Thursday , November 14 2024
Breaking News
Home / Countrywide / এই ব্যাটা তোর কীসের টাকা রে, একদম ধরে খাইয়ে ফেলমু: চবিতে নিয়োগে ঘুষ চেয়ে ফোন

এই ব্যাটা তোর কীসের টাকা রে, একদম ধরে খাইয়ে ফেলমু: চবিতে নিয়োগে ঘুষ চেয়ে ফোন

নিয়োগের ক্ষেত্রে ঘুষ একটি নিয়মিত বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে। সরকারি চাকরির ক্ষেত্রে বেশিরভাগ সময় এটি হয়ে থাকে। মাঝেমাঝেই প্রকাশ পায় এসকল ঘুষ লেনদেনের ঘটনা। তবে দেশের শীর্ষ বিদ্যাপীঠগুলোতে যখন ঘুষের বিষয়টি আসে, তখন জনমনে প্রশ্ন আসাটাই স্বাভাবিক। এবার চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের নিম্নমান সহকারী ও পিয়ন পদে নিয়োগ দেওয়ার ক্ষেত্রে বিপুল পরিমাণ ঘুষের অভিযোগ উঠেছে সেকশন অফিসার পরিচয় দেওয়া মানিক চন্দ্র দাসের বিরুদ্ধে।

মানিক চন্দ্র দাস নিম্নমান সহকারী হয়েও নিজেকে সেকশন অফিসার হিসেবে পরিচয় দেন। চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে (চবি) তৃতীয় ও চতুর্থ শ্রেণির কর্মচারী নিয়োগের নামে তিনজনের কাছ থেকে ৮ লাখ ২০ হাজার টাকা হাতিয়ে নেন তিনি।

লেনদেনের ফোন কল এবং কিছু অগ্রিম চেকের কপিও সময়দেশের একটি জনপ্রিয় সংবাদ মাধ্যমের নিকট পৌঁছায়। এদিকে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য শিরিন আখতার বলছেন, প্রমাণিত হলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

চাকরিপ্রার্থীরা: আমি এই মাসের মধ্যে সব টাকা চাই।

মানিক চন্দ্র দাস: কিসের টাকা?

চাকরিপ্রার্থী: ৮ লাখ ২০ হাজার টাকা।

মানিক চন্দ্র দাস: এ ব্যাটা তোর কীসের টাকা রে? একদম ধরে খেয়ে ফেলমু। একদম পেটের ভিতর মোচড় দিয়ে খেয়ে ফেলমু।’

তৃতীয় ও চতুর্থ শ্রেণির কর্মচারী নিয়োগের জন্য এই ফোনালাপ চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার অফিসের নিম্নমান সহকারী মানিক চন্দ্র দাসের সঙ্গে একজন চাকরিপ্রার্থীর। টাকা ফেরত চাওয়ায় চাকরিপ্রার্থীকে প্রাননাশের হুম”কিও দেওয়া হয়।

গত বছর বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষক নিয়োগে উপাচার্যের একান্ত সচিবসহ ৫টি ফোনালাপ প্রকাশ পাওয়ার রেশ না কাটতেই ৫০ লাখ টাকা ঘুষ নেওয়ার অভিযোগ ওঠে। যদিও তিনি নিজেকে সেকশন অফিসার পরিচয় দেন।

বিশ্ববিদ্যালয়টি ২০২১ সালের ৩১ মে ও ১ জুন তারিখে দুটি নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি জারি করে। মানিক মাদারীপুরের আবির, সোহেল এবং মাকসুদকে নিম্ন মান সহকারী এবং অফিসের পিয়নের চাকরি দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়ে এই টাকা নেয়।

