ দলটি সরে আসার ঘোষণা দিয়েছিলেন জামায়াতের আমীর। কিন্তু বিএনপি ছাড়ার পর ভিন্ন ধরনের এক মন্তব্য করে বসলেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকু। জামায়াতে ইসলামী ও আওয়ামী লীগের মধ্যে পরকীয়া চলছে বলে মন্তব্য করেন টুকু। তার বক্তব্যের নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়েছে জামায়াত ইসলামী বাংলাদেশ । তারা টুকুর বক্তব্যকে ‘ ব্যক্তিত্বহীন ও অশালীন’ বলে অভিহিত করেছেন।
মঙ্গলবার গণমাধ্যমে পাঠানো এক বিবৃতিতে দলটির সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল মাওলানা আবদুল হালিম বলেন, ‘সোমবার বিএনপির সমাবেশে জামায়াতে ইসলামীকে নিয়ে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকু শিষ্টাচার বহির্ভূত, অশালীন ও কুরুচিপূর্ণ বক্তব্য প্রদান করেছেন- সেটা দেশবাসীকে বিস্মিত করেছে। এটা কোনো রাজনীতিকের ভাষা হতে পারে না, তার বক্তব্য স্বৈরাচারী শাসনকে প্রলম্বিত করার ক্ষেত্র তৈরি করবে।
বিবৃতিতে বলা হয়, ‘এমন সময়ে যখন দেশে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা ও জনগণের সুষ্ঠু ভোটাধিকার প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে দেশের সকল গণতান্ত্রিক শক্তি ঐক্যবদ্ধভাবে একটি নির্দলীয় সরকার প্রতিষ্ঠায় বদ্ধপরিকর, তখন তার বক্তব্য জাতিকে হ’তাশ করেছে। ” তার বক্তব্য থেকে প্রতীয়মান হয় যে তিনি জনগণের ভাষা বুঝতে অক্ষম এবং তিনি জনগণের ভাষায় কথা বলতে পারেন না।’
বিবৃতিতে আব্দুল হালিম বলেন, “বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর নেতাকর্মীরা এক শতাব্দীরও বেশি সময় ধরে বর্তমান সরকারের হাতে নি’র্যা’/তিত হয়ে আসছে। যে দলটির আমীর, সেক্রেটারি জেনারেল, সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল, কেন্দ্রীয় নির্বাহী পরিষদ সদস্যসহ পাঁচজন শীর্ষস্থানীয় নেতাকে মিথ্যা মামলা দিয়ে বিচারের নামে প্রহসনের আয়োজন করে ফাঁসি দেওয়া হয়েছে; আরও ছয়জন শীর্ষ নেতাকে দণ্ড দিয়ে কারাগারে আটকে রাখা হয়েছে এবং তিনজন নেতা কারাগারে ইন্তেকাল করেছেন। ওই দল সম্পর্কে ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকুর বক্তব্য সম্পূর্ণ রাজনৈতিক শিষ্টাচার বহির্ভূত। তার বক্তৃতায় গণতান্ত্রিক আন্দোলন বাধাগ্রস্ত করার ইঙ্গিত লুকিয়ে রয়েছে।’
হালিম বলেন, ‘জামায়াতে ইসলামীর নিবন্ধন বাতিল ও অবৈধ ঘোষণার বিষয়ে তার (টুকুর) মর্মবেদনায় জনগণের মধ্যে প্রশ্ন সৃষ্টি হয়েছে, কার স্বার্থে এবং কাকে সন্তুষ্ট করতে তিনি এ বক্তব্য দিয়েছেন? আমরা স্পষ্টভাবে বলতে চাই, জামায়াতে ইসলামী কখনই কোনো আপস, গোপন ও ষড়য”ন্ত্রমূলক রাজনীতিতে বিশ্বাস করে না এবং করার কোনো প্রশ্নই আসে না।
জামায়াতের এই নেতা বলেন, “ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকু জামায়াত শব্দটিকে ‘উর্দু’ ভাষা উল্লেখ করে অজ্ঞতার পরিচয় দিয়েছেন। আমরা আশা করি সংশ্লিষ্ট সকলে ভবিষ্যতে এ ধরনের অসংলগ্ন বক্তব্য দেওয়া থেকে বিরত থাকবেন।
এর আগে সোমবার বিকেলে রাজধানীর হাজারীবাগে আয়োজিত এক প্রতিবাদ সমাবেশে ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকু বলেন, আওয়ামী লীগের মুখ থেকে প্রায়ই শুনি, যেটা বুলি হয়ে গেছে। তারা প্রায়ই বলে, বিএনপি-জামায়াত, বিএনপি-জামায়াত। আমি বলছি, এখন সময় এসেছে আওয়ামী-জামায়াত, আওয়ামী-জামায়াত বলার। জামায়াত ও উর্দু, আওয়ামী লীগ ও উর্দু দুটো একসঙ্গে মিলবে ভালো। কারণ তারা (আওয়ামী লীগ) জামায়াতের নিবন্ধন বাতিল করলেও অবৈধ ঘোষণা করেনি। তাহলে কি বলবো, তাদের মধ্যে বিবাহবহির্ভূত সম্পর্ক চলছে!’
বিএনপি নেতা টুকুর বক্তব্যের মাধ্যমে উঠে এসেছে আওয়ামী লীগ এবং জামাতের মধ্যে সম্পর্কে স্থাপনের বিষয়টি। তবে ঠিক কোন দিকটায় ইঙ্গিত করে টুকু এধরনের মন্তব্য করেছিলেন সে বিষয়ে স্পষ্ট কিছু জানা যায়নি। তবে ১৪ দলীয় জোট থেকে জামায়াতের সরে আসার বিষয়টি ঠিক ভালোভাবে নিচ্ছে না বিএনপি, এমনটাই বোঝা যাচ্ছে।