Monday , December 23 2024
Breaking News
Home / Countrywide / এক নার্সের এত ক্ষমতা, মন্ত্রণালয়ের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদেরও তোয়াক্কা করেন না

এক নার্সের এত ক্ষমতা, মন্ত্রণালয়ের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদেরও তোয়াক্কা করেন না

সরকারি চাকরি করলেও সরকারি নিয়ম মানে না। মন্ত্রণালয়ের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদেরও তোয়াক্কা করেন না। শৃঙ্খলাভঙ্গের দায়ের শাস্তি পেয়েও শোধরাননি। তিনি নিয়মিত বিভিন্ন কুরুচিপূর্ণ ভাষায় সোশ্যাল মিডিয়ায় মন্ত্রণালয়ের বড় কর্তাদের বিরুদ্ধে লেখেন। নারীদের নিয়ে অশালীন মন্তব্যও করেন। সাইবার অপরাধে তাকে গ্রেফতার করে জেলে পাঠানো হয়। মন্ত্রণালয় তাকে সতর্ক করে কয়েক ডজন নোটিশ জারি করেছে। ঢাকা থেকে জামালপুরে বদলি হলেও তিনি সেখানে যোগ দেননি। পরিবর্তে তিনি মন্ত্রণালয়ের বদলি আদেশের বিরুদ্ধে আপিল করেন। মন্ত্রণালয়, বাংলাদেশ নার্সেস অ্যাসোসিয়েশন ও স্বাধীনতা নার্সেস পরিষদও তাকে নিয়ে বিপাকে পড়েছে। অত্যন্ত প্রভাবশালী ও অমনোযোগী এই নার্সের নাম খান মোঃ গোলাম মোর্শেদ।

দেখা গেছে, সিনিয়র স্টাফ নার্স গোলাম মোর্শেদ চাকরিজীবনের শুরু থেকেই বেপরোয়া ছিলেন। নিজের ইচ্ছামত দায়িত্ব পালন করতেন। ২০১৮ সালে শৃঙ্খলাভঙ্গের অভিযোগে তাকে চাকরি থেকে বরখাস্ত করা হয়েছিল। ১৬ অক্টোবর, ২০১৮ তারিখে নার্সিং ও মিডওয়াইফারি অধিদপ্তরের মহাপরিচালক (অতিরিক্ত সচিব) স্বাক্ষরিত একটি চিঠিতে তাকে বরখাস্তের কথা জানানো হয়। পরে চাকরি ফিরে পেলেও তার চরিত্রের কোনো পরিবর্তন হয়নি। সোশ্যাল মিডিয়ায় ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের নিয়ে নিয়মিত লেখেন তিনি। তিনি যে ভাষায় লেখেন তা প্রকাশযোগ্য নয়। এছাড়া আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর নারী সদস্যদের ছবিসহ অত্যন্ত আপত্তিকর ভাষায় একটি স্ট্যাটাস দেন মোরশেদ। এ জন্য তাকে গ্রেফতার করে ঢাকা মহানগর পুলিশের একটি দল। কিন্তু জেল থেকে বের হয়ে আবারও একই পথে হাঁটেন গোলাম মোর্শেদ। ২০২২ সালে তাকে ঢাকা থেকে জামালপুরে বদলি করা হয়। কিন্তু নতুন কর্মস্থলে যোগ না দিয়ে বদলির বিরুদ্ধে আপিল করেন প্রভাবশালী এই নার্স। সেখানে তিনি অপ্রাসঙ্গিক শব্দ ব্যবহার করেন। ফলে তার বিরুদ্ধে আবারও বিভাগীয় ব্যবস্থা নেওয়ার সুপারিশ করা হয় মন্ত্রণালয় থেকে। ২০২৩ সালের ১১ সেপ্টেম্বর জারি করা চিঠিতে বলা হয়, সিনিয়র স্টাফ নার্স ড. বদলির আবেদনে অসচ্ছলতার অভিযোগে গোলাম মোর্শেদের বিরুদ্ধে বিভাগীয় ব্যবস্থা নেওয়ার আবেদন করা হয়।

