Friday , November 15 2024
Breaking News
Home / Countrywide / একের পর এক বেফাঁস তথ্য দিয়ে যাওয়া মোমেনকে কি করা হবে,এ নিয়ে কথা হয়েছে প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে

একের পর এক বেফাঁস তথ্য দিয়ে যাওয়া মোমেনকে কি করা হবে,এ নিয়ে কথা হয়েছে প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে

পররাষ্ট্রমন্ত্রী যেন থামছেই না। একের পর এক সব বেফাঁস তথ্য দিয়েই যাচ্ছেন তিনি। আর সেই কারনে দলের এবং সরকারের পড়তে হচ্ছে বেশ বিপাকে।এত দিন একটি সীমার মধ্যে থাকলেও এবার যেন সেই সীমাটাও অতিক্রম করেছেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী।তার বক্তব্য আবারও বিতর্কের জন্ম দিয়েছে। গত বৃহস্পতিবার চট্টগ্রামে জন্মাষ্টমীর অনুষ্ঠানে তিনি বলেছিলেন যে তিনি ভারতে গিয়ে বর্তমান সরকারকে টিকিয়ে রাখতে ‘যা যা করা দরকার’ করার অনুরোধ করেছেন। দেশটির পররাষ্ট্রমন্ত্রীর এমন বক্তব্য ব্যাপক আলোচনা-সমালোচনার জন্ম দিয়েছে।

বিষয়টি যেমন দেশের জন্য মর্যাদা হানি করেছে, তেমনি আওয়ামী লীগের জন্যও অস্বস্তি তৈরি করেছে। সরকার বিব্রতকর পরিস্থিতিতে পড়েছে। সেপ্টেম্বরের প্রথম সপ্তাহে গুরুত্বপূর্ণ ভারত সফরের আগে পররাষ্ট্রমন্ত্রীর এমন বক্তব্য দুই দেশের কূটনীতিকদের জন্য বিব্রতকর পরিস্থিতির সৃষ্টি করেছে।

আওয়ামী লীগের একাধিক শীর্ষ নেতা পররাষ্ট্রমন্ত্রী দলের নয় দাবি করে বিষয়টি এড়াতে চাইলেও তা করতে পারছেন না। কারণ, সিলেট মহানগর আওয়ামী লীগের কমিটির এক নম্বর সদস্য এ কে আবদুল মোমেন। দলের একজন গুরুত্বপূর্ণ নেতা জানান, বিষয়টি নিয়ে তিনি প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে কথা বলেছেন। তিনি বলেন, পররাষ্ট্রমন্ত্রীর বক্তব্যে প্রধানমন্ত্রী নিজেই ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেছেন।

শুক্রবার আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের পররাষ্ট্রমন্ত্রীর বক্তব্যকে সরকারের নয়, তার ব্যক্তিগত বক্তব্য বলে ‘আত্মরক্ষার’ চেষ্টা করেছেন। কিন্তু একজন মন্ত্রীর বক্তব্যকে সরকারের বক্তব্য বলে মনে করা হয়।

গতকাল ধানমন্ডি ৩২ নম্বরে জাতীয় শোক দিবস উপলক্ষে আওয়ামী লীগের আন্তর্জাতিক উপ-কমিটি আয়োজিত অনুষ্ঠানে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে আওয়ামী লীগের অপর সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য আবদুর রহমান এ কথা বলেন। “পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আবদুল মোমেন আওয়ামী লীগের সদস্য নন। তাই তার বক্তব্যে আমাদের দলের বিব্রত হওয়ার প্রশ্নই আসে না। অনুষ্ঠানে আইনমন্ত্রী আনিসুল হক ও পররাষ্ট্রমন্ত্রী একে আবদুল মোমেনও উপস্থিত ছিলেন।

আলোচনা সভা শেষে সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলেন আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য আবদুর রহমান। তিনি বলেছিলেন যে অনুষ্ঠানে পররাষ্ট্রমন্ত্রীর সাথে তার ব্যক্তিগত কথা হয়েছিল, যেখানে তিনি মন্ত্রীকে দায়িত্বের সাথে কথা বলার জন্য অনুরোধ করেছিলেন।

