জনগণের জীবনামালের নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকা সেই পুলিশধারী কিছু কর্মকর্তাদের নানা অনিয়মের কারণে রীতিমতো নানা সমস্যার মুখে পড়তে হচ্ছে দেশের সাধারণ মানুষকে। ক্ষমতাকে পুঁজি করে প্রতিনিয়ত সাধারণ খেটে খাওয়া মানুষকদের বোকা বানিয়ে যাচ্ছেন পুলিশের বিভিন্ন কর্মকর্তা। আর সেই সকল পুলিশ কর্মকর্তাদের অনিয়মের মধ্যে অন্যতম একটি ভাড়া না দিয়েই যাতায়াত করা।
‘পুলিশ পাশ’। শব্দটি বাস ভাড়া সংগ্রাহক, হেল্পার/সুপারভাইজারদের কাছে খুব পরিচিত। কিন্তু এসব পাশের ইস্যুতে কেউ কখনো কোনো নির্দেশনা শোনেনি। এমনকি এই পাশ দেখার সুযোগও পাননি। তবে ‘পুলিশ পাশ’ নামে পরিবহনে বিনা পয়সায় যাতায়াত করছে অনেক পুলিশ সদস্য।
ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের জনসংযোগ বিভাগের উপকমিশনার মো. ফারুক হোসেন বলেন, পুলিশের পাশের নামে ভাড়া না দেওয়ার বিধান নেই। কেউ এ ধরনের কাজ করলে তা অনৈতিক। অভিযোগ পেলে তদন্ত সাপেক্ষে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
যোগাযোগ করা হলে বিআরটিএর পরিচালক (সড়ক নিরাপত্তা) শেখ মাহবুব-ই-রব্বানী রোববার বলেন, পুলিশ ভাড়া না নেওয়ার বিষয়ে বিআরটিএর কোনো নির্দেশনা নেই। তারপরও এই অঘোষিত নিয়ম চলছে দিনের পর দিন।
কেস স্টাডি : বুধবার রাত সাড়ে ৯টা। খিলক্ষেত থেকে প্রজাপতি পরিবহনের বাসে উঠলেন এক পুলিশ সদস্য। কুড়িল বিশ্বরোড এলাকায়, একজন পরিবহন চেকার যাত্রীর সংখ্যা গণনা করতে যানবাহনে ওঠেন। তিনি যখন গণনা ও ওয়েবিল প্রস্তুত করা শেষ করলেন, তখন একজন যাত্রী (পুলিশকর্মী) হাত তুলে বললেন, ‘এই, একটা পুলিশ পাশ আছে।’ তারপর চেকার তাকে ছেড়ে দিয়ে যাত্রীর হিসাব লিখে ওয়েবিল চূড়ান্ত করে।
গাড়িটি মিরপুরে ইসিবি চত্বরে পৌঁছালে কন্ডাক্টর সিভিল পোশাকে পুলিশ সদস্যের কাছে যান ভাড়া নিতে। ভাড়া চাওয়ায় তিনি হুমকি দিয়ে বলেন, ব্যাটা চোখে দেখিস না। ‘পুলিশ পাশ’ আছে বলে তোর চেকারকে তখন বললাম। এ সময় কন্ডাক্টর ভদ্রভাবে বললেন, এটা একটা ভুল স্যার। তখন কন্ডাক্টর ভাড়া না নিয়ে চলে যায়।
এ সময় প্রতিবেদক নিজেই ওই বাসের যাত্রী ছিলেন। পুরো ঘটনা প্রত্যক্ষ করার পর সংশ্লিষ্ট পুলিশ সদস্যের কাছ থেকে তার নাম, পদবি ও কাজের স্থান সম্পর্কে জানতে চাইলে তিনি প্রথমে কোনো মন্তব্য করতে চাননি। সাংবাদিক পরিচয় জানতে পেরে পালানোর চেষ্টা করেন। একপর্যায়ে তিনি বলেন, তিনি একজন পুলিশ কনস্টেবল। তবে কোথায় কাজ করছেন তা বলতে চাননি তিনি।
এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, আসলে আমিও দেখেছি পরিবহন শ্রমিকরা পুলিশ পাস বললে ভাড়া নেয় না। সেজন্য পুলিশ পাশ কাটিয়ে এভাবেই যাওয়া আসা করি। মিরপুর-১ নম্বরে নেমে যান ওই পুলিশ সদস্য। এরপর এই প্রতিবেদকের কাছে মুখ খুললেন কন্ডাক্টর। তিনি বলেন, “প্রতিদিন অন্তত ২০ থেকে ২৫ জন লোক বাসে ওঠে এবং ‘পুলিশ পাস’ বলে ভাড়া দেয় না”। তারা আসল পুলিশ নাকি ভুয়া পুলিশ তা আমরা জানি না। আপনি যদি কিছু বলেন, আপনাকে হয়রানি করা হবে. ট্রাফিক সার্জেন্টের বিরুদ্ধে মামলা করতেও ভয় পাচ্ছেন তারা।
বাসের হেলপার কামাল হোসেন শনিবার সকালে আছিম পরিবহনে যাতায়াতকালে বলেন, “পুলিশের বেদনায় আমরা খুবই বিরক্ত। দিনের বেলায় না হলেও অন্তত ২০-২২ জন উঠে, পুলিশকে পাশ কাটিয়ে যাই। ছাত্র-ছাত্রীদের আইডি কার্ড দেখে অর্ধেক ভাড়া নেয়।কিন্তু পুলিশের পক্ষ থেকে এই সুযোগ নেই। তারপরও সিভিল পুলিশ ভাড়া দেয় না কারণ তাদের পাশ আছে। আপনি চাইলে আপনাকে নানাভাবে ভয় দেখায়। ভয়ে পুলিশ দেখতেও যাই না।’
জনগণের সেবক হওয়ার প্রতিজ্ঞা করে যারা পুলিশের ইউনিফর্ম পরে এ ধরণের অনিয়মের সঙ্গে জড়িত রয়েছেন, তাদের বিরুদ্ধে অবিলম্বে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হোক বলে দাবি করেছেন অনেকেই।