শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে রাজনীতি বর্তমান সময়ের একটি সাধারণ বিষয়, যেটা দিনকে দিন ভিন্ন দিকে প্রবাহিত হচ্ছে। এবার কুষ্টিয়া ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের (ইবি) রাজনীতি নিয়ে ভিন্ন এক ঘটনা ঘটেছে যেখানে একজন শিক্ষিকার বিরুদ্ধে ছাত্রী হুমকি দেয়ার অভিযোগ উঠেছে। ঐ শিক্ষিকার নাম মাহবুবা সিদ্দিকা, তিনি এক ছাত্রীকে ‘শিবির’ আখ্যা দিয়ে হুমকি দেওয়ার একটি অডিও ক্লিপ ফাঁ”স হয়েছে। সোমবার সকালে ২৯ সেকেন্ডের অডিও ক্লিপটি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফে”সবুকের বিভিন্ন পেজে ভাইরাল হয়।
বিশ্ববিদ্যালয়ের ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতি বিভাগের সহকারী অধ্যাপক ও খালেদা জিয়া হলের হাউস টিউটর মাহবুবা সিদ্দিকা ভুক্তভোগী ছাত্রীকে ফোনে নানাভাবে হুমকি দিচ্ছেন বলে শোনা যাচ্ছে। তিনি ছাত্রীকে বলেন, ‘এই তোমার বাবা কি করে? মেয়রকে চিনো? টিটু ভাইকে (ময়মনসিংহ সিটি করপোরেশনের মেয়র ইকরামুল হক টিটু) চিনো? একদম বইলা উঠায়ে তোমারে পুইত্তা (পুঁতে) দিমুনে।’
ওই অডিও ক্লিপে তাঁকে বলতেও শোনা যায়, ‘আমার বাড়ি কোথায় জানো? তুমি কি জানো আমার শ্বশুরবাড়ি কোথায়? আমার সম্পর্কে জানো? আমি রোকেয়া হল ছাত্রলীগের সহ-সম্পাদক। আমার নাম মাহবুবা সিদ্দিকা। তুমি কি আমাকে চেন? আমি কত পাওয়ার চালাইছিলাম তুমি চিনো? এলাকায়ও টিকতে পারবা না।’
এদিকে অডিও ক্লিপ ভাইরাল হওয়ার পর ক্যাম্পাসজুড়ে নিন্দার ঝড় উঠেছে। শিক্ষক হওয়া নিয়ে অনেকেই বিরূপ মন্তব্য করছেন এবং ছাত্রীকে এভাবে হুমকি দিচ্ছেন।
জানা গেছে, গত ২৩ আগস্ট খালেদা জিয়া হলে বোরকা পরে সাক্ষাৎকারে অংশ নেওয়া ওই ছাত্রীকে শিবির আখ্যা ও হুমকি দেওয়া হয়। এ ঘটনার পর ভুক্তভোগী তরুণী বিষয়টি তার আত্মীয় শাখা ছাত্রলীগের সাবেক এক নেতাকে জানান। এ বিষয়ে তিনি বর্তমান ছাত্রলীগ কর্মীর মাধ্যমে শিক্ষিকা মাহবুবা সিদ্দিকার সঙ্গে যোগাযোগ করেন। ছাত্রীকে হয়রানি না করার জন্য অনুরোধ করেন। এ ঘটনার জেরে গত ২৪ আগস্ট ভি”কটিম ছাত্রীকে প্রভোস্টের কার্যালয়ে ডেকে নেন শিক্ষিকা মাহবুবা সিদ্দিকা।
ওই ছাত্রী প্রভোস্টের কার্যালয়ে গেলে মাহবুবা সিদ্দিকা তার ওপর ক্ষি”প্ত হয়ে তাকে পুঁতে ফেলাসহ বিভিন্নভাবে হুমকি দেন। এ ঘটনায় ভূগোল বিভাগের ভুক্তভোগী ওই ছাত্রী নিরাপত্তা চেয়ে গত ২৭ আগস্ট বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র উপদেষ্টা ও প্রক্টরের কাছে লিখিত অভিযোগ করেন।
বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক সমিতির সভাপতি প্রফেসর ড. মোঃ মিজানুর রহমান বলেন, “তিনি (মাহবুবা সিদ্দিকা) যদি সত্যিই এসব কথা বলে থাকেন, তাহলে আমি বলব তার আচরণ একজন শিক্ষিকার মতো ছিল না।” এটা খুবই নিন্দনীয়। ছাত্রজীবনে তিনি কী ছিলেন তার পরিচয় দিতে হবে না।
তিনি আরও বলেন, ‘শিক্ষার্থীরা অপরাধ করলে শাস্তি দিতে পারেন। কিন্তু ছাত্রজীবনের পরিচয় দিয়ে একজন শিক্ষার্থীকে এভাবে হুমকি দেওয়ার অধিকার তার নেই। শিক্ষক হিসেবে শিক্ষার্থীদের সহনশীল হতে হবে। এ ঘটনার প্রতিবাদ জানাই। পাশাপাশি ঘটনার তদন্ত করে যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য প্রশাসনের কাছে দাবি জানাচ্ছি।
বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর অধ্যাপক ড. জাহাঙ্গীর হোসেন বলেন, ভুক্তভোগী শিক্ষার্থীর সঙ্গে কথা বলে আমরা বিস্তারিত শুনেছি। খালেদা জিয়া হলের হাউস টিউটর নাজমুল হুদাকে প্রধান করে তিন সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। কমিটির অন্য দুই সদস্যরা হলেন- হলের হাউজ টিউটর নাহিদা আক্তার ও মেহেদী হাসান।’ খালেদা জিয়া হলের প্রভোস্ট অধ্যাপক ড. ইয়াসমিন আরা সাথী এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
এদিকে শিক্ষার্থীর মধ্যে এ ঘটনায় নানা ধরনের প্রতিক্রিয়া দেখা দিয়েছে। অনেকে বলছেন, তিনি একজন শিক্ষিকা হয় ছাত্রীদের সাথে এরকম আচরণ কোনোভাবে শোভনীয় নয়। তিনি শিক্ষার্থীদের উপর তার ক্ষমতার প্রভাব দেখাবেন, এটা কখনো আশা করা যায় না। তিনি যেটা করেছেন, সেটা একজন শিক্ষিকার আদর্শ হতে পারে না বলেও জানান অনেক শিক্ষার্থী।