আগামী দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনকে কেন্দ্র করে রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে বিভিন্ন ধরনের আলোচনা চলচ্ছে। বিগত দুটি নির্বাচন নিয়ে বিভিন্ন দলের মধ্যে ব্যাপক বিতর্ক রয়েছে। তবে আগামী নির্বাচনে দলীয় সরকারের অধীন নির্বাচনে অংশ নিবে না বিএনপি। তাদের দাবি নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে ছাড়া নির্বাচন সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ সম্ভব নয়। এ জন্য বিএনপি সরকারে বিরুদ্ধে আন্দোলন করতে বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের সাথে ঐক্যে করেছে তারই ধারাবাহিকতায় গণঅধিকার পরিষদের সাথে আলোচনায় ঐক্যেমতে পৌঁছেছে। বিএনপির হাতে ক্ষমতা ছেড়ে দেয়া যাবে না মন্তব্য করেন নুরুল হক নূর সে প্রসঙ্গে তিনি যা বললেন।
আবারও ভোল পাল্টালেন গণঅধিকার পরিষদের সমন্বয়ক নূরুল হক নুর। বিএনপির হাতে ক্ষমতা ছেড়ে দেয়া যাবে না বলে মন্তব্য করেছিলেন তিনি। কিন্তু এর ২৪ ঘণ্টার মধ্যেই সুর বদলে সরকার পতনের যুগপৎ আন্দোলনে বিএনপির পাশে থাকার ঘোষণা দেন ডাকসুর সাবেক এই ভিপি।
মঙ্গলবার (২ আগস্ট) দুপুরে জাতীয় প্রেসক্লাবে গণসংহতি আন্দোলনের ‘ভোটের অধিকার ও গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠায় রাজনৈতিক প্রস্তাবনা’ শীর্ষক আলোচনা সভায় এ কথা বলেন নূর। সেখানে তিনি বলেন, ‘গত ৩৪ বছরে আমরা আওয়ামী লীগ ও বিএনপিকে ক্ষমতায় দেখেছি। আমরা দুদলের চরিত্রই দেখেছি। তাদের চরিত্র একই। এই দুই দল ক্ষমতায় থাকলে জনগণের কিছুই হবে না। সেজন্য তৃতীয় শক্তিকে ক্ষমতায় আনতে হবে।
এ দিন নূর আরো বলেন, ১৯৯৬ সালে বিএনপি এককভাবে ক্ষমতায় থাকতে চেয়েছিল। তখন তাদের পদত্যাগ করতে বাধ্য করা হয়। এ সময়ে বিএনপির ভুল আছে বলেও তিনি স্বীকার করে নিয়েছেন।
এ ভাষণ দেওয়ার পরদিন বুধবার বিএনপির সঙ্গে দেড় ঘণ্টার সংলাপ শেষে তিনি অবস্থান পরিবর্তন করেন। সংলাপ শেষে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, আজ গণঅধিকার পরিষদের সঙ্গে আলোচনায় আমরা খুবই সন্তুষ্ট ও খুশি। তারা সব বিষয়ে আমাদের সঙ্গে একমত।
তিনি আরও বলেন, আমরা একযোগে আন্দোলন চালিয়ে যাব বলে একমত হয়েছি। আর নূর বলেন, দেশের চলমান সংকটে রাজনৈতিক দলগুলোর করণীয় নিয়ে আলোচনা হয়েছে। চলমান সংকটকে আমরা যেভাবে দেখি তাতে আমাদের আর বিএনপির মধ্যে খুব একটা পার্থক্য নেই। আজকের আলোচনায় আমাদের ১০টি বিষয় ছিল, আমরা সেই ১০টি বিষয়ে একমত হয়েছি।
এর আগেও বিতর্কিত মন্তব্য করে ব্যাপক সমালোচিত হয়েছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক ভিপি। ২ ২০২০ সালের অক্টোবরে সামাজিকমাধ্যম ফেসবুক লাইভে এসে খারাপ কাজের মামলার বাদীকে ‘দুশ্চরিত্রা’ বলার অভিযোগ রয়েছে তার বিরুদ্ধে। পরে অবশ্য নিজের স্বভাবজাত সুর বদলে নুর বলেন, ‘দুশ্চরিত্রা নয়, আমি দুশ্চরিত্রহীন বলেছি।’
নারী নেত্রী ও মানবাধিকার কর্মীরা বলেন, বাংলা ভাষায় ‘দুশ্চরিত্রহীন’ শব্দটি নেই, নূর আসলে দায়িত্ব অস্বীকার করার চেষ্টা করছেন। অঅভিযোগ খণ্ডন করে নুর বলেন, দুশ্চরিত্রহীন, মানে তাকে চরিত্রবান বা চরিত্রহীন কোনোটাই বলিনি। তিনি অন্যের প্ররোচনায় এসব কাজ করেছেন।
জবাবে খারাপ কাজের মামলা করা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ওই ছাত্রী বলেন, নূর আমাকে দেখে নেওয়ার হুমকি দিয়েছে। পরে ফেসবুক লাইভে আমাকে দুশ্চরিত্রা বলে। এতেই বোঝা যায় তার আসল উদ্দেশ্য কী।
এছাড়াও নূর ছাত্রলীগের ভেতরে লুকিয়ে থাকা বিপরীত মতাদর্শের ব্যক্তি ছিলেন কি না; এমন অভিযোগ আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে বিভিন্ন সময়ে করা হয়েছে।
গণভবনের বাইরে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কড়া সমালোচনা করেন নূর। তিনি আবার এগিয়ে গিয়ে তাকে ‘মায়ের মতো’ বলে প্রশংসা করলেন। কখনো তিনি বিএনপির সমালোচনা করেন আবার কখনো দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারিক রহমানের প্রশংসা করেন।
গত বছর মুসলিম সম্প্রদায়ের ধর্মীয় গ্রন্থ কোরান ও বাংলাদেশের সংবিধান সম্পর্কে নূরের বক্তব্য সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে। নূরের বক্তব্যে কুরআনের অবমাননা হয়েছে দাবি করে অনেকেই তাকে গ্রেপ্তারের দাবি জানিয়েছেন। এমনকি নূরের সমর্থকদের অনেকেই এ ইস্যুতে তার সমালোচনা করেছেন।
এ সময় তাকে তার বক্তব্য প্রত্যাহার করে তওবা করার আহ্বান জানানো হয়েছে। ছড়িয়ে পড়া ১৯ সেকেন্ডের ভিডিওতে নূর বলেন, “কোরআন যদি মুসলমানের ধর্মগ্রন্থ হয়ে থাকে আর বাইবেল যদি খ্রিষ্টানদের ধর্মগ্রন্থ হয়ে থাকে, তাহলে হিন্দু, মুসলিম, বৌদ্ধ, খ্রিষ্টান সব বাংলাদেশির জন্য বাইবেল এবং কোরআনের সমতুল্য হচ্ছে বাংলাদেশের সংবিধান। এই সংবিধানের ভিত্তিতে একটি রাষ্ট্র পরিচালিত হয়।’
ওই ভিডিওতে নূরের আশেপাশে থাকা ব্যক্তিদের মাথার টুপি দেখে নিশ্চিত হওয়া গেছে, এটি বাংলাদেশ যুব অধিকার পরিষদের প্রথম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর অনুষ্ঠানে দেওয়া বক্তৃতা। ৩১ আগস্ট, ২০২১ সালে যুব অধিকার পরিষদের প্রতিষ্ঠা বার্ষিকী পালিত হয়। তবে বর্ষপূর্তি অনুষ্ঠানে দেওয়া ভাষণ সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়েছে।
প্রসঙ্গত, বিএনপি বিরুদ্ধে বক্তব্য দিয়ে আবারও তাদের সাথে আলোচনায় মাধ্যমে ঐক্যেমত প্রকাশ করায় বিতর্কের মুখে পড়েন গণঅধিকার পরিষদের সমন্বয়ক নূরুল হক নুর। তার এ বক্তব্য নিয়ে বিভিন্ন মহলে প্রশ্ন উঠেছে।