সম্প্রতি পর্যটন এলাকা কক্সবাজার ( Cox’ Bazar )ে, পুলিশ ও সাংবাদিকের পরিচয় ব্যবহার করে বিভিন্ন অপকর্মসহ নারীদের সাথে খারাপ কাজ ও নিষিদ্ধ দ্রব্য নিয়ে ব্যবসা এবং পর্যটকদের হেনস্থা করাই ছিল রাসেল চক্রের কাজ। সেই রাসেল চক্রের সেকেন্ড-ইন-কমান্ড অশিক গ্রেফতার হয়েছেন র্যাবের ( Radhab ) কাছে। স্থানীয় প্রশাসন তাদের নিয়ন্ত্রণে থাকার কারণে ভুক্তভোগীরা কোনো বিচার পাচ্ছিলেন না। অবশেষে গৃহবধূকে লাঞ্ছনার কারণে ধরা পড়তেই হলো রাসেল চক্রের সেকেন্ড-ইন-কমান্ড অশিককে। গ্রেফতারের পর দমে যাননি চক্র নেতা রাসেল।
রাসেল বলেছিলেন, “আমি পুলিশকে নিয়ন্ত্রণ করি। আপনি তাদের হাতে ধরা পড়লেও তারা আপনার কিছুই করতে পারবে না। আমি পুলিশকে দেখাশোনা করব কিন্তু র্যাবের ( Radhab ) হাতে ধরা পড়লে পরাজিত হবেন। আমি আবারও বলছি, র্যাবের ( Radhab ) হাতে ধরা পড়লে পরাজিত হবেন। সম্প্রতি কক্সবাজার ( Cox’ Bazar ) নারীর সাথে খারাপ কাজ করার মামলার মূল হোতা আশিকুল ইসলাম আশিককে ( Ashiqul Islam Ashiq ) ( Ashik ) আত্মগোপনে থাকতে সতর্ক করেন চক্র নেতা রাসেল”। ২৬ ডিসেম্বর রাতে ( December night ) আশিককে ( Ashik ) ধরা পড়ে র্যাবের ( Radhab ) হাতে। মাদারীপুর ( Madaripur ) থেকে তাকে আটক করে র্যাব।
নিষিদ্ধ দ্রব্যের ব্যবসাসহ বিভিন্ন অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডের তথ্য ও আলামত পেয়ে নারীর সাথে খারাপ কাজ করার মামলার মূল হোতাকে গ্রেপ্তারের চেষ্টা চালায় আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। এরপর রাসেল উদ্দিন আত্মগোপন করেন। রাসেলের ( Russell ) বিরুদ্ধে দীর্ঘদিন ধরে নিষিদ্ধদ্রব্যের ব্যবসা ও পুলিশ কর্মকর্তা হিসেবে ও পুলিশের বদনাম করার অভিযোগ রয়েছে।
এদিকে রহস্যজনক কারণে রাসেল উদ্দিনকে ( Russell Uddin ) আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী খুঁজে না পেলেও, এবার কক্সবাজার ( Cox’ Bazar )ে আরেক হাই প্রোফাইল নারীর সাথে খারাপ কাজ করার মামলায় পুলিশ কর্মকর্তা হিসেবে হাজির হয়েছেন রাসেল। পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, গত ( Past ) ১৪ মার্চ দুপুরে ( March noon ) কক্সবাজার ( Cox’ Bazar ) আদালত থেকে এক নারীকে তুলে নিয়ে খারাপ কাজ করার অভিযোগে মামলা করেন এক নারী। মঙ্গলবার মামলাটি দায়ের করা হয়। এ মামলায় রাসেল উদ্দিনকে ( Russell Uddin ) ২য় আসামি করা হয়েছে। ভুক্তভোগী ওই জবানবন্দিতে দাবি করেন, রাসেল পুলিশের সঙ্গে অতিরিক্ত আচরণ করে তার বিরুদ্ধে মামলা করার হুম”কি দেন। একপর্যায়ে রাসেল ওই নারীর সাথে ও খারাপ কাজ করেন।
