বাংলাদেশের রুপালী পর্দার বহুল আলোচিত ও জনপ্রিয় অভিনেতা রিয়াজ আহমেদ। গতকাল এই অভিনেতা জীবনের ৪৯ বছর অতিক্রম করে ৫০ বছরে যাত্রা শুরু করেছেন। এবং তার অভিনয় জীবনের ২৬ বছর হয়েছে। তিনি তার ক্যারিয়ারে অর্জন করেছেন ব্যপক সফলতা এবং সম্মাননা। জন্মদিন উপলক্ষ্যে বেশ কিছু কথা জানালেন এই অভিনেতা।
৪৯ শেষ করে আজ ৫০–এ পা দিলেন চিত্রনায়ক রিয়াজ আহমেদ। অভিনয়জীবনের বয়স হলো ২৬। ১৯৯৫ সালের ৩ মার্চ মুক্তি পায় প্রথম ছবি ‘বাংলার নায়ক’। মাঝে অভিনয়ে বিরতি নিয়েছিলেন। বিরতি ভেঙে সম্প্রতি দুটি সিনেমার অভিনয়ে ফিরেছেন তিনি। ‘বঙ্গবন্ধু’ ও ‘অপারেশন সুন্দরবন’ চলচ্চিত্রের শুটিংয়ের অভিজ্ঞতা এবং জন্মদিনসহ নানা প্রসঙ্গে কথা হলো তাঁর সঙ্গে।
শুভ জন্মদিন।
ধন্যবাদ।
জন্মদিনের অনুভূতি কী?
জন্মদিন এলে তো ভালোই লাগে। এখন তো আমার চেয়ে আমার পরিবারের উৎসাহটাই বেশি। আমার জন্মদিন নিয়ে তার ভাবনাচিন্তা ও পরিকল্পনার শেষ নেই।
আপনার মেয়ের বয়স কত হলো?
ছয় বছর। সে এবারের জন্মদিনে আমার জন্য কার্ড বানিয়েছে। আবার অনেক কিছু তার মাকে বলে আদায়ও করেছে, বাবার যা যা কিছু পছন্দ, তা-ই করেছে। দীর্ঘ পরিকল্পনা। মেয়ের কাছ থেকে সারপ্রাইজ হওয়াটাই সেরা অনুভূতি।
জন্মদিন একই সঙ্গে ফেলে আসা দিন, অন্যদিকে অনিশ্চিত আগামীর শুরু। এসব কি ভাবায়?
ফেলে আসা দিনের কথা কখনো ভাবতে চাই না। আগামী নিয়েও ভাবি না। আমি সব সময় বর্তমান নিয়ে ভাবতে পছন্দ করি। আমি মনে করি, লাইফ ইজ বিউটিফুল। সৃষ্টিকর্তা আমাকে আলহামদুলিল্লাহ অনেক ভালো রেখেছেন। এখন তো কোভিডের মধ্যে সবাই বাজে পরিস্থিতি পার করছি। এরপরও সুস্থ আছি, ভালো আছি—যেখানে আমাদের অনেক ভাই-বোনকে হারিয়েছি। আমি নিজেও কোভিড সারভাইবার। সুস্থভাবে বেছে আছি, এটাই বড় ব্লেসিংস।
আপনার অভিনয় কমিয়ে দেওয়া নিয়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে মাঝেমধ্যে আলোচনা হয়। অভিনয়ে আপনাকে আর নিয়মিত পাওয়া যাবে না?
