গতকাল বুধবার (১৫ জুন) কুমিল্লা সিটি করপোরেশন (কুসিক) নির্বাচনে দিনভর সুষ্ঠু পরিবেশ লক্ষ্য করা গেলেও সন্ধা নামতেই যেন পাল্টে যায় ভোটের গোটা পরিবেশ। প্রথমে এগিয়ে থাকলেও নির্বাচনের ফলাফল প্রকাশ পেতেই যেন চোখ কপালে উঠে যায় গত দুইবারের মেয়র মো. মনিরুল হক সাক্কুর। কুসিক নির্বাচনে আওয়ামী লীগ প্রার্থী আরফানুল হক রিফাতের কাছে হেরে যান সাক্কু।
তবে তার পরাজয়ের কারণ নিয়ে চলছে নানান বিশ্লেষণ। সাক্কু আট কারণে পরাজিত হয়েছেন বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা।
দলীয় সমর্থনের অভাব:
সাক্কু বিএনপির রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত। কিন্তু এই নির্বাচনে বিএনপি তাকে সমর্থন করেনি। বরং সাক্কুকে বহিষ্কার করা হয়েছে। ফলে দলের সমর্থন ছাড়াই স্বতন্ত্র মেয়র প্রার্থী হন তিনি। দলীয় সমর্থন না পাওয়ায় তিনি বিএনপির ভোটব্যাংক থেকে বঞ্চিত হন।
বিএনপির ভোট ভাগ:
একদিকে দলীয় সমর্থন না পেলেও সাক্কু অন্যদিকে বিএনপির ভোটে অংশীদার আরেক প্রার্থী মোহাম্মদ নিজাম উদ্দিনের মুখোমুখি হতে হয়। তবে নিজাম উদ্দিনকেও বহিষ্কার করে বিএনপি। তবে ঘোড়া প্রতীকে নিজাম উদ্দিন পেয়েছেন ৩০ হাজার ভোট। নিজাম উদ্দিন প্রার্থী না হলে এই ৩০,০০০ ভোটের বেশির ভাগই পেতেন সাক্কু। এটি তার পরাজয়ের আরেকটি কারণ বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা।
নেতারা মাঠে নামবেন না:
সাক্কু তার দলের ঘনিষ্ঠ নেতাদের প্রকাশ্যে মাঠে নামতে পারেননি। ফলে নেতাদের ঘনিষ্ঠ ভোট থেকে বঞ্চিত হয়েছেন তিনি। নেতারা না আসায় তাকে একাই নির্বাচনে যেতে হয়েছে। মনিরুলকে আজীবনের জন্য দল থেকে বহিষ্কার করায় দলের পক্ষ থেকে কোনো ধরনের প্রচারণায় অংশ না নেওয়ার কঠোর নির্দেশনা ছিল। ফলে দলের কোনো নেতার জনসমর্থন পাননি তিনি।
অনিয়মের অভিযোগ:
মনিরুলের দুই মেয়াদে মেয়র থাকাকালে সিটি করপোরেশনের বিভিন্ন কাজে অনিয়মের অভিযোগ রয়েছে। বিরোধী দলগুলো উপনির্বাচন বয়কটের ডাক দিয়েছে। ফলে সাক্কুর ভোট কিছুটা কমেছে।
জলাবদ্ধতা ও যানজট:
কুমিল্লা সিটি নির্বাচনে জলাবদ্ধতা ও যানজট গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে। সাক্কু দুইবার মেয়র হলেও জলাবদ্ধতা ও যানজটের সমাধান হয়নি। ফলে ভুক্তভোগীরা সাক্কুর ছাড়া অন্য কাউকে বেছে নিয়েছেন।
এমপির বিরোধিতা:
কুমিল্লা-৬ আসনের সংসদ সদস্য একিউএম বাহাউদ্দিনের সমর্থন না পাওয়া মনিরুল এবারের নির্বাচনে পরাজয়ের কারণের তালিকায় রয়েছেন। স্থানীয় এমপি নেতাকর্মী ও শুভানুধ্যায়ীদের ভোট পেলে সহজেই জয়ী হতে পারতেন সাক্কু।
কর্মী ঘাটতি:
সাক্কু মূলত বিএনপির নেতা। ফলে তার ক্যাডাররাও বিএনপির রাজনীতিতে জড়িত। তাকে দল থেকে বহিষ্কার করায় ওই কর্মীরা আর তার সঙ্গে থাকেননি। ফলে সাক্কু একাই পড়ে যায়। পুরো নির্বাচনী দ্বন্দ্ব কাটিয়ে উঠতে তাকে একাই লড়াই করতে হয়েছে।
প্রচারের ঘাটতি:
নেতাকর্মীদের সমর্থন হারিয়ে একাই লড়েছেন সাক্কু। ফলে তার নির্বাচনী প্রচারণা ছিল দুর্বল। বিরোধী দলগুলি উপনির্বাচন বয়কটের ডাক দিলেও সাক্কুর পক্ষে তেমন সমর্থন ছিল না। ফলে বিরোধীদের প্রচারণার জবাবে ভোটারদের কাছে পৌঁছাতে পারেননি সাক্কু।
উপরে উল্লেখিত এই ৮ কারনে কুমিল্লা সিটি করপোরেশন নির্বাচনে সাক্কুর হেরে যাওয়ার অন্যতম কারন বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা। এর আগে দলের নির্দেশ না মেনে নির্বাচনে অংশ নেয়ায় বিএনপি থেকে বহিষ্কার হতে হয় সাক্কুকে। আর এবার নির্বাচনে যেন হতাশাগ্রস্থ হয়ে পড়েছেন তিনি।