রাজধানীর যানজট এড়াতে রাস্তার একাংশ খুলে দেওয়া হচ্ছে। ঢাকা এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের বিমানবন্দর (কাওলা) থেকে ফার্মগেট অংশ শনিবার উদ্বোধন হতে যাচ্ছে। এই প্রকল্পটি পিপিপি মোডে বাস্তবায়িত হচ্ছে। তাই এক্সপ্রেসওয়েতে টোল অব্যাহত রাখতে দেওয়া উচিত। প্রতিটি গাড়ির জন্য নির্দিষ্ট পরিমাণ টোল দিতে হয়।
প্রধান এক্সপ্রেসওয়েতে সর্বোচ্চ ৬০ কিলোমিটার প্রতি ঘণ্টা এবং র্যাম্পে ৪০ কিলোমিটার প্রতি ঘণ্টা গতির অনুমতি দেওয়া হবে। শহরবাসী মাত্র ১২ মিনিটে কাওলা থেকে ফার্মগেট পৌঁছাতে পারেন। প্রকল্পের সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, এই অংশে যাতায়াতের সময় বাঁচবে এবং ভোগান্তি কমবে।
প্রাইভেট কার, মাইক্রোবাস, পিকআপ ও হালকা ট্রাক ৮০ টাকা, বাস ও মিনিবাস ১৬০ টাকা, মাঝারি ট্রাক ৩২০ টাকা এবং ভারী ট্রাক বা ট্রেলার ৪০০ টাকা। ভিত্তি এ কারণে টোলের টাকা থেকে নির্মাণ ব্যয় নেওয়া হবে।
এক্সপ্রেসওয়েতে দুই ও তিন চাকার যানবাহন চলাচল না করার বিষয়ে জানতে চাইলে ঢাকা এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে প্রকল্পের পরিচালক এএইচএমএস আখতার যুগান্তরকে বলেন, দুই ও তিন চাকার যানবাহন দ্রুত ও নিরাপদে চলাচল করতে দেওয়া হবে না।
বর্তমানে, প্রধান এক্সপ্রেসওয়েটি 60 কিলোমিটার প্রতি ঘণ্টা গতিতে বিরতিহীনভাবে চলবে। মানুষ একবার এটিতে অভ্যস্ত হয়ে গেলে, গাড়িগুলিকে ৮০ কিলোমিটার প্রতি ঘণ্টা গতিতে চালানোর অনুমতি দেওয়া হবে। দুই ও তিন চাকার গাড়ি চলাচলের অনুমতি দিলে অন্য যানবাহন দ্রুত চলতে পারবে না। মিশ্র যানবাহনের কারণে দুর্ঘটনা ঘটবে। সেই আশঙ্কার কারণে দুই ও তিন চাকার যান চলাচলের অনুমতি নেই।
প্রকল্প সংশ্লিষ্টরা জানান, প্রথম ধাপে কাওলা থেকে ফার্মগেট পর্যন্ত এক্সপ্রেসওয়ে চালু হচ্ছে, ১৫টি র্যাম্প রয়েছে। এর মধ্যে বিমানবন্দরে দুইজন, কুড়িলে তিনজন, বনানীতে চারজন, মহাখালীতে তিনজন, বিজয় সরণীতে দুইজন ও ফার্মগেটে একজন রয়েছেন। এই ১৫টি র্যাম্পের মধ্যে মহাখালী ও বনানী সেকশনে দুটি র্যাম্প বন্ধ থাকবে। বাকি ১৩ টি র্যাম্প দিয়ে যানবাহন এক্সপ্রেসওয়েতে প্রবেশ এবং প্রস্থান করতে পারে। তবে যেসব পয়েন্টে গাড়ি নামবে সেখানে যানজটের আশঙ্কা করছেন বিশেষজ্ঞরা।
বুয়েটের শিক্ষক গণপরিবহন বিশেষজ্ঞ কাজী সাইফুল নেওয়াজ বলেন, ওইসব পয়েন্টে ট্রাফিক ব্যবস্থাপনার ওপর জোর দিতে হবে। তা না হলে যানজট নিরসনের লক্ষ্য পূরণ হবে না। প্রকল্পের স্টেকহোল্ডাররা আশা করছেন যে এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের প্রথম ধাপে প্রতিদিন গড়ে ৮০ ,০০০ যানবাহন যাতায়াত করতে পারবে। যাইহোক, সেই সংখ্যার গাড়ি এক্সপ্রেসওয়ে ব্যবহার করবে কি না তা নিয়ে উদ্বেগ রয়েছে।
এক নজরে এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে প্রকল্প
পিপিপি পদ্ধতিতে এ প্রকল্প বাস্তবায়ন করা হচ্ছে বলে জানা গেছে। প্রকল্পের আওতায় কাওলা, কুড়িল, বনানী, মহাখালী, তেজগাঁও, মগবাজার, কমলাপুর, সায়েদাবাদ, যাত্রাবাড়ী থেকে কাতুবপুর পর্যন্ত এক্সপ্রেসওয়ে নির্মাণ করা হবে। প্রধান এলিভেটেড সেকশনের দৈর্ঘ্য ১৯ .৭৩ কিমি। প্রধান এক্সপ্রেসওয়েতে 31টি অন-র্যাম্প রয়েছে। এই র্যাম্প সহ এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের দৈর্ঘ্য ৪৬ .৭৩ কিমি।
পুরো প্রকল্পটি বাস্তবায়িত হলে নগরবাসী যানজট এড়িয়ে সহজেই ঢাকার বাইরে যাতায়াত করতে পারবে। প্রকল্পটির মোট ব্যয় ধরা হয়েছে ৮ হাজার ৯৪০ কোটি টাকা। প্রকল্পটির মালিকানা রয়েছে থাইল্যান্ডভিত্তিক ইতালীয় থাই ডেভেলপমেন্ট পাবলিক কোম্পানি লিমিটেডের ৫১ শতাংশ, চীনভিত্তিক কোম্পানি শানডং ইন্টারন্যাশনাল ইকোনমিক অ্যান্ড টেকনিক্যাল কোঅপারেশন গ্রুপের ৩৪ শতাংশ এবং সিনোহাইড্রো কর্পোরেশন লিমিটেড ১৫ শতাংশ।
এ পর্যন্ত প্রকল্পের সার্বিক অগ্রগতি ৬৫ দশমিক ৯৬ শতাংশ। বিনিয়োগ সংস্থাটি এ পর্যন্ত ৪১২ .৩৫ মিলিয়ন মার্কিন ডলার বিতরণ করেছে।