আমিও চাই অভিনয়টা করতে। অভিনয়টাই আমাকে মানুষের কাছে এনেছে। অভিনয়টাই আমার প্রতি মানুষের ভালোবাসার জন্ম দিয়েছে। আমিও জানি না পরিচালকেরা কেন সে রকম ভালো গল্পের প্রস্তাব নিয়ে আসছেন না। গল্প নিয়ে আসছে না যে তা কিন্তু নয়, তবে আমি কনভিন্সড হচ্ছি না। বর্তমান সময়ের ভাবনা নিয়েই তো আসতে হবে। আমাদের দেশে একটা ট্রেন্ড তৈরি হয়েছে, সবার প্রতি শ্রদ্ধা রেখেই বলতে চাই, শিল্পীদের একটু বয়স হলেই আনুদা (আনোয়ার হোসেন) মনে করেন। বিষয়টা এমন, চলচ্চিত্রে একটা চরিত্র থাকবে, যে প্রতিবাদ করবে, একটা সময় মারা যাবে, তার পুত্র রিভেঞ্জ নেবে—ইটজ আ প্যাটার্ন। এই জাতীয় চলচ্চিত্র তো করতে চাই না। ভালো গল্প থাকবে, চরিত্রের গুরুত্ব থাকবে—তা না হলে কীভাবে কী। আমরা তো এখন স্ক্রিপ্ট পড়লেই বুঝতে পারি, গল্পে কী আছে না আছে। দীর্ঘ সময় অভিনয়ে যুক্ত থাকায় একটা আন্ডারস্ট্যান্ডিং তো তৈরি হয়েছে। আমরা যেটা বুঝি, সেটার সঙ্গে হয়তো শুরুতে পরিচালক একমত পোষণ করেন না কিন্তু পরে দেখেন যে ঠিকই আছে।
আপনার মুক্তিপ্রাপ্ত সর্বশেষ চলচ্চিত্র ‘কৃষ্ণপক্ষ’। এরপর ‘বঙ্গবন্ধু’ ও ‘অপারেশন সুন্দরবন’ চলচ্চিত্রে কাজ করা পর্যন্ত লম্বা বিরতি।
‘কৃষ্ণপক্ষ’ চলচ্চিত্রে অভিনয়ের আগেও বিরতি ছিল। ‘কৃষ্ণপক্ষ’ চলচ্চিত্রে অভিনয় করি অনেক দিন পর। তার আগপর্যন্ত তেমন কোনো গল্প পাইনি, যা আমাকে কনভিন্সড করতে পেরেছে। আমার কাছে এমন কোনো পরিচালক আসেননি, যাঁর ছবি করা যায়।
‘বঙ্গবন্ধু’ ও ‘অপারেশন সুন্দরবন’ চলচ্চিত্রে শুটিংয়ের অভিজ্ঞতা কেমন?
খুবই চমৎকার। বিশেষ করে ‘বঙ্গবন্ধু’ চলচ্চিত্রে কাজ করে তো আমি মুগ্ধ। কাজের পুরো সিস্টেম তো অসাধারণ লেগেছে। একসঙ্গে ১২০০ শিল্পী নিয়েও দৃশ্য ধারণ করা হয়েছে, তবে পরিবেশ ছিল খুবই সুশৃঙ্খল। শিল্পীর কলটাইম মানে কলটাইম, এক সেকেন্ডের এদিক-সেদিক নেই। ভারতীয় কলাকুশলীদের সঙ্গে শুটিংয়ের অভিজ্ঞতা আগেও আছে। তবে এবারের পরিবেশ ভিন্ন, পরিসরও অনেক বড়। তাই তো বাংলাদেশ ও ভারতের শুটিংয়ের মধ্যে কিছু পার্থক্য চোখে পড়েছে। প্রথম পার্থক্য মনে হয়েছে, আমরা বড় করে চিন্তা করতে পারি না। বাজেটও এখানে বড় ফ্যাক্টর। অভ্যস্ত না থাকায় আবার বাজেট দিলেও ঠিকমতো কাজে লাগাতে পারে না। কনফিউজড হয়ে যায়। আমার কাছে তো পুরো শুটিং সময় অন্য রকম অভিজ্ঞতায় পরিপূর্ণ ছিল। তাঁরা পরিষ্কার জানেন, তাঁরা কী করতে চান। সবকিছুই আগে থেকেই সেট করা, প্ল্যান অনুযায়ী করেছেন। চলচ্চিত্রের প্রতিটি বিভাগের মধ্যে যে অসাধারণ সমন্বয়, তা থেকেও অনেক কিছু শেখার আছে। পেশাদার ইউনিট, পেশাদারভাবেই কাজ করে।
‘বাংলার নায়ক’ সিনেমার মধ্যে দিয়ে বিনোদন ঝতে যাত্রা শুরু করেন এই অভিনেতা। বর্তমান সময়ে তিনি সিনেমার পাশাপাশি নিজের ব্যবায় নিয়ে ব্যস্ত সময় পার করছেন। তিনি তার অভিনয় জীবনে অসংখ্য নাটক এবং সিনেমায় কাজ করেছেন। তার অভিনীত সিনেমা গুলো দর্শক মাঝে ব্যপক সাড়া ফেলেছে এবং ব্যবসা সফল হয়েছে। তিনি তরা কর্মের মধ্যে দিয়ে সফলতার শীর্ষ স্থান দখল করতে সক্ষম হয়েছেন।