রাজধানী ঢাকা শহরে প্রতিনিয়তই ছিনতাইয়ের ঘটনা ঘটে থাকে। অসংখ্য মানুষ ছিনতাইয়ের কবলে পড়ে তাদের সর্বস্ব হারায়। কিন্তু বেশির ভাগই ক্ষেত্রে ছিনতাইকারীদের ধরা সম্ভব হয় না। সাধারন মানুষ ছিনতাইকারীদের কাছে এক প্রকার অসহায়ত্ব বরন করতে বাধ্য হন। এবার একাই দুই ছিনতাইকারীকে ধরেলেন এক ছাত্রী জানলেন ধরার বিষয়ে।
থিসিসের কাজে বৃহস্পতিবার সকালে রাজধানীর সদরঘাট থেকে মিরপুর চিড়িয়াখানায় গিয়েছিলেন জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণিবিদ্যা বিভাগের এক ছাত্রী। সঙ্গে ছিলেন তার বন্ধু শাহরিয়ার আলম। সারা দিন সেখানে কাজ করে তানজিল পরিবহনের একটি বাসে করে ফিরে যাচ্ছিলেন সদরঘাটে। সন্ধ্যার দিকে বাসটি কারওয়ান বাজার এসে জ্যামে আটকে পড়ে। তখন বাসের জানালার পাশে বসে মোবাইলে বোনের সঙ্গে কথা বলছিলেন ওই ছাত্রী। হঠাৎ এক ছিনতাইকারী বাইরে থেকে মোবাইলটি টান দিয়ে দৌড় দেয়।
ওই ছাত্রী তাৎক্ষণিক বাস থেকে নেমে ছিনতাইকারী ধাওয়া করলেও তাকে ধরতে পারেনি। মোবাইল ফোনে গুরুত্বপূর্ণ কাগজপত্র হারিয়ে কারওয়ান বাজারের প্রধান সড়ক সংলগ্ন ইত্তেফাক রাস্তায় এসে কাঁদছিলেন। ঠিক তখনই দুই ছিনতাইকারী আরেকজনের ফোন ছিনিয়ে নিয়ে পালাচ্ছিল। কেউ একজন পেছন থেকে বলছিল, ধরেন ধরেন। চিৎকার শুনে ওই ছাত্রী এক ছিনতাইকারীকে জাপটে ধরেন।
নিজের ফোন ছিনিয়ে নেওয়া ছিনতাইকারীকে ধরতে না পারলেও আরেক ছিনতাইকারীকে ধরে ক্ষুব্ধ ওই শিক্ষার্থী ছিনতাইকারীকে ধরে কিল-ঘুসি দিতে থাকেন। ততক্ষণে ঘটনাস্থলে জড়ো হন অনেক মানুষ।
ওই ছাত্রী ছিনতাইকারীর পকেটে তল্লাশি চালিয়ে একটি মোবাইল ফোন পায়। কিন্তু এটা তার নয়। পরে ছিনতাইকারীকে ফোন দিয়ে তার সহযোগীকে ডাকে আনেন। এরপর দুই ছিনতাইকারীকে তেজগাঁও থানায় হস্তান্তর করা হয়।
জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের ওই ছাত্রী জানালেন, কীভাবে অসীম সাহসিকতার সঙ্গে দুই ছিনতাইকারীকে ধরলেন।
তিনি বলেন, রাজধানীর মিরপুর থেকে আসছিলাম। আমি জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় থেকে প্রাণিবিদ্যা (বন্যপ্রাণী) বিভাগে মাস্টার্স করছি। আমি হাতি নিয়ে গবেষণা করছি। এ দীর্ঘ এক বছর ধরে থিসিসের কাজে যত কিছু ছিল সব কিছু আমার ফোনেই ছিল। ডাটা নিয়ে তানজিল বাসে আসছিলাম। কারওয়ান বাজার সিগন্যালে বাস জ্যামে আটকায়। আমি জানালার পাশে আমার বোনের সাথে ফোনে কথা বলছিলাম। বাস ছাড়ার ঠিক আগে ছিনতাইকারীক আমার ফোন ছিনিয়ে নেয়। আমার ফোনের সাথে হেডফোনও লাগানো ছিল। সাথে সাথে আমি চিৎকার করে উঠলাম। চাচ্ছিলাম, বাসের জানালা দিয়ে বের হয়ে যাই।। কিন্তু সেটা সম্ভব হয়নি। দেখছিলাম, লোকটা সামনে চলে যাচ্ছে। পরে বাস থেকে নেমে যেতে যেতে দেখি ছিনতাইকারী উধাও হয়ে গেছে। রাস্তা পার হয়ে অপর পাশেও যাই, খুঁজি। কিন্তু আমি তাকে (ছিনতাইকারীকে) পাইনি।
না পেয়ে ফিরে এলাম। আমার ফ্রেন্ড নেমে যায় বাস থেকে। কিন্তু আমি ভেবেছিলাম আমার বন্ধু বাসে আছে। আবার তানজিল বাস ধরতে এগিয়ে গেলাম। বাস ধরার পর ওরা বলল- তোমার বন্ধু নেমেছে। তখন আমি আবার ফিরে আসি ইত্তেফাক গলির কাছে। ওখানে খুঁজি, আমার ফ্রেন্ডকে খুঁজি। কান্নায় ভেঙে পড়ছিলাম, অস্থির হয়ে পড়ছিলাম।
কেউ কেউ আমাকে জিজ্ঞেস করছিল, আপু কী হয়েছে? আমি বললাম, আমার ফোন নিয়ে গেছে। পরে আমি আমার বন্ধুর দেখা পাই। তখন ইত্তেফাকের গলির সামনে হাঁটাহাঁটি করছিলাম। তখন দোকানদাররা বলছিলেন, এখানে প্রতিদিনই অহরহ ছিনতাই হচ্ছে। আপনি ফোন পাবেন না। জিডি করেও কোনো লাভ নেই, আপনি ফোন পাবেন না।
সন্ধ্যা ঘনিয়ে আসছে, ভাবছিলাম বাসায় যাব। এমন সময় দেখলাম দুই ছেলে দৌড়াচ্ছে। একজন পেছন থেকে বলছে, ধরেন ধরেন, ফোন নিয়ে গেছে।
প্রসঙ্গত, ওই ছিনতাইকারীকে ধরতে বাসের থেকে নেমে তার পিছু নিলেও ধরতে পারিনি ছাত্রীটি। পরে ওখানে তার বন্ধুকে কে নিয়ে দাড়িয়ে থাকার সময় একজনকে দৌড়াতে দেখে তাকে আটক করে বলে জানায় ওই ছাত্রী।