অপকর্মের করার প্রতি মানুষের প্রবণতাটা অনেক বেড়ে গিয়েছে ফলে মানুষ এমন এমন অপকর্ম করছে যা সত্যিই খুব দুঃখজনক। বিশেষ করে সাধারণ মানুষেরা অপকর্মের শিকার হচ্ছে। পৃথিবীতে ভালো মানুষের পাশাপাশি খারাপ মানুষও রয়েছে আর এই খারাপ মানুষেরাই ঘটাচ্ছে সব অনাকাঙ্খিত ঘটনা। সম্প্রতি জানা গেছে অপহরণ করে খারাপ ভিডিও ধারণ, যুবলীগ নেতাসহ গ্রেফতার ৫।
ফেনীর বিসিক শিল্প এলাকায় জিম ব্যবসার আড়ালে নারীদের সোশ্যাল মিডিয়ায় ছেড়ে দেওয়ার হুমকি দিয়ে মুক্তিপণ আদায়ের অভিযোগে যুবলীগ নেতাসহ ৫ জনকে আটক করেছে র্যাব। শুক্রবার (২৬ আগস্ট) রাতে জেলার মহিপাল থেকে তাদের গ্রেপ্তার করে শনিবার (২৭ আগস্ট) বিকেলে আদালতের মাধ্যমে কারাগারে পাঠানো হয়।
গ্রেফতারকৃতরা হলেন ফেনী সদর উপজেলার দেবীপুর গ্রামের শাহাবুদ্দিনের ছেলে যুবলীগ নেতা ইমতিয়াজ উদ্দিন তোফায়েল (৩৪) ও একই গ্রামের আব্দুল হালিমের ছেলে আব্দুল্লাহ আল মামুন (২৬), নিহত হারুন বাবুর্চির ছেলে জাহিদ হোসেন (১৫), আনোয়ার। হোসেন (২৫) শর্ষদী গ্রামের আবুল হোসেনের ছেলে মো. ) দাগনভূইয়া ছিনিয়া গ্রামের মোঃ কবিরের ছেলে রফিকুল ইসলাম আরিফ (২১)।
এদের মধ্যে ইমতিয়াজ উদ্দিন তোফায়েল ফেনীর শর্শদী ইউনিয়ন যুবলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক।
র্যাব জানায়, একটি বেসরকারি বীমা কোম্পানির কুমিল্লা শাখায় কর্মরত এক ব্যক্তি বুধবার (২৪ আগস্ট) ফেনীর ট্রাঙ্ক রোডে অফিসের কাজ শেষ করে দুপুর সোয়া ১টার দিকে কুমিল্লার চৌদ্দগ্রামের উদ্দেশ্যে মদিনা বাসস্ট্যান্ড থেকে রওনা হন। বাস ছাড়ার ১০ থেকে ১৫ মিনিট পর ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের ফেনীর বিসিক সড়কের মোড়ে দুই শিক্ষার্থীসহ তিনজন বাস থামিয়ে ভিকটিমকে বাস থেকে নামতে বলেন। ভিকটিম গাড়ি থেকে নামার পর তাকে একটি চায়ের দোকানে নিয়ে তার কাছ থেকে ২ হাজার ২০০ টাকা ও মোবাইল ফোন ছিনিয়ে নেয়।
পরে তারা ভিকটিমকে একটি সিএনজি অটোরিকশায় করে ফেনী শহরের বিসিক শিল্পনগরী এলাকার পাওয়ার জোন জিম সেন্টারের নিচতলার কক্ষে নিয়ে গিয়ে ভিকটিমকে আটক করে মারধরের পর তার কাছে এক লাখ টাকা মুক্তিপণ দাবি করে। টাকা না দিলে তারা আমাকে মেরে ফেলার হুমকি দেয়। পরে অপহরণকারীরা নির্যাতিতার ব্যবহৃত মোবাইল ফোন থেকে তার স্ত্রীকে ফোন করে ১ লাখ টাকা দাবি