দাম্পত্য কলহের জের ধরে প্রথম সংসারের ভাঙনের পর বাঁচার আশা অনেকটা ছেড়েই দিয়েছিলেন শিক্ষিকা খাইরুন নাহার (৪০)। তবে পরবর্তীতে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকের সুবাদে কলেজছাত্র মামুনের সঙ্গে পরিচয়, অতঃপর বিয়ের পর আবারও নতুন করে বাঁচার স্বপ্ন দেখি ছিলেন তিনি।
তবে মামুনকে এর মধ্যেই নিয়মিত যোগাযোগ রাখতেন প্রথম ঘরের দুই ছেলের সঙ্গে। আর এ যোগাযোগই হয়তো কাল হয়ে দাঁড়িয়েছে তার জীবনে। ছাড়তে হলো রঙিন এ পৃথিবী।
আলোচিত এ শিক্ষিকা লাশ হওয়ার পেছনে কলেজছাত্র স্বামীর হাত রয়েছে বলে মনে করেন খায়রুনের ছেলে সালমান নাফিস বৃন্ত। সেই রাতে মায়ের সঙ্গে ফোনে শেষ মুহূর্তের কথাও জানান তিনি।
ঘটনার দিন রাত ১১টার কিছু আগে ছেলে বৃন্থ তার মাকে ফোন করে। আর ফোন তোলার সময় ঘুমের ট্যাবলেট খাওয়ার কথা জানান মা খায়রুন নাহার। ফোনে তাদের কথোপকথন মাত্র ৪০ সেকেন্ড স্থায়ী হয়েছিল। মায়ের বিপদের কথা জানতে পেরে স্বামী মামুনকে ফোন করেন বৃন্ত।। কিন্তু কোনো লাভ হয়নি। উল্টো খাইরুনের এমন অভ্যাস নিত্যদিনের বলে জানান মামুন। কোনোরকমে রাত পার করেন বৃন্ত। আর সকাল হতেই মায়ের আ”ত্ম’হ’নন’র খবর আসে। তবে এ ঘটনায় মামুনকে দায়ী করেছেন কলেজছাত্র খায়রুন।
খায়রুন নাহার নাটোরের গুরুদাসপুর এম হক কলেজের সহকারী অধ্যাপক ছিলেন। তার ছেলে বৃন্ত রাজশাহী সিটি কলেজের একাদশ শ্রেণির ছাত্র। ছোট ছেলে অর্ক তৃতীয় শ্রেণির ছাত্র।
বৃন্ত বলেন, ঘটনার দিন শনিবার রাত ১১টার দিকে মাকে ফোন করি। এ সময় মা আমাকে জানান, তিনি দুই এমজি পাওয়ারের আটটি ঘুমের ট্যাবলেট খেয়েছেন। মা এর বাইরে কথা বলতে পারেননি। এরপর সংযোগ কেটে মামুনকে ফোন করেন বৃন্ত। মামুন জানান, দুই-চারটি কথাবার্তার পর খায়রুন ঘুমের ট্যাবলেট খেয়ে নেয়। এরপর মামুন আমাকে আমার মায়ের সঙ্গে কথা বলতে বললেন। পরদিন সকালে মামুন ফোন করে আ”ত্ম’হন’ন’র কথা জানায়।
বৃন্তের দাবি, মামুনের সব কথাই মিথ্যা। মূলত মামুন মোটরসাইকেল কেনাসহ সব কিছুর জন্য মায়ের কাছ থেকে টাকা নিতেন। এছাড়া মাকে সবসময় মানসিক চাপে রাখতেন। মামুনই তার মাকে শেষ করেছে বা আ’ত্ম’হ’নন’ করতে উৎসাহিত করেছে।
এছাড়া ছেলেকে মোটরসাইকেল কিনে দিতে চাইলে খাইরুনকে নিষেধ করেন মামুন। এ নিয়ে ওই রাতে খাইরুনের সঙ্গে মামুনের কথা কাটাকাটিও হয়েছিল।
নাটোর সদর হাসপাতালের সহকারী পরিচালক পরিতোষ কুমার জানান, খায়রুনের ময়নাতদন্তের জন্য সদর হাসপাতালের আরএমও সামিউল ইসলাম শান্তর নেতৃত্বে তিন সদস্যের একটি বোর্ড গঠন করা হয়েছে। প্রাথমিকভাবে তার গলায় আ’ঘা’তের চিহ্ন ছাড়া শরীরে কোনো আ’ঘা’তে’র চিহ্ন ছিল না। রিপোর্ট পাওয়ার পর মৃ’ত্যুর সঠিক কারণ জানা যাবে।
এদিকে চলতি বছরের গত ৩১ জুলাই তাদের বিয়ের খবর প্রকাশ্য আসতেই রীতিমতো সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে শুরু হয় ব্যাপক আলোচনা-সমালোচনা। নিজের বয়সের তুলনায় অনেক ছোট ছেলেকে বিয়ে করায় অনেক কটু কথাও শুনতে হচ্ছিল খাইরুনকে।