সম্প্রতি ডাক্তাদের কমিশন বিজনেজ কাছে অসহায় হয়ে পড়ছে সাধারন মানুষ। কোনো ভাবেই যেন লাগাম টানা যাচ্ছে তাদের। আর এর সাথে জড়িত আছে এক প্র্রভাবশালী মহল যার কারনে তাদের বিরুদ্ধে করার থাকে না। সরকার এ ব্যাপারে কোনো ধরনের ব্যবস্থা নেয় না নীরব ভূমিকা পালন করে। অথচ টেস্টে নামে রোগীকে সর্বশান্ত করে দিচ্ছে ডাক্তাররা। দেশের দারিদ্র মানুষের বিরাট একটা অংশ অসহায় হয়ে পড়ছে চিকিৎসা নিতে এসে। এ বিষয় নিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে একটি স্ট্যাটাস দিয়েছেন পিনাকী ভট্টাচার্য পাঠকদের জন্য হুবাহু সেটি নিচে তুলে ধরা হলো।
বাংলাদেশের প্রাইভেট ডায়াগনস্টিক সেন্টারগুলো ডাক্তারদের কমিশন দেয়। একেক টেস্টে একেক রেটে এই কমিশনের পরিমাণ টেস্টের দামের ৩০%-৬০% পর্যন্ত হয়।
প্রথম প্রথম ডাক্তারেরা এসব নিতে চাইতেন না। তখন ডায়াগনস্টিক সেন্টারের সেলস রিপ্রেজেনটেটিভ বলতো, স্যার আপনি এই এমাউন্টটা ডিস্কাউন্ট লিখে দিয়েন। আমরা ওই এমাউন্টটা রোগীকে দেবো। দিতোও তারা। তারপরে একদিন কাচুমাচু করে এসে বলতো, স্যার খুবই মুশকিল হয়ে গেছে। অন্য রোগীরা এতো ডিস্কাউন্ট দেখে চড়াও হচ্ছে আমাদের কাউন্টারে আমাদের ম্যানেজ করা মুশকিল হয়ে যাচ্ছে। ততদিনে কিছু কিছু ডাক্তার সাহেবও বৈষয়িক হয়ে উঠেছেন। হাত পেতে উনি খামটা নেয়া শুরু করলেন।
সব ডাক্তার যে এটা করে তা নয় বিরল কিছু ক্ষেত্রে ডাক্তারেরা এটা নেন না, তা ধরেন ১০-২০%। এখন প্রশ্ন করতে পারেন আপনি কেমনে জানলেন। এইটা জিগাইয়েন না তাইলে অনেককে শত্রু বানাইতে হবে। এমনিতেই আমার শত্রুর সংখ্যা গুণে শেষ করা যাবেনা। তারা সংখ্যায় কম হলেও প্রবল শক্তিশালী কারণ তারা এই সমাজের শিক্ষিত, এলিট, স্যেকুলার, পোগতিশিল, সুশীল অংশ।
এখন প্রশ্ন হইতেছে, এই কামটা ডাক্তারেরা কেমনে করে? ডায়াগনস্টিক সেন্টারে টেস্টে পাঠাইলেই যদি টেকা পাওয়া যায় তাইলে তো কারণে অকারণে সে টেস্ট করাইবে। যা দরকার আছে সেইটাও করাইবে যার দরকার নাই সেইটাও করাইবে। অসুবিধা কী? পাব্লিকের টেকা খালাস হলে ডাক্তারের কী যায় আসে? তো ডাক্তারি করতে আসছিলেন কেন ভাইজান? অফুরন্ত টেকা কামানো তো ডাক্তারের লক্ষ্য হইতে পারেনা। আপনি দরবেশ বাবা হইতেন, শাহ আলম হইতেন, ইয়াবা বদি হইতেন। আরো বেশী টেকা কামাইতে পারতেন।
টেকাটা ডাক্তার পায় ক্যাশে।।মজাই মজা, ইনকাম ট্যাক্সের বাইরে থাকে এই টেকা। টেকাটা ডিস্ট্রিবিউট করে ডায়াগনস্টিক সেন্টারের সেলসের লোক। তার এলাকার সব ডাক্তারের নামেই কমিশনটা নিয়া নেয় হাতে। যে কমিশন নেয় তারটা তো নেয়ই, যে নেয়না তারটাও নেয়। তারপরে ডায়াগনস্টিক সেন্টারের মেট্রিক ফেইল সেলস অফিসার ঢাকায় বাড়ি কিনে, গাড়ি কিনে।
এইটা তো গেলো ডায়াগনস্টিক সেন্টার আরো কতো কী আছে? আছে ওষুধ লেখানোর কমিশন, হাসপাতালের বেডের কমিশন, আই সি ইউ বেডের ভাড়ার কমিশন, পেস মেকার লাগানোর কমিশন।
বাংলাদেশের সবচেয়ে সফল বিজনেস মডেল হচ্ছে “লোভ”। এইটা জাগায়ে তুলতে পারাটাই বাংলাদেশের বিজনেস লীডারদের কাজ।
এই ডায়াগনস্টিক সেন্টারের কমিশনের মডেল কই থিকা আসছে জানেন? আসছে কোলকাতা থিকা। সেইখান থিকা শুধু অসাম্প্রদায়িকতা, জমিদারি, রবীন্দ্রনাথ, স্যেকুলারিজম আর আধুনিকতাই আসে নাই এই বিজনেস মডেলও আসছে।
এখন এইটার সলিউশন কী? আমি আমার পাঠকদের বলি, ঢাকায় থাকলে প্রাইভেট ডায়াগনস্টিক সেন্টারে যাবেন না। যাবেন আইসিডিডিআরবি, বারডেম, আর্মি প্যাথোলজি, বি এস এম এম ইউ য়ে। খর্চা কম, মানে ভালো রিপোর্ট পাইবেন। আমি যখন দেশে ছিলাম তখন প্রাইভেটে আরেকটা সেন্টার কমিশন দিতো না, ইবনে সিনা, এখন কী অবস্থা জানিনা। আর্মি প্যাথোলজি যদি ঢাকায় বিশটা কালেকশন সেন্টার করতে পারতো তাইলে এই ডায়াগনস্টিকের কমিশন বানিজ্যের মাজা ভাইঙ্গা দেয়া যাইতো।
তবে আমার পাঠক দর্শকেরা যদি কমিশন ওয়ালাদের কাছে না যায় একটা বড় ঝাকি দেয়া যাবে। যাবে কিনা বলেন?
প্রসঙ্গত, দেশের মানুষকে জিম্মী করে এ পেশার মানুষ গুলো টাকার পাহাড় গড়চ্ছে অথচ সবাই চুপ প্রতিবাদ করার যেন কেউ নেই মন্তব্য করেন পিনাকী ভট্টাচার্য। দেশের মানুষের কাছে থেকে কারনে অকারনে এভাবে টাকা হাতিয়ে নিয়ে যাচ্ছে অথচ তারা মহান পেশায় আছেন বলে দাবি করেন।