করে এবং টাকা না দিলে স্বামীকে হত্যার হুমকি দেয়। এরপর তার স্ত্রী আর কোনো উপায় না পেয়ে সঙ্গে সঙ্গে বিকাশের কাছে তিন হাজার টাকা পাঠান। এতে ক্ষিপ্ত হয়ে তিনি মোবাইল ফোনে বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তার সঙ্গে এক নারীর আপত্তিকর ভিডিও রেকর্ড করেন এবং তাকে এসএস পাইপ দিয়ে মারধর করেন।
একপর্যায়ে তার স্ত্রীকে তার স্বামীর এনআইডি কার্ড ও ব্যাংকের এটিএম কার্ড আনতে বললে অন্য কোনো উপায় না পেয়ে ২৫ হাজার টাকা নগদ টাকা, এনআইডি কার্ড, এটিএম কার্ড নিয়ে বৃহস্পতিবার (২৬ আগস্ট) বিকেলে ঘটনাস্থলে যান। দুপুর ১ টা। এরপর অপহরণকারী ইমতিয়াজ উদ্দিন তোফায়েল ওই টাকা ও এনআইডি কার্ড, এটিএম কার্ড নিয়ে পরে ৫০ হাজার টাকা দাবি করে একটি সাদা কাগজে ভিকটিমদের স্বাক্ষর নেয়। পরে ৫০ হাজার টাকা না দিলে এবং আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে জানালে রেকর্ড করা ভিডিও ছবি সোশ্যাল মিডিয়ায় ছেড়ে দেওয়ার হুমকি দিয়ে ছেড়ে দেয়।
ছেড়ে দেওয়ার পর ওই দিন বিকেল সাড়ে ৪টার দিকে র্যাবকে খবর দেওয়া হলে অভিযান চালিয়ে শুক্রবার রাতে ফেনীর মহিপাল এলাকা থেকে অপহরণের সঙ্গে জড়িত আসামিকে গ্রেপ্তার করা হয়।
এদিকে ফেনী সদর উপজেলা যুবলীগের সভাপতি নুরুল আবছার আপনের দাবিতে গত ২৯ মার্চ ঘোষিত কমিটিতে তোফায়েলের নাম ও পরদিন তাকে বাদ দিয়ে নতুন কমিটি ঘোষণা করা হয়। তার সঙ্গে যুবলীগের কোনো সখ্যতা নেই।
ভুক্তভোগী সোহাগ মিয়া জানান, তাকে আটক করলে অপহরণকারীরা তাকে মারধর করে। এরপর সেখানে আরও ৪ জনকে অপহরণ করে একই কায়দায় তাদের পরিবারের কাছে মুক্তিপণ দাবি করা হয়।
ফেনী র্যাব-৭ এর সহকারী পরিচালক মো. নুরুল আবছার জানান, প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে গ্রেফতারকৃতরা জানায়, তারা দীর্ঘদিন ধরে মুক্তিপণের জন্য মানুষকে অপহরণ করে পরে জিম্মি করে পরিবারের কাছ থেকে মুক্তিপণ আদায় করে আসছে।
প্রসঙ্গত, মানুষের বিচার বিবেচনা ও জ্ঞানবুদ্ধির যে কতটা অধঃপতন হয়েছে সেটা আসলেই ভাষায় প্রকাশ মত না। দৈনন্দিন ঘটনাগুলো শুনলেই বুঝা যায় মানুষ আর মানুষ নেই, তাদের ঘৃণ্য কাজের জন্য তারা পরিণত হয়েছে অমানুষে। দেশে অপরাধের পরিমাণ নেই বললেই চলে তবে মাঝে মাঝে কিছু দুষ্কৃতিকারী মাথা চারা দিয়ে ওঠে এবং হঠাতই ঘটিয়ে বসে অপকর্ম।