এক প্রশ্নের জবাবে আবদুর রহমান আরও বলেন, ‘এই বক্তব্যের ভালো ব্যাখ্যা দিতে পারেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী। কিন্তু তার বক্তব্য আমাদের দলের কথা নয়।

তবে পররাষ্ট্রমন্ত্রীর বক্তব্যের বিষয়ে সরকারের পক্ষ থেকে এখনো কোনো বক্তব্য বা প্রতিক্রিয়া জানানো হয়নি। তবে সরকারের শীর্ষ পর্যায় থেকে একান্তে মোমেনকে তিরস্কার করা হয়েছে বলে দায়িত্বশীল একটি সূত্র নিশ্চিত করেছে। সূত্রটি দেশ মানবরামকে জানায়, পররাষ্ট্রমন্ত্রী মোমেনের লাগামহীন বক্তব্য সরকারকে খুবই বিশ্রী অবস্থায় ফেলেছে। এর আগে পররাষ্ট্রমন্ত্রী গণমাধ্যমকে বলেন, যুক্তরাষ্ট্র সফরে এসেও বিএনপিকে নির্বাচনে আনার জন্য দেশটির প্রতি অনুরোধ জানিয়েছেন। রাজনৈতিক মহলে আওয়ামী লীগ বিব্রতকর অবস্থায় পড়েছিল। মানবাধিকার ইস্যুতে গত ডিসেম্বরে র‌্যাবের ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে যুক্তরাষ্ট্র। গত এপ্রিলে পররাষ্ট্রমন্ত্রী গণমাধ্যমকে বলেছিলেন যে আমেরিকা প্রতিবেশী ভারতকে নিষেধাজ্ঞা তুলে নিতে অনুরোধ করেছে; যা ভারতের জন্য অস্বস্তি তৈরি করে। একই মাসে ঢাকা সফরকালে ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী এস জয়শঙ্করকে সাংবাদিকরা এ বিষয়ে প্রশ্ন করেন। জয়শঙ্করের উত্তর ছিল, “প্রশ্নটি বরং ডাঃ মোমেনের সাথে করুন।

সরকারের একজন মন্ত্রী জানিয়েছেন, সেপ্টেম্বরের প্রথম সপ্তাহে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ভারত সফরে যাবেন। এই সফরের ঠিক আগে মোমেনের বক্তব্য দুই দেশের সরকারকে অস্বস্তিকর পরিস্থিতিতে ফেলেছে। মোমেন প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে ভারতে গেলে এই সফরের তাৎপর্য ও গুরুত্ব প্রশ্নবিদ্ধ হবে বলে তিনি মনে করেন। তাই সরকার ও দলের মধ্যে প্রশ্ন উঠেছে, রাজ্যের উচ্চপর্যায়ের ভারত সফরে পররাষ্ট্রমন্ত্রীকে সফরসঙ্গী হিসেবে রাখা ঠিক হবে কি না।

সরকারের একজন মন্ত্রী নাম প্রকাশ না করার শর্তে দেশ মানবরামকে বলেন, প্রধানমন্ত্রীর সফরসঙ্গী হিসেবে মোমেনের ভারত সফর আরও সমালোচনার আমন্ত্রণ জানাবে। অনেক প্রশ্ন উঠবে।

পররাষ্ট্রমন্ত্রীকে ভারত সফর থেকে বাদ দিলেই ভালো হবে বলে মনে করছে সরকার ও আওয়ামী লীগের একাংশ।

আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কমিটির বিভিন্ন পদে থাকা চার নেতা দেশ পানওয়ারকে বলেন, এ কে আবদুল মোমেনকে এই মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বে দেখতে চান না আওয়ামী লীগের শীর্ষ নেতারা। তাকে দ্রুত অপসারণের ব্যবস্থা নেওয়া ভালো হবে বলেও পরামর্শ দিয়েছেন তারা। কারণ, এরই মধ্যে পররাষ্ট্রমন্ত্রীর অনেক মিথ্যা কথায় সরকার ও আওয়ামী লীগকে বিব্রত হতে হয়েছে। তাকে দায়িত্বে রাখা হলে নতুন জটিলতা সৃষ্টি হবে বলেও আশঙ্কা ওই নেতাদের। এ বিষয়ে প্রধানমন্ত্রীর সিদ্ধান্তের দিকে তাকিয়ে আছেন তারা। পররাষ্ট্রমন্ত্রীর বক্তব্যে চরম ক্ষুব্ধ আওয়ামী লীগের অধিকাংশ শীর্ষ নেতা। কিন্তু দল ও সরকারের স্বার্থে তারা মুখ খুলতে পারছেন না। তারা মুখ খুললে তা সরকারকেই প্রশ্নবিদ্ধ করবে।

আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর একজন সদস্য দেশ পানওয়ারকে বলেন, দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় আরও গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠবে। বিদেশিদের সঙ্গে নানা রকম ঋণ থাকবে। ফলে এ মন্ত্রণালয়ে একজন পরিণত ও রাজনৈতিক নেতার প্রয়োজন রয়েছে। কূটনীতিতে দক্ষ কাউকে দায়িত্ব দিতে হবে। শেখ হাসিনার নেতৃত্বে মন্ত্রিসভায় রদবদলের সম্ভাবনা রয়েছে বলেও জানান এই সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য। কবে হতে পারে সে বিষয়ে কিছু জানাতে না পারলেও আগামী নির্বাচনের আগে পরিবর্তন আসবে বলে জানান তিনি।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে কৃষিমন্ত্রী আবদুর রাজ্জাক দেশ মনোয়ারনকে বলেন, এ বিষয়ে তিনি কোনো মন্তব্য করবেন না। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় তার নয়। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়-সংশ্লিষ্ট সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি ও আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য ফারুক খান বলেন, বিষয়টি প্রধানমন্ত্রীর এখতিয়ার। পররাষ্ট্রমন্ত্রীর বক্তব্য নিয়ে কী বললেন দলের সাধারণ সম্পাদক, সেটাই দলের অবস্থান।

কিন্তু সরকারের শীর্ষস্থানীয়রা মনে করছেন, মোমেনকে এখন অপসারণ করা হলে তা লাগামহীন বক্তব্যকে বিশ্বাসযোগ্যতা দেবে। তাই কোনটি দৃশ্যমান হবে না, পররাষ্ট্রমন্ত্রীকে অপসারণ বা নিজেকে প্রত্যাহার করার বিষয়টি বিবেচনা করা হচ্ছে। সরকারের দায়িত্বে থাকা আরেকটি সূত্র দেশ পার্বণমকে জানায়, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা মোমেনকে নিয়ে তাৎক্ষণিক কোনো সিদ্ধান্ত নিতে চান না। তিনি গো-ধীর নীতি অনুসরণ করতে চান। সরকার পরিস্থিতি সামাল দিতে চায়।

এ দিকে পররাষ্ট্রমন্ত্রীর কারনে এখন বেশ চাপে রয়েছে সরকার এবং আওয়ামীলীগ। বিশেষ করে আগামী মাসের ৫ তারিখে ভারত সফরে যাবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। আর এই লক্ষ্যে অনেক কাজ বাকি এখনো। এরই মধ্যে এমন একটি কান্ড যেন ঠিক হযম হচ্ছে না সবার। বিশেষ করে ওই সফরে মোমেন থাকলে প্রতিক্রিয়া কী হবে তা দেখতে চায় সরকার। বিরূপ প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হলে তাকে ছাড়াই সফর হতে পারে।

About Rasel Khalifa

Check Also

উপদেষ্টা পরিষদেই বৈষম্য

অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের উপদেষ্টা পরিষদে আঞ্চলিক বৈষম্যের অভিযোগ উঠেছে। ২৪ সদস্যের এই পরিষদে ১৩ জনই চট্টগ্রাম …

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *