আজান মুসলিমদের কাছে সব থেকে প্রিয় সুর। এই সুরের তালে ভেসেই আল্লাহর ডাকে সারা দিয়ে থাকে প্রতিটা ধর্মপ্রাণ মুসলিমরা। তবে এবার এই আজানের আওয়াজেই সমস্যায় পড়েছেন দেশের নাম করা শিল্পপতি এবং তার স্ত্রী। জানা গেছে চট্টগ্রাম নগরীর পূর্ব নাসিরাবাদ এলাকার একটি জামে মসজিদে উচ্চস্বরে আযানের শব্দে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন চট্টগ্রাম ক্লাবের চেয়ারম্যান শিল্পপতি নাদের খান ও তার স্ত্রী হাসিনা খান।
এদিকে তাদের আপত্তিতে এলাকার ধর্মপ্রাণ মানুষের মধ্যে ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে। পূর্ব নাসিরাবাদ মহল্লা কমিটির নেতৃবৃন্দ ধর্মীয় উস্কানিমূলক কর্মকান্ড ও অবমাননাকর মন্তব্যের জন্য থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি (ডিজি) করেছেন।
চিটাগাং ক্লাবের সভাপতি ও পেড্রোলো গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক নাদের খান চট্টগ্রাম শহরের পূর্ব নাসিরাবাদ এলাকায় থাকেন।
জানা গেছে, বেশ কিছুদিন ধরে ওই এলাকার প্রধান শাহী জামে মসজিদে নামাজের আযানের সময় উচ্চস্বরে মাইক্রোফোন ব্যবহার নিয়ে আপত্তি জানিয়ে আসছিলেন তিনি। তাতেও কাজ না হওয়ায় গত ১৪ ডিসেম্বর তিনি ও তার স্ত্রী পূর্ব নাসিরাবাদ শাহী জামে মসজিদের সেক্রেটারিকে লিখিত চিঠি পাঠান।
মসজিদের অভ্যন্তরে মসজিদে আজানের শব্দ সীমিত রাখার অনুরোধ জানিয়ে লেখা চিঠিতে তারা মসজিদ কমিটিকে সতর্ক করে লিখেছেন- ‘আমাদের অনুরোধ উপেক্ষা করলে আমরা সব ধরনের সহযোগিতা থেকে বিরত থাকব।’
শিল্পপতি নাদের খান ও তার স্ত্রী হাসিনা খান চিঠিতে লিখেছেন- ‘আপনাকে এবং কমিটির অন্যান্য সম্মানিত সদস্যদের বারবার অনুরোধ করা সত্ত্বেও, আপনি শোনার এবং বোঝার চেষ্টা করছেন না – আমরা এই এলাকার ৮-৯ টি মসজিদ থেকে এক সাথে আযান শুনতে পাচ্ছি। কিন্তু আপনারা কেউ কেউ উল্লেখ করেছেন যে যেহেতু আপনি অনেক দূরে আছেন, তাই আপনি শোনার সুবিধার জন্য মাইকের ভলিউম বাড়িয়ে রাখেন। আল্লাহ নিশ্চয়ই এ বিষয়টি পছন্দ করবেন না।
চিঠিতে লেখা আছে, ‘জুমার দিনে মসজিদে মাইক্রোফোনের মাধ্যমে ওয়াজ প্রচার করা হয়। মসজিদের ভিতরে এই আওয়াজ রাখার জন্য অনুরোধ করেছিলাম, কিন্তু এখনো হয়নি! অনেকেই নানা কাজে ব্যস্ত। শিশুর ঘুমের ব্যাঘাত ঘটতে পারে। ছাত্রদের পড়তে অসুবিধা হতে পারে, অসুস্থদের অসুবিধা হতে পারে – অন্য ধর্মের লোকেরা বিরক্ত হতে পারে – সর্বোপরি, উচ্চ শব্দ ছাড়া কিছুই বোঝা যায় না।’
নাদের খান ও তার স্ত্রী হাসিনা খান মসজিদ কমিটিকে অনুরোধের সুরে লিখেছেন- ‘মসজিদুল হারাম, মসজিদুল নববি- এই সব মসজিদে এ ধরনের মাইক্রোফোন ব্যবহার করা হচ্ছে কি না তা খতিয়ে দেখতে। আপনি যদি আমাদের অনুরোধ উপেক্ষা করেন, আমরা কোনো ধরনের সহযোগিতা থেকে বিরত থাকব।’
এদিকে এমন চিঠি জানাজানি হলে পূর্ব নাসিরাবাদ মহল্লা কমিটির সভাপতি আমির হোসেন খান ও সাধারণ সম্পাদক অহিদ চৌধুরী মুক্তির বিষয়ে খুলশী থানায় একটি জিডি (নং ১১৬৫) করেন।
রোববার (১৮ ডিসেম্বর) দায়ের করা অভিযোগে তারা উল্লেখ করেন, স্থানীয় বাসিন্দা ও মসজিদের মুসল্লিরা নাদের খান ও হাসিনা খানের প্রতি ক্ষোভ ও ঘৃণা প্রকাশ করেন। বিষয়টি নিয়ে ‘এলাকার বাসিন্দারা উত্তেজিত’ উল্লেখ করে যে কোনো মুহূর্তে বড় ধরনের অঘটন ঘটার আশঙ্কা প্রকাশ করেন তারা।
জিডিতে নাদের খান ও হাসিনা খানের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়ার অনুরোধ করা হয়েছে।
প্রসঙ্গত, এ দিকে একজন মুসলমান হয়ে এমন একটি কান্ড ঘটিয়ে বেশ সমালোচনার মুখে পড়েছেন তারা। তাদের নিয়ে এখন সারা দেশের মানুষ করছেন নানা ধরনের সমালোচনা। এ বিষয়ে নাদের খানের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি তাকে বিষয়টি নিয়ে তার স্ত্রী হাসিনা খানের সঙ্গে কথা বলার পরামর্শ দেন। পরে হাসিনা খানের মোবাইল নম্বরে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও সেটি বন্ধ পাওয়া যায়।