দেশের সঙ্গীত জগতের বহুল আলোচিত ও জনপ্রিয় শিল্পী হায়দার হোসেন। তিনি দীর্ঘ সময় ধরে গানের জগতের সঙ্গে যুক্ট রয়েছে। এবং অসংখ্য গান করেছেন। তার গাওয়া গান গুলো দর্শক মাঝে বেশ সাড়া ফেলেছে। ৯ অক্টোবর ছিল এই জনপ্রিয় শিল্পীর জন্মদিন। এই বিশেষ দিনকে ঘিরে তার সঙ্গে কথোপকথান হয়েছে গান ও সমসাময়িক নানা বিষয় নিয়ে।
তিন দশকেরও বেশি সময় ধরে ব্যতিক্রমী গান করার কারণেই শিল্পী হায়দার হোসেন শ্রোতাদের কাছে ভীষণ জনপ্রিয়। গানে গানে তিনি তুলে ধরেন আমাদের জীবনের নিত্যনৈমিত্তিক ঘটনা। ৯ অক্টোবর ছিল তাঁর জন্মদিন। গান ও সমসাময়িক নানা কাজ নিয়ে তার সঙ্গে কথা বলেন- আলী আফতাব
জন্মদিন কেমন কাটল আপনার?
এই বয়সে আর জন্মদিন। আমি এখন আছি চট্টগ্রামে। তারপর যাব কক্সবাজারে। সেখানে কিছু সময় কাটিয়ে ঢাকা ফিরে আসব।
কিছু দিন আগে ‘ভাবতে কি লাগে ভালো’ শিরোনামের একটি গান প্রকাশ করেছিলেন। কেমন সাড়া পাচ্ছেন?
আমার এই গানের প্রথম দুটি লাইন শুনলেই বুঝতে পারবেন, আমি কাদের নিয়ে গানটি লিখেছি। এ সময় নিম্নমধ্যবিত্ত মেয়েরা যেসব ভুল করছে, তারই প্রতিচ্ছবি ফুটে উঠেছে এ গানের মধ্য দিয়ে। আমি ধন্যবাদ জানাই কমলকে। তার কারণে এমন একটি গান করতে আমি সাহস করেছি। একটা গানের যে গল্প আছে তা কমল তাঁর গিটারের সুরে ফুটিয়ে তুলেছেন।
আবার নতুন গান কবে আসবে?
গানটা আমি শখে করি। আমার প্যাশন অন্য কিছু। তা ছাড়া গান লেখা, সুর করা, গাওয়ার পর যদি সেটাকে প্রোমোট আমাকেই করতে হয়, সেটা মেনে নেওয়া যায় না। আমি মনে করি, নিজের গান নিজে প্রোমোট করা শিল্পীর কাজ নয়। আমার গান আমার বাসায় পড়ে থাকে। প্রোমোট করা মিডিয়ার কাজ, এটা আমরা পারি না। আমার পক্ষে মিডিয়ার কাছে গিয়ে বসে থাকা সম্ভব নয়। আর এখন গান করা একটা মুশকিলের ব্যাপার। গান করলেই ভিডিও করতে হয়। এসব করতে চাইনি। মনে হয়েছে গান নিয়ে এত ঝামেলা কে করে!
প্রোমোশন নিয়ে আপনি মনে হচ্ছে বেশ হতাশ?
প্রোমোশনের দায়িত্ব অনেককেই দিয়েছিলাম, কিন্তু কারও কাজই মনের মতো হয় না। বলে একটা, করে একটা। আমাদের দেশে এ ব্যাপারগুলোয় পেশাদারি তৈরি হয়নি। একজনকে কিছু একটা দিলাম, নাই হয়ে গেল, আরেকজনকে দিলাম, নাই হয়ে গেল। আমি এগুলো পছন্দ করি না। মনে হয়, এর চেয়ে ভালো গান না করা, নিজের মতো থাকা। আমরা যারা গান করি, তারা কেবল গানটাই করি। মার্কেটিং করা আমাদের কাজ না।
আপনার প্রতিটি গানই তো কোনো না কোনো প্রেক্ষাপট নিয়ে… বিভিন্ন বিষয় তুলে ধরেছেন… এটা তো ভীষণ কঠিন কাজ- আপনি কীভাবে নিজেকে চালনা করতেন?
যে কোনো গানই লেখা হয় তখন কোনো ধরনের প্রেক্ষাপট ছাড়া লেখা হয় না। কোনো না কোনো বিষয় থাকেই। বিষয়টা আসলে এরকমও না আমার মন চেয়েছে আমি গান লিখেছি। আমি আগেও বলেছি আমি পেশাদার কেউ না। কোনো ঘটনা যদি আমাকে ভাবায় কিংবা কোনো থিম যদি আমার মাথায় আসে-সেটি নিয়ে গান করা যায়।
গান লেখেন সুরও করেন; গান লেখার আগে কী কী বিষয় ভাবেন?
গানটা লেখার পর এর লিরিকই বলে দেয়, এর সুরটা কেমন হবে। সেভাবেই তৈরি করা হয়। খুশির গান হলে খুশির সুর, আর দুঃখের গান হলে দুঃখের সুর হতে হবে। গান তো ৫ মিনিটের মধ্যে ১০ কিংবা ১৫টা লাইন তুলে ধরতে হয়। গান কিন্তু অনেক কথা বলে। এটা কমপ্যাক্ট একটা বিষয়। আর এর কথাগুলো বোঝানোর জন্য আমরা এর সুর আরোপ করি। আরও নির্দিষ্ট করে বলার জন্য আমরা বিভিন্ন ধরনের বাদ্যযন্ত্র ব্যবহার করি।
এখন তো অনলাইন মাধ্যমগুলোতে গান প্রকাশ হচ্ছে, আপনি কীভাবে দেখেন?
আমি আসলে এ বিষয়ে বলতে পারব না। কারণ এখন আমি খুব একটা গানের খোঁজখবর রাখি না। এখন কী রকম গান হচ্ছে; কিংবা কারা গান করছে এসব বিষয়েও আমি আসলে জানি না। আর আমি গান শুনি না বহু বছর ধরে। অন্যান্য কাজ নিয়ে ব্যস্ত থাকি। আগে শুনতাম। যখন বয়স কম ছিল। তখন দিনের বড় একটা সময় গান শুনে কাটাতাম।
কীভাবে সময় কাটাচ্ছেন?
ব্যবসা নিয়ে ব্যস্ততা আছে। বাইরে যাওয়ার তো উপায় নেই, আপাতত ফোনে ফোনে কাজ করছি। বাসায় থাকি, স্ত্রীর সঙ্গে গল্প করি।
এই জনপ্রিয় শিল্পী দীর্ঘ সময় ধরে সঙ্গীত অঙ্গনের সাথে যুক্ত থাকেলও তিনি বাংলাদেশ বিমান বাহিনীতে একজন বিমান প্রকৌশলী হিসেবে কর্মজীবন শুরু করেন। তিনি মূলত নিজেই গানে কণ্ঠ দেন এবং পরিচালনা করেন।