বাংলাদেশের মানবাধিকার লঙ্ঘন নিয়ে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে আলোচনা যেন থামছেই না। একের পর এক মানবাধিকার লঙ্ঘনের বিষয়ে বার বার বাংলাদেশের দিকে আঙ্গুল তুলছে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র। এবার এ নিয়ে কথা বলেছে দেশটির স্টেট ডিপার্টমেন্ট এর মুখপাত্র।
স্টেট ডিপার্টমেন্টের মুখপাত্র নেড প্রাইস বলেছেন, গুরুতর মানবাধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগে যুক্তরাষ্ট্র র্যাব ও তার ছয় কর্মকর্তার বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে। বিশ্বাসযোগ্য তথ্যের ভিত্তিতে, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ২০১৮ সাল থেকে র্যাবের সাথে সমস্ত সহযোগিতামূলক সম্পর্ক ছিন্ন করেছে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র মানবাধিকার লঙ্ঘনের জন্য জবাবদিহিতা নিশ্চিত করতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।
বুধবার স্টেট ডিপার্টমেন্টের নিয়মিত প্রেস ব্রিফিংএ দেশটির পক্ষে এমন অভিমত ব্যক্ত করেন তিনি।
স্টেট ডিপার্টমেন্টের প্রতিবেদক মুশফিকুল ফজল আনসারী সম্প্রতি বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দেওয়া এক বক্তৃতার প্রতি দৃষ্টি আকর্ষণ করে জানতে চান- বাংলাদেশের ক্ষমতাসীন সরকার বাক ও সমাবেশের স্বাধীনতার ওপর আক্রমণ চালিয়ে যাচ্ছে। সম্প্রতি অন্তত তিন বিরোধী দলের কর্মী নিহত হয়েছেন। যুক্তরাষ্ট্র র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়নের ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে, কিন্তু বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা যুক্তরাষ্ট্রের কাছ থেকে পিছু হটছেন এই বলে যে, যুক্তরাষ্ট্রের মদদে র্যাব গঠিত হয়েছে; প্রশিক্ষণ, রসদ এবং অস্ত্র সরবরাহ করেছে এবং এখন তারা মার্কিন প্রশিক্ষণের অধীনে কাজ করছে। বাংলাদেশের স্বৈরাচারী প্রধানমন্ত্রীর এমন বক্তব্য সম্পর্কে আপনার মন্তব্য কী?
জবাবে, মুখপাত্র নেড প্রাইস বলেছেন, “সত্য হল যে র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন বা র্যাব-কে মানবাধিকার লঙ্ঘনের ক্ষেত্রে জড়িত বিশ্বাসযোগ্য তথ্যের ভিত্তিতে, আমরা ২০১৮ সাল থেকে সমস্ত সহযোগিতা বন্ধ করে দিয়েছি। প্রায় চার বছর আগে আমরা আমাদের সমর্থন বন্ধ করে দিয়েছিলাম। এই গ্রুপে, এবং প্রকৃতপক্ষে, গত বছরের ডিসেম্বরে, ডিসেম্বর ২০২১, আমরা আমাদের গ্লোবাল ম্যাগনিটস্কি আইনের অধীনে র্যাবের পাশাপাশি ৬ জন বর্তমান ও প্রাক্তন কর্মকর্তার বিরুদ্ধে গুরুতর মানবাধিকার লঙ্ঘনের গুরুতর অভিযোগে নিষেধাজ্ঞার অনুমোদন দিয়েছি। এবং আমরা প্রকাশ্যে ৭০৩১ (সি) ধারার ক্ষমতার অধীনে দুই প্রাক্তন র্যাব কর্মকর্তাকে ব্যাপক মানবাধিকার লঙ্ঘনের জন্য চিহ্নিত করেছি।”
স্টেট ডিপার্টমেন্টের মুখপাত্রের প্রধান আরও বলেন, “বাংলাদেশ হোক বা দক্ষিণ এশিয়া বা বিশ্বের অন্য কোথাও, আমরা মানবাধিকারকে আমাদের পররাষ্ট্রনীতির কেন্দ্রে রেখেছি। এবং আমরা মানবাধিকার লঙ্ঘনের বিরুদ্ধে নজরদারি ও ব্যবস্থা নিতে সমানভাবে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। যখন তারা ঘটে। ন্যায়বিচার এবং আইনের শাসন সমুন্নত রাখা। বাংলাদেশ নিরাপত্তা বাহিনীর আমাদের প্রশিক্ষণ এই নীতিরই প্রকাশ।”
স্টেট ডিপার্টমেন্টের মুখপাত্র নেড প্রাইস বিরোধী দলগুলোর শান্তিপূর্ণ সমাবেশে হামলার বিষয়ে বলেছেন, “আমাদের মন্তব্য একই রকম, যখন সমাবেশের স্বাধীনতা, মতপ্রকাশের স্বাধীনতার সার্বজনীন অধিকার প্রয়োগ করছেন এমন লোকদের ওপর আক্রমণের কথা আসে।” জনগণের সর্বত্র, যে কোনো স্থানে, যেকোনো উপায়ে, শান্তিপূর্ণভাবে এবং আইনের শাসনের প্রতি শ্রদ্ধার সাথে কথা বলার, একত্রিত হওয়ার এবং তাদের আকাঙ্ক্ষা প্রয়োগ করার অধিকার রয়েছে।
প্রসঙ্গত, বাংলাদেশের বিরোধী দল গুলো তাদের স্বাধীনতা অনুযায়ীও দেশে করতে পারছে না কোনো ধরণের সুষ্ঠু সমাবেশ বা মিছিল। প্রতিবারই তারা বাধার স্মুখীন হচ্ছে সরকার তরফ থেকে। আর এই কারনে সমাবেশে বাধা না দেয়ার আহবান মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র।