বর্তমানে বাংলাদেশের অর্থনৈতিক ও বাণিজ্যিক সমস্যা দেখা দিয়েছে। যার জন্য ধাপে ধাপে বেড়েছে দ্রব্যমূল্যের দাম। কোন কোন সময় নিয়ন্ত্রণে আসলেও বেশিরভাগ ক্ষেত্রে দ্রব্যমূল্যের দাম ঊর্ধ্বগতির দিকে। যে সকল বিষয় নিয়ে চিন্তিত বাংলাদেশ সরকার সহ সাধারণ জনগণ। বিশেষ করে সবথেকে বেশি বিপাকে রয়েছে মধ্যবিত্ত ও দরিদ্ররা। এ সকল বিষয়ের জন্য গুরুত্বপূর্ণ যে সকল বাধা তা সম্পর্কে এবার জাতিসংঘে আলোচনা করলেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, বাংলাদেশসহ ১৬টি দেশ এখন স্বল্পোন্নত দেশের তালিকা থেকে উন্নীত হওয়ার পথে। কিন্তু ক্রমবর্ধমান বৈশ্বিক সংকট আমাদের টেকসই উত্তরণে গুরুতর বাধা সৃষ্টি করেছে। আমরা আমাদের উন্নয়ন সহযোগীদের কাছ থেকে বর্ধিত এবং কার্যকর সহযোগিতার আহ্বান জানাই।
শুক্রবার (২৩ সেপ্টেম্বর) নিউইয়র্কে স্থানীয় সময় বিকেল সাড়ে ৫টায় জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের ৭৭তম অধিবেশনে দেওয়া ভাষণে প্রধানমন্ত্রী এ কথা বলেন।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, বর্তমান জটিল বৈশ্বিক সংকট গত কয়েক দশকে অনেক উন্নয়নশীল দেশের উন্নয়ন অগ্রগতিকে স্তব্ধ করে দিচ্ছে। এই মুহুর্তে, ২০৩০-এজেন্ডা বাস্তবায়ন তাদের অনেকের কাছে একটি অধরা স্বপ্ন বলে মনে হচ্ছে। স্বাস্থ্য, শিক্ষা, কর্মসংস্থান এবং কৃষিসহ সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্থ এলাকায় তাদের সুনির্দিষ্ট সহায়তা প্রয়োজন। এখন বিজ্ঞান, প্রযুক্তি ও উদ্ভাবনের সম্ভাবনাকে কাজে লাগাতে হবে।
তিনি বলেন, আমরা দেখছি নিত্য-নতুন প্রযুক্তি কীভাবে বিশ্বকে দ্রুত বদলে দিচ্ছে। এই প্রযুক্তিতে ন্যায্য এবং সমান অ্যাক্সেস সবার জন্য অপরিহার্য। ক্রমবর্ধমান প্রযুক্তিগত বিভাজন অবশ্যই দূর করতে হবে।
তিনি বলেন, প্রতিবেশী দেশগুলোর সঙ্গে সমুদ্রসীমা শান্তিপূর্ণভাবে নিষ্পত্তির পর নতুন অর্থনীতি বাংলাদেশের উন্নয়নের নতুন দ্বার উন্মোচন করেছে। আমরা আর্থ-সামাজিক উন্নয়ন ত্বরান্বিত করতে আমাদের সামুদ্রিক সম্পদের টেকসই ব্যবহার, সংরক্ষণ এবং ব্যবস্থাপনার জন্য বিশ্বব্যাপী অংশীদারদের সাথে কাজ করতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।
জাতিসংঘের ৭৭তম অধিবেশনে প্রধানমন্ত্রীর পূর্ণাঙ্গ ভাষণ জাতিসংঘের ৭৭তম অধিবেশনে প্রধানমন্ত্রীর পূর্ণাঙ্গ ভাষণ
প্রধানমন্ত্রী বলেন, সামুদ্রিক সম্পদের টেকসই ব্যবস্থাপনার জন্য জাতিসংঘের সাগর আইনের ধারার কার্যকর বাস্তবায়ন অপরিহার্য। আমি সদস্য দেশগুলিকে এই বিষয়ে যে কোনও দুর্বলতা কাটিয়ে ওঠার জন্য ঘনিষ্ঠভাবে কাজ করার জন্য এবং জাতীয় এখতিয়ারের বাইরের অঞ্চলে সামুদ্রিক জীববৈচিত্র্যের সংরক্ষণ এবং টেকসই ব্যবহারের জন্য ‘BBNJ’ নামে পরিচিত অত্যধিক প্রয়োজনীয় আন্তর্জাতিক আইন প্রণয়নের জন্য আরও সক্রিয় হওয়ার আহ্বান জানাই।