এদিকে রাসেলের খোঁজ করতে গিয়ে চমকপ্রদ তথ্য পাওয়া গেছে। জানা গেছে, কক্সবাজারে স্বামী ও সন্তানদের জিম্মি করে গৃহবধূর সাথে খারাপ কাজ করার মূল হোতা মেহেদী হাসান বাবু, আশিকের সরাসরি পৃষ্ঠপোষক রাসেল উদ্দিন। রাসেলের অধীনে পর্যটন শহরে দীর্ঘদিন ধরে অপহরণ, নারীর সাথে খারাপ কাজ, ব্ল্যাকমেইল, চাঁদাবাজিসহ অর্ধশতাধিক সন্ত্রা”/সী কর্মকাণ্ডে জর্জরিত। তিনি একটি ভুয়া পুলিশ বাহিনীও গঠন করেন। অভিযোগ রয়েছে, কক্সবাজারের অধিকাংশ পুলিশ কর্মকর্তার সঙ্গে সুসম্পর্ক থাকা রাসেল গ্যাংকে আইনের আওতায় আনা তো দূরের কথা। কক্সবাজারে চিহ্নিত নিষিদ্ধ দ্রব্যের ব্যবসায়ীরাও পুলিশের গাড়ির বহরে সঙ্গী হয়েছেন। নথি হিসেবে পুলিশের গাড়ি চক্কর দেওয়ার বেশ কিছু ছবি প্রতিবেদকের কাছে আসে। শুধু তাই নয়, পুলিশ কর্মকর্তাদের সঙ্গে নিয়মিত একান্ত বৈঠক এমনকি জুম মিটিংও করেন নিয়মিত! পরে রাসেল নিজেই তার ফেস”বুক অ্যাকাউন্ট থেকে ছবিগুলো পোস্ট করেন।
রাসেল উদ্দিন কক্সবাজারের ঈদগাঁও উপজেলার পোকখালী সিকদার পাড়ার লোদা মিয়ার ছেলে। এলাকাবাসী জানায়, বিভিন্ন অপকর্মের কারণে প্রায় ১০ বছর আগে এলাকাবাসীর তোপের মুখে এলাকা ছেড়ে কক্সবাজারে সুগন্ধা পয়েন্টে অবস্থিত অ্যাপার্টমেন্ট হোটেল-আলফা ওয়েবে পিয়নের চাকরি নিতে যান।পরে রাসেলকে হোটেলের ম্যানেজার করা হয়। হোটেল-আলফা-ওয়েবের পাশের একাধিক মালিক অভিযোগ করেন, রাসেল ম্যানেজার হওয়ার পর ৮০১ নম্বর ফ্ল্যাটে প্রতি রাতে নিষিদ্ধ দ্রব্যে ও তরুণীদের নিয়ে পার্টি হতো। সেখানে প্রতি রাতেই কক্সবাজারের কয়েকজন পুলিশ কর্মকর্তা ও চিহ্নিত সন্ত্রা”/সীরা আসেন।
অভিযোগ রয়েছে, সন্ত্রা”/সীদের সহায়তায় কয়েক বছর আগে হোটেলটির বেশির ভাগ দখল করে নেয় রাসেল। তারা আরও দাবি করেছে যে তাদের প্রতিনিধিদের পুলিশ দ্বারা নির্যা’/তনের পর কিছু মালিক ক্রসফায়ারের ভয়ে হোটেল ও দেশ ছেড়ে চলে গেছে। মালিকদের দাবি, রাসেল হোটেল প্রথমে তিন হাজার ৬০০ বর্গফুটের ৮০১, ৮০২, ৮০৩ নম্বর তিনটি অ্যাপার্টমেন্ট দখল করে। এরপর তিনি সুইমিং পুলসহ আরও ১২টি ঘর দখল করেন। এসব ঘরের আনুমানিক মূল্য ৫০ কোটি টাকার বেশি। কিছু মালিক কে রাসেলকে নির্যা”/তন করে উচ্ছেদ করার অভিযোগও রয়েছে, যার ফলে কয়েকজন হৃদরোগে আক্রা”ন্ত হয়ে না ফেরার দেশে চলে গেছেন।
অ্যাপার্টমেন্টের একজন মালিক নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, ৮০১ নম্বর ফ্ল্যাটের একটি কক্ষে নিয়মিত ৫ থেকে ৭ জন সুন্দরী রাখা হয়। পুলিশ ও সন্ত্রা”/সীদের সেবা করার পাশাপাশি তারা পর্যটকদের কাছে নিয়মিত নিষিদ্ধ দ্রব্যে বিক্রি ও সেবন করান। পরে মোটা অংকের টাকা দিতে না চাইলে রাসেল ও অশোকসহ কয়েকজন কোমরে পিস্তল নিয়ে সেখানে হাজির হয়। এরপর ওই পর্যটকের সঙ্গে নারী ও নিষিদ্ধ দ্রব্যের ছবি তোলা হয়। ৮০১ নম্বরের আরেকটি কক্ষে মার”/ধর চালানো হয়। মোটা অঙ্কের টাকা না দিলে উদ্ধার না হওয়া পর্যন্ত তাদের সেখানে আটকে রাখা হয়। তাদের সঙ্গে কয়েকজন পুলিশ কর্মকর্তা সরাসরি জড়িত বলেও অভিযোগ করেন তিনি। তিনি বলেন, ভুক্তভোগীদের রাসেলক ভুক্তভোগীদের পর্যটকের নোংরা ছবি তোলে, ভয়ে কেউ থানায় অভিযোগ করে না।