ডিপোজিট স্লিপে দেখা যায়, ২০২১ সালের ৫ জুন ৫০ হাজার, ১১ জুলাই ৩৫, ১৫ জুলাই ৫০ আর ১৩ সেপ্টেম্বর নেয়া হয় আরও ৫০ হাজার টাকা। মানিকের ডাচ্‌-বাংলা ব্যাংক অ্যাকাউন্ট ৭০৮১ এর মাধ্যম নেয়া হয় টাকাগুলো। চাকরিপ্রার্থী মাকসুদুস সালেহীন ২৫ জুলাই মানিককে চাকরি না দিয়ে প্রতারণার অভিযোগে টাকা ফেরত চেয়ে আইনি নোটিশ পাঠান।

তিনি বলেন, ‘অনেক অনুরোধ করেও অনেক সময় দেওয়ার পরও টাকা ফেরত দিচ্ছেন না। তাই বাধ্য হয়ে তাকে উকিল নোটিশ পাঠাই।

মানিকের ব্যাংক অ্যাকাউন্টের তিনটি অগ্রিম চেকও সংবাদ মাধ্যমটির হাতে পৌঁছেছে। যেখানে ২০২২ সালের ২০ ফেব্রুয়ারি মানিক সোহেলকে সাড়ে তিন লাখ টাকার অগ্রিম চেক দেন। ২০২১ সালে ২৮ ডিসেম্বর ও ২০২২ সালের ২০ ফেব্রুয়ারি তারিখের রাকিবকে দেন সাড়ে তিন লাখ টাকার আরও দুটি অগ্রিম চেক।

তবে ঘুষ নেওয়ার বিষয়টি অস্বীকার করে সিএইচবিআইয়ের নিম্নস্তরের সহকারী মানিক চন্দ্র দাস বলেন, এ ধরনের অভিযোগ সম্পূর্ণ মিথ্যা।

তবে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য শিরিন আখতার বলছেন, ‘সেকশন অফিসার আর যেই হোক, এটা অপরাধ, এটা সম্পূর্ণ অন্যায়। যে দিয়েছে তাকে শোকজ করব। আর যে নিয়েছে তাকে বের করে দেব।’

এদিকে সচেতন নাগরিক কমিটি (সনক) বলছে, মাঠপর্যায়ে কেউ কেউ কাজ করলেও নিয়োগ বাণিজ্যের পেছনে রয়েছে ওপর মহলের লোকজন। সনাক সভাপতি আখতার কবির চৌধুরী বলেন, ‘তাদের চিহ্নিত করা দরকার। কারা পর্দার আড়ালে, কারা মাস্টারমাইন্ড, সেটা না হলে এটা চলতেই থাকবে।’

২০১৯ সালের জুলাই ও আগস্ট মাসে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের তৃতীয় ও চতুর্থ শ্রেণির কর্মচারী নিয়োগে অনিয়মের অভিযোগে রেজিস্ট্রার, ডিন, শিক্ষক, কর্মকর্তা-কর্মচারীসহ ৫৬ জনকে তলব করে দুদক। যার মধ্যে মানিক চন্দ্র দাসের নাম ছিল।

প্রসংগত, সরকারি চাকরি পেতে অনেক চাকরিপ্রার্থী ঘুষ দিয়ে চাকরি পাওয়ার চেষ্টা করেন যেটা বড় ধরনের দুর্নীতি। তবে এমনটিও উড়িয়ে দেওয়া যায় না যে, সরকারি চাকরি পেতে ঘুষ লাগে না। মাঝে মাঝে চাকরি পেতে ঘুষ লাগে না এমন কথা শোনা গেলেও প্রকৃতপক্ষে সেটা নীতিবাক্য হিসেবেই থেকে যায়। কিন্তু প্রকৃত অর্থে বেশিরভাগ সময়ে ঘুষ লেনদেনের ঘটনা ঘটে থাকে, যার একটি উদাহরণ হল চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের এই ঘুষ লেনদেনের ঘটনা।

About bisso Jit

Check Also

উপদেষ্টা পরিষদেই বৈষম্য

অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের উপদেষ্টা পরিষদে আঞ্চলিক বৈষম্যের অভিযোগ উঠেছে। ২৪ সদস্যের এই পরিষদে ১৩ জনই চট্টগ্রাম …

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *