নতুন নির্বাচন কমিশন নিয়ে অনেকের মধ্যে নানা মিশ্র প্রতিক্রিয়া তৈরি হয়েছে এবং এই নির্বাচন কমিশনের অ্ধিনে আগামী নির্বাচন সম্পন্ন হবে এই বিষয়টি নিয়ে বেশ আলোচনা সমালোচনা চলছে তবে এই বিষয় নিয়ে প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কাজী হাবিবুল আউয়াল বলেছেন, নজদারিতে রাখতে হবে, যে আমরা কি আসলেই সাধু, নাকি ভেতরে ভেতরে অসাধু। মঙ্গলবার (২৬ জুলাই) নির্বাচন ভবনে জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম বাংলাদেশ’র সঙ্গে সংলাপে বসে তিনি এমন মন্তব্য করেন।
সিইসি বলেন, আমাদের ওপর আস্থা রাখেন। আস্থা রাখতে গিয়ে চোখ বন্ধ রাখলে হবে না। নজদারিতে রাখতে হবে, যে আমরা কি আসলেই সাধু, নাকি ভেতরে ভেতরে অসাধু। সেইটা যদি আপনারা নজর না রাখেন, তবে আপনাদের দায়িত্ব পালন হবে না। নির্বাচন নির্বাচনের আইন অনুযায়ী হবে। সময় মতো হবে। ভোটাররা যাবেন, ভোট দিতে যাবেন। আমরা আমাদের দায়িত্ব সর্বশক্তি দিয়ে পালন করার চেষ্টা করবো। আপনারাও কিছু দায়িত্ব নেবেন। অর্থ শক্তি, পেশি শক্তি মোকাবেলা ও ভোটকেন্দ্রের শৃঙ্খলা রক্ষা করার জন্য বেশি দায়িত্ব নেবেন। আমরা শেয়ার করবো দায়িত্বটা।
কাজী হাবিবুল আউয়াল, ইভিএম নিয়ে আমরা এখনো কোনো সিদ্ধান্ত নিইনি। তবে ব্যালট পেপারে যে অসুবিধা, ব্যালটা ছিঁড়ে সিল মেরে দেয়। বাংলাদেশে যে নির্বাচনগুলো অতীতে হয়েছে, ৭৩ সালে নির্বাচন হয়েছে, এরপর সামরিক শাসনের সময় নির্বাচন হয়েছে। সমস্ত মানুষ ফসল কাটছে ৯৮ শতাংশ, ৯৫ শতাংশ ভোট পড়েছে। হা-না ভোট হয়েছে। কাগজের যে সমস্যাটা, আমি নিজেও বাক্স পুড়িয়ে দিতে পারি। ইভিএমে লাঠি দিয়ে, হকিস্টিক নিয়ে ভেঙ্গে ফেলতে পারবেন, কিন্তু ওখানে ভোট নষ্ট হবে না।
তিনি বলেন, একটা কেন্দ্র দখল করে একজন লোক যদি একশটা করে পাঁচজন লোক যদি পাঁচশটা ভোট দেয়, লোক হলো পাঁচ জন, ভোট পড়ল পাঁচশ। তাহলে ভোটের হার তো অনেক বেশি। তো বিভিন্ন জায়গায় সমস্যা আছে। আমি যেটা বলতে চাচ্ছি সমস্যাগুলো আমরা ব্যালেন্স করে যতদুর সম্ভব একটা অর্থবহ এবং নিরপেক্ষ, যতদুর সম্ভব দুর্নীতি মুক্ত নির্বাচন করা সম্ভব সে কথাই আমাদের।
তিনি আরও বলেন, অর্থশক্তিকে কিভাবে সামাল দেবো, একটা বুদ্ধি দেন। এই অর্থ নিয়ন্ত্রণ করবো কিভাবে? কাগজে-কলমে পাঁচ লাখ টাকা করা হলেও যদি প্রকৃত খরচ পাঁচ কোটি টাকা হয় কিভাবে আমি আপনাকে ধরবো, আপনি আমাকে কিভাবে ধরবেন। এটা সম্ভব। এজন্য সামাজিক আন্দোলন গড়ে তুলতে হবে।