আত্মগোপনে যাওয়ার আগে রাসেল অভিযোগ অস্বীকার করে স্থানীয় একটি পত্রিকার ব্যবস্থাপনা সম্পাদক বলে দাবি করেন। এদিকে চিহ্নিত সন্ত্রা”/সী ও নারীর সাথে খারাপ কাজে অভিযুক্ত আশিককে বাঁচাতে রাসেল কোটি টাকা খরচ করেছে বলে, একটি সূত্র দাবি করেছে। ভিকটিম প্রথমে পরিবারকে মামলা নেওয়ার জন্য মোটা অঙ্কের প্রস্তাব দেয়। রাজি না হওয়ায় পরে হুমকি ও দেন রাসেল। বিষয়টি স্বীকার করেছেন, ভুক্তভোগী পরিবার। মামলা তুলে নিতে ভিকটিম ও তার স্বামীকে ২০ লাখ টাকা দিতে চান। রাজি না হওয়ায় ঢাকায় ফিরেও পুলিশের হাতে হয়রা”নির শিকার হচ্ছেন তারা। ওই দম্পতি বলেন, রাসেল হুমকিদাতাদের সঙ্গে ছিলেন কিনা তা তারা জানেন না।
স্থানীয়রা জানায়, রাসেলকে বেরান পুলিশ উদ্ধারকৃত নিষিদ্ধ দ্রব্যে বিক্রির দায়িত্ব দিয়েছে। তাই এসব নিষিদ্ধ দ্রব্যে বিক্রি করলে পুলিশ ধরবে না। নাম প্রকাশ না করার শর্তে স্থানীয় কয়েকজন জানান, সমাজ বিরোধী অভিযোগে অভিযুক্ত আশিক, নগরীর অধিকাংশ সন্ত্রা”/সীই তার নিয়ন্ত্রণে। পেশার পাশাপাশি চাঁদাবাজি, ছিন”তাইসহ বিভিন্ন অপরাধমূলক কর্মকাণ্ড তার নিয়ন্ত্রণে রয়েছে। কিন্তু পুলিশের সঙ্গে তার সুসম্পর্ক থাকায় তাদের কাউকে গ্রেপ্তার করা হয় না। ফলে পর্যটন নগরীতে দিন দিন লুটপাট ও চাঁদাবাজি বাড়ছে বলে দাবি তাদের। স্থানীয় সূত্রে এবং সরেজমিনে কর্মরত একটি গোয়েন্দা সংস্থার সদস্যের মতে, রাসেল কক্সবাজারে গ্রেপ্তার হওয়া কোনো সন্ত্রা”/সীকে মুক্ত করার চেষ্টা করেন। তিনি ব্যর্থ হলে নিজ খরচে জামিনে মুক্তি পান। এরপর সে তাকে তার দলে নিয়ে অর্থ আত্মসাৎ ও চাঁদাবাজিসহ বিভিন্ন অপরাধমূলক কাজে ব্যবহার করে। তিনি বলেন, রাসেল আশিকসহ তিন কারাগারে থাকা প্রধান তিন আসামিকে জামিনে মুক্ত করার চেষ্টা করছেন। এর আগে আশিকসহ কয়েকজন সন্ত্রা’/সীকে জামিনে মুক্তি দিয়েছিলেন রাসেল। কক্সবাজারের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মো. রফিকুল ইসলাম জানান, রাসেল উদ্দিনকে গ্রেপ্তারের চেষ্টা চলছে। একই সঙ্গে তার অভিযোগগুলো গুরুত্বের সঙ্গে খতিয়ে দেখা হচ্ছে। এরপরও কক্সবাজারের কোনো পুলিশ তাকে আশ্রয় দিয়েছিল কিনা তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে। সত্যতা পাওয়া গেলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
প্রসঙ্গত, কক্সবাজারের দায়িত্বশীল পুলিশ সুপার গণমাধ্যমকে বলেছেন, যেসব পুলিশ কর্মকর্তাদের সঙ্গে রাসেলকে পুলিশের গাড়িতে দেখা গিয়েছিল, বর্তমানে তারা কেউ কক্সবাজারে কর্মরত নাই। বর্তমানে কোন পুলিশ অফিসার যদি তাদেরকে সহযোগিতা করে থাকে, অবশ্যই আইনী ব্যবস্থা গ্রহন করা হবে। রাসেল চক্রের দখলে হোটেলসহ যা রয়েছে, সবগুলো উদ্ধারে তৎপরতা অব্যাহত রাখছে পুলিশ প্রশাসন। এখনো পর্যন্ত চক্রের নামে অভিযোগ অনুসারে তেমন কোনো মামলা কক্সবাজারের কোন থানায় হয়নি। মামলা পাওয়া গেলে মামলার ভিত্তিতে আমরা ব্যবস্থা গ্রহণ করব।