বিষয়টি অনেকের কাছে অবাক করা হলেও বাস্তবেই এমনই একটি আশ্চর্যজনক ঘটনা ঘটে থাকে সুরগানা তালুকের ছোট গ্রাম দান্ডিচি বারি’তে। যেখানে বিয়ের মাত্র দুই থেকে তিন দিনের মধ্যেই ওই গ্রাম ছেড়ে পালিয়ে যান অধিকাংশ নববধূরা। খোঁজ নিয়ে জানা যায়, আলোচিত ওই গ্রামে মাত্র ৩০০ জনের বাস।
তবে এই গ্রামে কোনো পুরুষের বিয়ে হলে আনন্দ করার বদলে প্রমাদ গোনেন সেই পরিবার এবং গ্রামের বাকিরা।
এই গ্রামের অনেক পুরুষই জানেন না বিবাহিত হয়েও সুখী দাম্পত্য জীবন কেমন। কারণ এই গ্রামের বেশির ভাগ নারীই বিয়ের পর বাড়ি থেকে পালিয়ে যায়। কিন্তু তা সেরকম নয়। এই গ্রামের বধূরা বিশেষ কারণে বিয়ের পর শ্বশুরবাড়ি ছেড়ে যায়। ডান্ডিচি বাড়ি গ্রামের বাসিন্দারা সারা বছরই পানির সমস্যায় ভোগেন। যারা এই গ্রামে বেড়ে উঠেছেন তারা পানির তীব্র সংকট সত্ত্বেও এই জীবনে অভ্যস্ত।
কিন্তু বাইরে থেকে যারা এ গ্রামে আসেন তারা সমস্যায় পড়েন। আর তাদের অধিকাংশই নবদম্পতি। শ্বশুর বাড়িতে কিছুদিন কাটানোর পর তারা পানির সংকটে এতটাই আতঙ্কিত হয়ে পড়েন যে গ্রামে থাকতে চান না। সে তার বিয়ে-স্বামী শ্বশুরবাড়ি ছেড়ে বাপের বাড়ি ফিরে যেতে চায়। এই গ্রামের বাসিন্দা গোবিন্দ ওয়াঘমারে এমনই একটি বিয়ের কথা বলেছিলেন, যেটি মাত্র দুই দিন স্থায়ী হয়েছিল।
গোবিন্দ জানান, ২০১৪ সালে গ্রামের এক ব্যক্তির বিয়ে হয়। সেই বিয়ে টিকেছিল মাত্র দুদিন। বিয়ের দুই দিন পর স্বামীর বাড়ি ছেড়ে চলে যান কনে। এ ঘটনা ব্যাপকভাবে মানুষের মধ্যে ছড়িয়ে পড়ে। নববধূ গ্রামের বাকি গৃহিণীদের নিয়ে পাহাড়ে নেমেছিল জল আনতে। একদিন পানি আনতে গিয়ে বুঝলেন এই গ্রামে বসবাস করা কত কঠিন। গ্রামের নারীদের পানি আনতে অনেক দূর যেতে হয়।
কনে বুঝতে পেরেছিল যে সে গ্রামে থাকলে তার জীবন কঠিন হবে। পালানো ছাড়া উপায় নেই। তাই জল আনার সময় জলের কলসটা সেখানে রেখে নববধূ দৌড়ে বাপের বাড়ি চলে গেল। প্রতি বছর গ্রীষ্মের সময় অর্থাৎ মার্চ থেকে জুন মাসে পাহাড়ের নিচের প্রায় শুকনো নদী থেকে পানি আনতে এ গ্রামের নারীদের দেড় কিলোমিটার হেঁটে যেতে হয়। শুকনো নদীর সামনের পাথরের ফাটল থেকে গ্রামের গৃহিণীদের পানি আনতে হয়। নদীর পাড়ের পাথরের ফাটলে হাত রেখে বাটি দিয়ে পানি নিয়ে পাত্রে ভরতে হয়।
ফাটলের ভেতরের পানি বের হয়ে গেলে আবার পানি ভর্তি হওয়ার জন্য নারীদের ঘণ্টার পর ঘণ্টা অপেক্ষা করতে হয়। এরপর পাহাড়ে উঠে মাথায় দুটি হাঁড়ি রেখে গ্রামে ফিরতে হয়। গ্রামের মহিলারা দিনে দুবার পাহাড়ে পানি আনতে যায়। ভোর ৪টা থেকে শুরু হয় পানি আনার লড়াই। একবার পানি আনার পর বিকেলে আবার পানি আনতে হয়। গ্রীষ্মের বেশিরভাগ দিনই ৪০ ডিগ্রি সেলসিয়াসের উপরে থাকে। সেই গ্রীষ্মে গ্রামের নারীদের পাথুরে রাস্তা দিয়ে হেঁটে যেতে হতো।
গ্রামের বাসিন্দা লক্ষ্মীবাই ওয়াসলে বলেন, একটি কলসি পূরণ করতে তিন ঘণ্টা পর্যন্ত সময় লাগতে পারে। পানি ভর্তি হতে প্রায়ই রাত হয়ে যায়। রাতের আঁধারে বন্য প্রাণীর আক্রমণের আশঙ্কাও রয়েছে। আর এ কারণেই তারা রাতে টর্চ জ্বালিয়ে বাড়ি ফেরে। গ্রামের মহিলারা মাথায় দুটি কলসি আর হাতে মশাল নিয়ে খাড়া রাস্তা ধরে বাড়ি ফেরে। শুধু পানি আনাই নয়, নারীদের ঘরের অন্যান্য কাজও করতে হয়।
আর এমনই কষ্টকর জীবন বেছে নেয়া থেকে মুখ ফিরিয়ে নেন নারীদের অনেকেই। ফলে বিয়ের মাত্র দুই থেকে তিন দিনের মধ্যেই এই গ্রাম থেকে পালিয়ে যেতে বাধ্য হন নববধূরা। খুবই হাত গোনা কয়েকজন সেখানে থাকলেও, তাদের কষ্টের যেন কোন শেষ নেই।