সিইসি বলেন, আমাদের চর্চাটা অপসংস্কৃতি হয়ে গেছে। পয়সা ঢালতেছে। মাস্তান ভাড়া করতেছে। একজন প্রফেশনাল কিলারকে হায়ার করতে খুব বেশি পয়সা লাগে না, আজকাল যেটা হয়েছে। এই সংস্কৃতি থেকে বেরিয়ে আসার জন্য সকলকে সামাজিক আন্দোলন করতে হবে। মাঠ আপনাদের থাকতে হবে। আমাদের তথ্য দিলে আমরা আপনাদের সাহায্য করবো। আমরা প্রতিশ্রুতি দিচ্ছি এই প্রতিশ্রুতির কিছু মূল্য থাকা তো উচিত। একেবারে যে আমরা ডিগবাজী খেয়ে যাবো তাতো না। সেটা হওয়ার কথা নয়।
সিইসি আরও বলেন, আমরা কোনো কিছুতেই মাইন্ড করি না। আপনারা আমাদের সমালোচনা করবেন কঠোরভাবে। এটাও কিন্তু বলে রাখছি আমাদের নজরদারিতে রাখতে হবে। কোনো অনিয়ম ধরা পড়লে প্রকাশ করে দেবেন। আমরা কোনোভাবেই পক্ষপাতিত্ব করতে চাইনা। কমিশনের পক্ষে থেকে এই প্রতিশ্রুতি দিচ্ছি। আমাদের চাপে অবশ্যই রাখবেন। আমাদের সতর্কতা সজাগ থাকবে। আমাদের ওপর অনাস্থা থাকতেই পারে। সেই অনাস্থা আমাদেরই দুর করতে হবে কাজের মধ্য দিয়ে।
নির্বাচন কমিশনার বেগম রাশেদা সুলতানা বলেন, আস্থা পাওয়ার জন্য আমরা অবশ্যই চেষ্টা করে যাবো। আপনারা একটু শুধু করেন আমরা আস্থার জন্য কাজ করছি কি-না। আপনারা চোখ-কান খোলা রাখেন, দেখেন আমরা কতটুকু করতে পারি। ভুল হলে ধরিয়ে দেন।
তিনি বলেন, পেপার-পত্রিকায় যা দেখছি, তাতে মনে হচ্ছে আমরা কিছুই করছি না। মনে হচ্ছে যে যাবে বৃন্দাবন, সেই হবে রাবণ। আপনারা যদি একটু ফিডব্যাক দেন তাহলে আমরা আরেকটু উজ্জীবিত হই। আমাদের কতটুকু ইতিবাচক, কতটুকু নেতিবাচক; তা যদি বলেন তাহলে আমরাও বলতে পারি যে জনগণের কাছে আমাদের কাজ পৌঁছে গেছে। নিজেদের কাজ নিজেদের কাছে বোঝা কঠিন। আমরা আস্থা অর্জনের চেষ্টাই করছিনা এই চিন্তা থেকে আপনারা একটু বেরিয়ে আসুননা।
নির্বাচন কমিশনার আহসান হাবিব খান বলেন, আমাদের আপ্রাণ চেষ্টা থাকবে ব্যালট পেপার ছিনতাইয়ের মতো ঘটনা প্রতিহত করার জন্য। একজন মা যদি ভিডিও কলে তার ছেলের সঙ্গে কথা বলতে পারেন তবে ইভিএম একটি মাত্র চাপ দিয়ে ভোট দিতে পারবেন না? ইভিএম মেশিন নিয়ে অবিশ্বাস থাকা উচিত না। এর পেছনে যারা আছে, আমি আছি, আমাকে অবিশ্বাস করতে পারেন। আমাদের অভিজ্ঞতা যা, আপনারা যা বললেন আই ওয়াশ। আমি জানি, আল্লাহ তো জানেন আই ওয়াশ কি-না।
নতুন প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি)দ্বায়িত্ব নেওয়ার পর থেকেই নানা আলোচনা এবং নানা মত রয়েছে অনেকেই পক্ষে বিপক্ষে কথা বলছেন।এর মধ্যে ইভিএম নিয়েও আছে নানা মতবিরোধ। তবে সিইসি বলেছেন ইভিএম নিয়ে অবিস্বাস করার কোন অবকাশ নেই।