বরং আমি মনে করি মধ্যবিত্তকেন্দ্রিক নারীরাই নির্যাতনের সম্পর্ক টিকিয়ে রাখার ক্ষেত্রে বেশ আত্মমর্যাদাহীন এবং আত্মবিশ্বাসহীন হয়। মধ্যবিত্ত শ্রেণী কেন্দ্রিক যাবতীয় স্ট্যাটাস ক্যো তার মগজে চাপায় দেওয়া হয়। ওইসব ছাড়া নিজের স্বত্তাকে নিজের মতো করে ভাবার মত সাহস তারা পায়না ৷ তারা সমাজ ভাবে, সিকিউরিটি নিয়া ভাবে, নির্ভরতা ভাবে, কমফোর্ট জোন ভাবে, সম্পত্তি ভাবে! ভাইবে আর নির্যাতনের সম্পর্ক থেকে বের হইতে পারেনা। অভ্যস্ত হইতে থাকে। একটা সময়ে নিজেরে বুঝ দেয়। নিজের কাছে লাজ শরম ঢাকার জন্য, চরম অসম্মানের সহিত থাকাটাকে ‘কম্প্রোমাইজ’ বলে সুগারকোটেড করে। জীবনভর এক অসুখী জীবন নিজে কাটায়, সেই অসুখী জীবনের গ্লোরিফাইও করতে থাকে।
বছর ছয়েক আগে। এক নারী আমারে ইনবক্সে ছবি পাঠাইসিল তার মাথা ফাটিয়ে দিয়েছিল তার তৎকালীন প্রেমিক থেকে হয়ে উঠা জামাই। এর আগে বার দুয়েক এইসব নির্যাতনের ঘটনায়, বন্ধুত্বের জায়গা থেকে কাউন্সেলিং এবং সমঝোতার দায়িত্ব নিছিলাম। এখন মনে হলে ভাবি ক্যান এই পাপ করসিলাম? তো তৃতীয়বার ওই বেদম পিটানি খাওয়ার পরে, আমার অতি প্রতিবাদী স্বত্তা তাকে জানাইলো, “এই ঘর কইরোনা। সাহস করে বাইর হও।” ওই মাথা ফাটায় অবস্থায় সেই নারী আমাকে মেসেজ দিলো, “হ্যারে প্রভা! ও তো আমারে রাতে এই মাথাতে চিরুনি দিয়ে চুলটা আঁচড়ে দেয়!”
নারীর জীবনের বাস্তবতা আমাদের জানা, এই পিতৃতান্ত্রিক ব্যবস্থা আমাদের জানা, নারীর vulnerability শব্দটা আমাদের কাছে অতি পরিচিত। সেই সব জানাগুলোকে এক করেই আমি বুঝি, নারীর এই দাসত্ব তার ঐতিহাসিক বঞ্চনা থেকে আগত হতে হতে তা মনস্তাত্ত্বিক হয়ে গেছে। নারীর এই দাসত্ব তার মগজে, তার বিশ্বাসে। এই দাসত্বের মনস্তত্ত্ব থেকে সে বের হওয়ার কথা তাই ভাবতেই পারেনা।
যেই পর্যবেক্ষণ দিয়ে শুরু করেছিলাম। এই দাসত্বের সংকট মধ্যবিত্ত শ্রেণীর নারীদের মধ্যেই বেশি! হয়ত এই শ্রেণীকে আমি কাছ থেকে দেখেছি বলে আমার এরকম মনে হতে পারে।
তবে এইটা তো সত্য, মধ্যবিত্ত শ্রেণীর নারীদের মতো করে শ্রমিক ও মেহনতি শ্রেণীর নারীদের অযাচিত স্ট্যাটাস কো মেইনটেইন তো করতে হয়না। এই সমাজে তারা শ্রেণী শোষণের পাশাপাশি লৈংগিক নিপীড়নের শিকার হয় বহুমাত্রায়। কর্মক্ষেত্রে, পরিবারে, রাস্তাঘাটে। কিন্তু সিকিউরিটি, কমফোর্ট জোন এর বিকল্প নেই বলেই নির্যাতক সংগীকে মেনে নেওয়ার ঘটনা খুব কম! তারা ঝগড়া করে, নির্যাতক সংগীরে খিস্তি করে, এক জামাই না পোষালে অন্য জামাই গ্রহণ করে। আরো বড় ব্যাপার, যৌনতার নৈতিকতার যে স্ট্যান্ডার্ড জারি রয়েছে এই ব্যবস্থায়, মধ্যবিত্ত শ্রেণীর নারীরা তাতে আটকে থাকে, ঘুরপাক খায়! এই প্রবণতা শ্রমজীবি নারীর মধ্যে নাই।
যৌনতার দাসত্বের পাশাপাশি এসকল অর্থনৈতিক ও সমাজ নির্মিত আবেগীয় নির্ভরতা, সিকিউরিটির নিশ্চয়তা, কমফোর্ট জোন, সম্পত্তি ইত্যাদির প্রতি আকাংক্ষা মধ্যবিত্ত শ্রেনীর নারীরে আরো দশগুণ বেশি শৃংখলে আটকায়। শ্রমিক শ্রেণীর নারীদের ওইসকল সিকিউরিটির নিশ্চয়তা, সম্পত্তি, আরামের বালাই যেহেতু নাই, তাই আকাংক্ষাও নাই। তাই নির্যাতক সংগীর সাথে আরো অন্যকিছু ‘ট্রেড’ এর বিনিময়ে থাকার প্রয়োজনও তাগো নাই।
মধ্যবিত্ত নারী ওই যাবতীয় ট্রেডের ফান্দেই আটকা থাকে জীবনভর।
Check Also
যে কারণে সেনাবাহিনীকে প্রস্তুতি নিতে বললেন সাংবাদিক ইলিয়াস
বিশিষ্ট সাংবাদিক ইলিয়াস হোসেন তার সাম্প্রতিক এক মন্তব্যে সেনাবাহিনীকে প্রস্তুত থাকার আহ্বান জানিয়েছেন। বুধবার (২০ …