ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ বা টিআইবি জানিয়েছে, সরকারের একজন মন্ত্রীর বিদেশে ২ হাজার ৩১২ কোটি টাকা বিনিয়োগের তথ্য রয়েছে। আগামী নির্বাচনেও প্রার্থী হচ্ছেন এই মন্ত্রী। মন্ত্রী ও তার স্ত্রীর মালিকানাধীন কোম্পানিটি এখনও সক্রিয়ভাবে বিদেশে রিয়েল এস্টেট ব্যবসা পরিচালনা করছে। কিন্তু নির্বাচন কমিশনে দেওয়া হলফনামায় এ তথ্য জানানো হয়নি। মন্ত্রীর নাম প্রকাশ না করা হলেও টিআইবির নির্বাহী পরিচালক ইফতেখারুজ্জামান বলেন, এ বিষয়ে নির্ভরযোগ্য তথ্য রয়েছে। গতকাল এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি বলেন, টিআইবির নীতিমালায় না থাকায় নাম প্রকাশ করা হচ্ছে না। তবে সরকারের কোনো সংস্থা অনুরোধ করলে এ বিষয়ে সব তথ্য দেবে।
টিআইবির ধানমন্ডি কার্যালয়ে ‘নির্বাচন হলফনামা ডকুমেন্টারি, তারা জনগণকে কী বার্তা দিচ্ছেন’ শীর্ষক এই সংবাদ সম্মেলনে নবম, দশম, একাদশ ও দ্বাদশ নির্বাচনে নির্বাচন কমিশনে দেওয়া প্রার্থীদের হলফনামা বিশ্লেষণ করেন টিআইবির গবেষকরা। পরে টিআইবির ইফতেখারুজ্জামান বলেন, তাদের কাছে পাওয়া নির্ভরযোগ্য তথ্য অনুযায়ী সরকারের মন্ত্রিসভার অন্তত একজন সদস্যের নামে বিদেশে একাধিক কোম্পানি রয়েছে বলে প্রমাণ রয়েছে। মন্ত্রী হলফনামায় বিদেশে থাকা সম্পদের তথ্য প্রকাশ করেননি। মন্ত্রী ও তার স্ত্রীর মালিকানাধীন ছয়টি কোম্পানি এখনও বিদেশে রিয়েল এস্টেট ব্যবসায় সক্রিয়ভাবে জড়িত। তাদের মূল্য ১৬ কোটি ৬৪ লাখ পাউন্ড বা ২ হাজার ৩১২ কোটি টাকা। মন্ত্রী ২০১০ সালে প্রথম একটি কোম্পানি খোলেন, যার বর্তমান সম্পদ মূল্য ১ .৭৩ বিলিয়ন পাউন্ড। তারপরে তিনি ২০১৬ সালে আরেকটি কোম্পানি খোলেন, যার বর্তমান সম্পদের মূল্য ৭ .৩১ বিলিয়ন পাউন্ড। ২০১৯ সালে একটি তৃতীয় কোম্পানি খোলেন, যার বর্তমান সম্পদের মূল্য ১ .৭৯ বিলিয়ন পাউন্ড। তিনি ২০২০ সালে একটি চতুর্থ কোম্পানি চালু করেছিলেন, যার মূল্য ২ .১৫ বিলিয়ন পাউন্ড ছিল এবং ২০২১ সালে একটি পঞ্চম এবং ষষ্ঠ ছিল, যার বর্তমানে ৩ .২২ বিলিয়ন পাউন্ড মূল্যের সম্পদ রয়েছে। মন্ত্রীর নাম জানতে চাইলে ইফতেখারুজ্জামান বলেন, যেহেতু তথ্যটি গোপনীয় এবং তিনি নিজেই তা প্রকাশ করেননি। এ কারণে তার নাম প্রকাশ করা টিআইবির এখতিয়ারের বাইরে। তবে কোনো সরকারি কর্তৃপক্ষ টিআইবির কাছে তথ্য জানতে চাইলে প্রমাণসহ তা দেবে।
সংবাদ সম্মেলনে টিআইবির গবেষকরা হলফনামা বিশ্লেষণ করে প্রাপ্ত তথ্যের ভিত্তিতে জানান, দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অংশ নিতে যাওয়া প্রার্থীদের মধ্যে ১৮ জনেরও বেশি প্রার্থীর ১০০ কোটির বেশি সম্পদ রয়েছে। স্বতন্ত্র ও দলীয় প্রার্থীদের মধ্যে কোটিপতি প্রার্থীর সংখ্যা ৪৮০। ১৬৪ জন প্রার্থী যাদের আয় বছরে ১ কোটি টাকার বেশি। তিন সদস্যের গবেষণা দলের প্রধান তৌহিদুল ইসলাম গবেষণার তথ্য তুলে ধরেন এবং একটি তথ্যচিত্র উপস্থাপন করেন। অপর দুই সদস্য হলেন রিফাত রহমান ও রফিকুল ইসলাম। অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন টিআইবির নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান। সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন টিআইবি চেয়ারপারসন সুলতানা কামাল। ইফতেখারুজ্জামান বলেন, প্রার্থীদের হলফনামায় দেওয়া আয়-সম্পদ ও ঋণ-দায়-দায়িত্বের বিবরণী কতটা সঠিক এবং বৈধ উপায়ে আয়-সম্পদ অর্জিত হয়েছে তা যাচাই করা হয় না। আবার অধিগ্রহণের সময় হলফনামায় দেখানো সম্পদের মূল্য নিয়েও রয়েছে বড় প্রশ্ন। হলফনামায় প্রার্থীরা দেখিয়েছেন কত সম্পদ অর্জন করেছেন? পুরো শো কি? নাকি দেশে বা বিদেশে সম্পদ রাখার তথ্য গোপন করেছেন তা নিয়ে প্রশ্ন তোলার সুযোগ রয়েছে।
১০০ কোটি টাকা নিয়ে শীর্ষ ২০ প্রার্থী: পাট ও বস্ত্রমন্ত্রী গোলাম দস্তগীর গাজী প্রার্থীদের তালিকায় শীর্ষে রয়েছেন যাদের নির্বাচনী হলফনামায় ১০০ কোটি টাকার বেশি রয়েছে। তার সম্পদের পরিমাণ ১ হাজার ৩৪৫ কোটি টাকা। এরপর রয়েছেন বাহ্মণবাড়িয়া থেকে স্বতন্ত্র প্রার্থী এসএকে একরামুজ্জামান, যার সম্পদের পরিমাণ ৪২১ কোটি টাকা। সালমান এফ রহমানের সম্পদের পরিমাণ ৩১৫ কোটি টাকা। কুমিল্লা-৮ আসনের সংসদ সদস্য আবু জাফর মোহাম্মদ শফি উদ্দিনের সম্পদের পরিমাণ ৩০৬ কোটি, কুমিল্লা-৩ আসনের সংসদ সদস্য আবু ইউসুফ আবদুল্লাহ হারুনের সম্পদের পরিমাণ ২৭৭ কোটি টাকা, চুয়াডাঙ্গা-১ আসনের স্বতন্ত্র প্রার্থী দিলীপ কুমার আগরওয়ালার সম্পদের পরিমাণ ২৭৬ কোটি টাকা, সিরাজগঞ্জ-৫ আসনের সংসদ সদস্য আবুল উদ্দিনের সম্পদের পরিমাণ ২৭৬ কোটি টাকা। সম্পদের পরিমাণ ২৫৩ কোটি, নারায়ণগঞ্জ-১ স্বতন্ত্র প্রার্থী গাজী গোলাম মোর্ত্তজার সম্পদের পরিমাণ ২৩৩ কোটি, নানসিংদী-৩ স্বতন্ত্র প্রার্থী সিরাজুল ইসলাম মোল্লার ১৭৪ কোটি এবং ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের সাবেক মেয়র ও ঢাকা-৬ আসনে আওয়ামী লীগ প্রার্থী সাঈদ খোকনের সম্পদের পরিমাণ রয়েছে। ১৬৩ কোটি টাকা।
আয়ের শীর্ষ ১০ মন্ত্রী: বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি গত পাঁচ বছরে সবচেয়ে বেশি আয়কারী। তার আয় ২ হাজার ১৩১ কোটি টাকা। এরপরই রয়েছেন স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক। তার আয় বেড়েছে ২৭৫ শতাংশ, বিদ্যুৎ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদের আয় বেড়েছে ২২৮ শতাংশ, দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ প্রতিমন্ত্রী এনামুর রহমানের আয় বেড়েছে ২২৭ শতাংশ, শিল্পমন্ত্রী নুরুল মজিদ মাহমুদ হুমায়ুনের আয় বেড়েছে ১৬৪ শতাংশ।