এছাড়াও, শৃঙ্খলা ভঙ্গের জন্য ৫ সেপ্টেম্বর ২০২৩ তারিখে তাকে কারণ দর্শানোর নোটিশ জারি করা হয়েছিল। একই বছরের ১২ ও ৩১ অক্টোবর আবারও দুটি নোটিশ জারি করা হয়। ওই নোটিশে গোলাম মোর্শেদের বিরুদ্ধে উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তার স্বাক্ষর জাল করার অভিযোগ আনা হয়। নোটিশের ৪ নং পয়েন্টে বলা হয়েছে যে তিনি ২০২২ সালের ফেব্রুয়ারী থেকে ২০২৩ সালের আগস্ট পর্যন্ত ১৯ মাস ধরে অভ্যাসগতভাবে কাজে অনুপস্থিত ছিলেন। দীর্ঘদিন কর্মস্থলে অনুপস্থিত থেকে কর্তব্যে অবহেলা প্রদর্শন সরকারি কর্মচারী (শৃঙ্খলা ও আপিল) বিধিমালা, ২০১৮-এর ২(খ) বিধি অনুযায়ী ‘অসদাচরণ’। তাকে চলতি বছরের ৩১ মার্চ আরেকটি নোটিশ দেওয়া হয়।

চলতি বছরের ১০ মে বাংলাদেশ নার্সেস অ্যাসোসিয়েশন (বিএনএ) গোলাম মোর্শেদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ প্রধানের কাছে লিখিত আবেদন জমা দেয়। ওই আবেদনে বলা হয়, মোঃ গোলাম মোর্শেদ স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের মহাপরিচালক, মহাপরিচালক ও ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের নিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে অশালীন, অরুচিকর পোস্ট ও মন্তব্য প্রচার করে নার্সিং সেক্টরে বিশৃঙ্খলা ও নৈরাজ্য সৃষ্টি করে চলেছে , স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়, নার্সিং ও মিডওয়াইফারি অধিদপ্তর। এ ধরনের অপকর্মের জন্য তিনি গ্রেফতার হন এবং দীর্ঘ সময় কারাগারে কাটান। এসব কর্মকাণ্ডের কারণে তাকে কয়েকবার সরকারি চাকরি থেকে বরখাস্ত ও স্থায়ীভাবে বরখাস্ত করা হয়। কিছু অসাধু কর্মকর্তার সহায়তায় মামলার মাধ্যমে চাকরি ফিরে পেলেও রাষ্ট্র, সরকার ও প্রশাসনের বিরুদ্ধে তার তৎপরতা থেমে থাকেনি। এছাড়াও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে নার্সিং সেক্টরের সিনিয়র নেতাদের লাঞ্ছিত ও হুমকি দেওয়া হলে বনানী থানা ও শাহবাগ থানায় একাধিক সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করা হয়। এসব বিষয়ে সাধারণ নার্সরা বারবার জানালেও তার বিরুদ্ধে কোনো আইনি বা প্রশাসনিক ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি।

জানতে চাইলে বিএনএ মহাসচিব মো. জামাল উদ্দিন বাদশা গণমাধ্যমকে বলেন, “তিনি (গোলাম মোর্শেদ) দীর্ঘদিন ধরে একই ধরনের অপরাধ করে আসছেন। তিনি মন্ত্রণালয়ের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের নিয়ে বাজে মন্তব্য করেছেন এবং সোশ্যাল মিডিয়ায় লিখেছেন। তার বিরুদ্ধে একাধিক অভিযোগ সত্ত্বেও কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। পরে আমরা সব তথ্যপ্রমাণসহ ডিএমপি কমিশনারের কাছে লিখিত অভিযোগ দায়ের করা হয়েছে।

অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে গোলাম মোর্শেদ এই প্রতিবেদকের ওপর ক্ষিপ্ত হন। তিনি বলেন, আমার বিরুদ্ধে নিউজ করলে আমি আপনার নামে ডিজিটাল সিকিউরিটি (সাইবার সিকিউরিটি) আইনে মামলা করব।

About Nasimul Islam

Check Also

ভারতের গণমাধ্যমে প্রতিবেদন ফাঁস, বন্দিদের ভারতে পাঠাতেন শেখ হাসিনা

ভারতের গণমাধ্যম আনন্দবাজার পত্রিকা সম্প্রতি একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে, যেখানে বাংলাদেশের ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার …

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *