নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জ উপজেলার রূপসীতে গাজী গ্রুপের টায়ার তৈরির কারখানায় দুর্বৃত্তদের অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় অন্তত ১৭৪ জন নিখোঁজ রয়েছেন বলে দাবি করেছেন পরিবারের সদস্যরা।
ফায়ার সার্ভিস অ্যান্ড সিভিল ডিফেন্সের (ঢাকা) পরিচালক লেফটেন্যান্ট কর্নেল রেজাউল করিম জানান, সোমবার (২৬ আগস্ট) বিকেল ৩টা পর্যন্ত ১৭৪ জনকে নিখোঁজ তালিকাভুক্ত করা হয়েছে।
তিনি বলেন, যে স্বজনরা তাদের পরিবারের সদস্যরা নিখোঁজ বলে দাবি করছেন, তারা গত রাতে লুটপাটের সময় কারখানায় আসেন। আমরা তাদের একটি খসড়া তালিকা তৈরি করেছি। এই মুহুর্তে এটি যাচাই করার কোন উপায় নেই। যারা দাবি করছেন তাদের নাম ঠিকানা লিখে রাখছি।
বিকেল ৩টা পর্যন্ত এই তালিকায় ১৭৪ জনের নাম লেখা হয়েছে বলে জানান তিনি। তবে তারা কেউ কারখানার শ্রমিক নয় বলেও উল্লেখ করেন তিনি।
এদিকে ১৬ ঘণ্টার বেশি সময় পেরিয়ে গেলেও গাজীর টায়ার কারখানায় আগুন নিয়ন্ত্রণে আসেনি। সোমবার (২৬ আগস্ট) দুপুর পর্যন্ত নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জ উপজেলার রূপসী খাদুন এলাকায় ফায়ার সার্ভিসের ১২টি ইউনিট আগুন নেভানোর চেষ্টা করছে।
গত ২৫ আগস্ট রাত ১০টায় গাজী টায়ার কারখানার ছয়তলা ভবনের নিচতলায় আগুন লাগে। এরপর থেকে শত শত মানুষ সেখানে ভিড় জমায়। খবর পেয়ে ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা এসে সাড়ে ১০টার দিকে আগুন নিয়ন্ত্রণে আনার চেষ্টা করে।
ডেমরা, কাঁচপুর, আদমজী ইপিজেড এবং কাঞ্চন ফায়ার স্টেশন থেকে ১২টি ইউনিট একে একে যোগ দেয়। বহু মানুষ ভবনের ভেতরে আটকা পড়েছে। আটকে পড়াদের পরিবারের কান্নায় ভারি হয়ে উঠেছে কারখানা এলাকা।
গত ২৪ আগস্ট রাজধানীর শান্তিনগর এলাকা থেকে গাজী গ্রুপের চেয়ারম্যান ও সাবেক বস্ত্র ও পাটমন্ত্রী গোলাম দস্তগীর গাজীকে গ্রেপ্তারের পর ছয় দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করে নারায়ণগঞ্জের আদালত। খবর পেয়ে সর্বশ্রেণির মানুষ কারখানাটিতে গণহারে লুটপাট চালায়। আগুন লাগার সময়ও লুট করতে গিয়ে শতাধিক মানুষ ভেতরে আটকা পড়েন।
ফায়ার সার্ভিসের সদর দফতরের মিডিয়া সেলের কর্মকর্তা তালহা বিন জসিম জানান, অবকাঠামোগত ও ভেতরে থাকা টায়ার উৎপাদনের দাহ্য পদার্থের কারণে আগুন নিয়ন্ত্রণে আনা ও ভেতরে আটকাপড়াদের উদ্ধারের ব্যাপারটি জটিল হয়ে পড়েছে। কী কারণে আগুন লেগেছে তা জানা যায়নি। আগুন পুরোপুরি নিয়ন্ত্রণে আসার পর এর কারণ ও ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ জানা যাবে।
শত শত মানুষ গাজী টায়ার কারখানার ভেতরে প্রবেশ করে মেশিনপত্র ও আসবাবপত্রসহ বিভিন্ন সামগ্রী লুটপাট করে নিয়ে যেতে শুরু করে। একপর্যায়ে লুটপাট চালাতে গিয়ে ৪/৫ শতাধিক মানুষ ছয়তলা ভবনটির বিভিন্ন ফ্লোরে উঠে পড়েন। সেখান থেকেও লুটপাট শুরু হয়। রাত নয়টার দিকে ভবনের নিচতলায় দুর্বৃত্তরা আগুন ধরিয়ে দিলে এলাকায় আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। এসময় দুইতলা ও তিন তলার জানালা দিয়ে অনেকেই নিচে লাফিয়ে পড়েন। এক পর্যায়ে আগুন একে একে পুরো ছয়তলা পর্যন্ত ছড়িয়ে পড়ে। তখন ভেতরে আটকে পড়া অনেকেই আর বের হতে পারেননি বলে এলাকাবাসী দাবি করছেন।
ফায়ার সার্ভিসের পরিচালক (ইন্সট্রাক্টর) লেফটেন্যান্ট কর্নেল রেজাউল বলেন,আগুন নিয়ন্ত্রণে আনতে আমাদের বিভিন্ন স্টেশনের ১২টি ইউনিট কাজ করছে। রাজধানীর সিদ্দিকবাজার থেকে টিটিএল মেশিন এনে কারখানার ওপর থেকে পানি দিয়ে আগুন নেভানোর চেষ্টা করছি। ছয়তলা ভবনটির অধিকাংশ ফ্লোরে প্লাস্টিক, রাবার ও কেমিকেলসহ বিভিন্ন ধরণের দাহ্য পদার্থ মজুদ ছিল। যে কারণে এগুলো জ্বলে শেষ না হওয়া পর্যন্ত আগুন নেভানো খুবই দুঃসাধ্য ব্যাপার। তারপরেও আমরা আগুন নিয়ন্ত্রণে আনতে বিভিন্নভাবে চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি।
এ পর্যন্ত ভবনের ভেতর থেকে আহত ১৪ জনকে জীবিত উদ্ধার করা হয়েছে। ভবনের ভেতরে প্লাস্টিক, রাবার ও রাসায়নিকসহ নানা ধরনের দাহ্য পদার্থ থাকায় আগুন নিয়ন্ত্রণে আনতে দীর্ঘ সময় অতিবাহিত হচ্ছে। তবে ভেতরে কি পরিমাণ মানুষ আটকা পড়েছিলেন তা এখনো বলা যাচ্ছে না।