ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) সাময়িক বরখাস্ত অতিরিক্ত উপ-কমিশনার (এডিসি) মোহাম্মদ হারুন অর রশিদের সঙ্গে এডিসি সানজিদা আফরিনের ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক ছিল গোপন! স্পর্শকাতর এই বিষয়টি নিয়ে দীর্ঘদিন ধরে সানজিদা ও তার স্বামী আজিজুল হক মামুনের মধ্যে দাম্পত্য কলহ চলছিল। পরিবার কয়েকবার সমাধানের চেষ্টা করেও ব্যর্থ হয়। হারুন ও সানজিদার অবস্থান জানতে পেরে শনিবার রাতে রাজধানীর শাহবাগের ইব্রাহিম কার্ডিয়াক হাসপাতালে ছুটে যান আজিজুল হক মামুন। ডেকেছেন কেন্দ্রীয় ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের নেতারা। এরপরই ঘটে মর্মান্তিক ঘটনা। কথাগুলো বলেছেন ডিএমপির একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা মো. বিষয়টি তদন্তাধীন থাকায় নাম প্রকাশে রাজি হননি তিনি। অন্যদিকে, এডিসি হারুনই প্রথম হাত তুলেছেন বলে ডিএমপি দাবি করলেও অনেকেই তাতে দ্বিমত পোষণ করেন। তারা বলছেন, এপিএস আজিজুল যদি এডিসি হারুনকে মারধর করেন, তাহলে আজিজুলের পরিবর্তে ছাত্রলীগের দুই কেন্দ্রীয় নেতাকে থানায় নিয়ে মারধর করা হলো কেন?
বরখাস্ত ডিএমপির রমনা জোনের সাবেক এডিসি হারুন-অর-রশিদকে রংপুর রেঞ্জের ডিআইজি কার্যালয়ে সংযুক্ত করা হয়েছে। গতকাল স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জননিরাপত্তা বিভাগের পুলিশ-১ শাখার এক প্রজ্ঞাপনে এ তথ্য জানানো হয়।
তদন্ত সূত্রে জানা গেছে, এডিসি হারুনকে স্ত্রীর পাশে দেখে নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে তার গায়ে হাত তোলেন এপিএস আজিজুল। ছাত্রলীগের সাবেক নেতা ও তার সঙ্গে থাকা বর্তমান নেতারা থাকায় আজিজুল এমন আচরণ করেন। তবে নির্ধারিত দুই দিনেও তদন্ত শেষ করতে পারেনি তদন্ত কমিটি। আরও দুই থেকে তিন দিন সময় লাগবে বলে জানিয়েছেন তদন্ত কমিটির সদস্য ডিএমপির নিউমার্কেট জোনের এডিসি মো. শাহেন শাহ বলেন, আমরা তদন্তের জন্য পাঁচ কার্যদিবস চেয়েছি। কারণ আমি তখনও উঠতে পারিনি।
এডিসি সানজিদা যা বললেন: একটি বেসরকারি টেলিভিশনের সাক্ষাৎকারে এডিসি সানজিদা আফরিন বলেন, তার স্বামী আজিজুল হক মামুন প্রথমে এডিসি হারুন অর রশিদকে আঘাত করেন। বেশ কয়েকদিন ধরে হৃদযন্ত্রের সমস্যায় ভুগছিলাম। ২০১৯ সাল থেকে, আমি উচ্চ রক্তচাপের ওষুধ খাচ্ছি।
সানজিদা বলেন, গত চার-পাঁচ মাস ধরে সমস্যা বেড়েছে। শনিবার ব্যাথা বাড়লে আমি ডাক্তার দেখাতে চাই কারণ আমার অবসর সময় আছে। আমি যে ডাক্তারকে দেখি সে দেশের বাইরে। যার পরিপ্রেক্ষিতে আমি এডিসি হারুন স্যারকে ইব্রাহিম কার্ডিয়াক হাসপাতালে একটি সিরিয়ালের ব্যবস্থা করতে বলি। তিনি ওসির মাধ্যমে সিরিয়াল সাজান। সন্ধ্যা ৬টার পর সেখানে গিয়ে দেখি, যে ডাক্তার অ্যাপয়েন্টমেন্ট নিয়েছিলেন তিনি কনফারেন্সে আছেন। হারুন স্যারকে বিষয়টি জানালে তিনি কাছাকাছি থাকায় হাসপাতালে আসেন। তিনি এসে ডাক্তারের ব্যবস্থা করলেন। তাকে দেখানোর পর বেশ কিছু পরীক্ষা দেন। ঘটনার সময় তিনি ইটিটি রুমে ছিলেন দাবি করে সানজিদা বলেন, ‘ইটিটি শেষ হওয়ার ১৫-২০ মিনিট পর বাইরে হট্টগোল শুনতে পাই। স্যার (এডিসি হারুন) চিৎকার করে প্রথম যে শব্দটি কানে আসে, ‘ভাই, আমার গায়ে হাত তুললেন কেন? তুমি আমার গায়ে হাত দিতে পারবে না। প্রথমে ভেবেছিলাম হয়তো অন্য কারো সাথে সমস্যা হয়েছে। কিন্তু কিছুক্ষণ পর দেখি আমার স্বামীকে (আজিজুল হক মামুন)। আমি জানি না সে সেখানে কি করছিল এবং কেন সে সেখানে গিয়েছিল। তবে, তিনি খুব উত্তেজিত ছিলেন। তার সাথে আরও কিছু ছেলে ছিল, আমি তাদের চিনি না। একপর্যায়ে তিনি স্যারকে (এডিসি হারুন) ইটিটি রুমে নিয়ে মারধর করেন। স্যার ওদের হাত থেকে বাঁচার জন্য ইটিটি রুমের এক কোণে দাঁড়ালেন।
সানজিদা বলেন, “তখন আমার স্বামী তার সঙ্গে থাকা লোকজনকে বললেন, ‘এই ভিডিওটি করো’।” তারপর সবাই ফোন বের করে ভিডিও বানাতে লাগলো। আমি আমার স্বামী এবং তার সঙ্গীদের সাথে চ্যাট করছিলাম যখন তারা ভিডিওটি শুরু করেছিল। এরপর যারা ভিডিও করছে তাদের মোবাইল ফোন কেড়ে নেওয়ার চেষ্টা করি। এ সময় হাতেও একটু ব্যথা অনুভব করি। কারণ আমি চাইনি কেউ আমাকে ওই অবস্থায় ভিডিও করুক। আর আমার স্বামীর সাথে থাকা ছেলেদের কাউকেই চিনতাম না।
এডিসি সানজিদা অনুমতি ছাড়া কথা বলতে পারেন না- ডিএমপি কমিশনার : ডিএমপির অপরাধ বিভাগের অতিরিক্ত উপকমিশনার (এডিসি) সানজিদা আফরিনকে এভাবে কথা বলতে দেওয়া হচ্ছে না বলে জানিয়েছেন ডিএমপি কমিশনার খন্দকার গোলাম ফারুক। রাতে গণমাধ্যমের সঙ্গে আলাপকালে ডিএমপি কমিশনার এ কথা বলেন।