শেখ হাসিনা বলেন, আমরা পারমাণবিক অস্ত্রের অপ্রসারণসহ সম্পূর্ণ নিরস্ত্রীকরণে অঙ্গীকারবদ্ধ। আমরা ২০১৯ সালে পারমাণবিক অস্ত্র নিষিদ্ধ করার ঐতিহাসিক চুক্তি স্বাক্ষর করেছি।
তিনি বলেন, শান্তিরক্ষা কার্যক্রমে আমরা ধারাবাহিকভাবে আমাদের অঙ্গীকার বাস্তবায়ন করে যাচ্ছি। আমাদের শান্তি-ভিত্তিক বৈদেশিক নীতির প্রতিফলন হিসাবে, আমরা বর্তমানে জাতিসংঘের শান্তিরক্ষা কার্যক্রমে শীর্ষ সেনা ও পুলিশ অবদানকারীদের মধ্যে স্থান করে নিয়েছি।
মোকাবেলায় বাংলাদেশ ৩টি বিষয়কে অগ্রাধিকার দিয়েছে: প্রধানমন্ত্রী মোকাবেলায় ৩টি বিষয়কে অগ্রাধিকার দিয়েছে: প্রধানমন্ত্রী
তিনি আরও বলেন, তারা শান্তিরক্ষা, জাতীয় ও স্থানীয় প্রতিষ্ঠানের সক্ষমতা বৃদ্ধি, বেসামরিক নাগরিকদের সুরক্ষা, নারী ও অন্যান্য অনগ্রসর গোষ্ঠীর ক্ষমতায়নের মাধ্যমে এই অঞ্চলের মানুষকে একটি টেকসই সমাজ গঠনে সহায়তা করছে। কর্তব্যরত অবস্থায় আমাদের অনেক শান্তিরক্ষী শহীদ হয়েছেন।
মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ২৩ সেপ্টেম্বর ২০২২ শুক্রবার বিকেলে জাতিসংঘ সদর দফতরে জাতিসংঘ মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেসের সাথে বৈঠক করেন।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমরা বিশ্বাস করি, সংঘাতের মূল কারণগুলো সমাধান ছাড়া টেকসই শান্তি সম্ভব নয়। জাতিসংঘের শান্তিনির্মাণ কমিশনের বর্তমান সভাপতি হিসেবে, আমরা বহুমাত্রিক স্টেকহোল্ডারদের জন্য একটি প্ল্যাটফর্ম তৈরি করার চেষ্টা করি যাতে সংঘাত-আ/ক্রান্ত দেশগুলিকে সমর্থন করার জন্য একসঙ্গে কাজ করা যায়। আমরা নারী, শিশু, শান্তি ও নিরাপত্তা এজেন্ডাকে শক্তিশালী করার প্রচেষ্টা অব্যাহত রাখতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।
বাংলাদেশে স/ন্ত্রাস ও স/হিংস চরমপন্থার বিরুদ্ধে আমরা ‘জিরো টলারেন্স’ নীতি গ্রহণ করেছি। আমরা বাংলাদেশের ভূখণ্ডে কোনো স/ন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড বা জনগণের ক্ষতি করে এমন কোনো কর্মকাণ্ড ঘটতে দিই না। এছাড়া সা/ইবার অপরাধ ও সাইবার স/ হিংসতা মোকাবেলায় একটি আন্তর্জাতিক বাধ্যতামূলক চুক্তি প্রণয়নে সদস্য দেশগুলোকে একসঙ্গে কাজ করার আহ্বান জানান প্রধানমন্ত্রী।
শেখ হাসিনা বলেন, আমরা একটি টেকসই অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি, সবার জন্য সমান সুযোগ সৃষ্টি এবং একটি অন্তর্ভুক্তিমূলক শান্তিপূর্ণ সমাজ ও সামাজিক সম্প্রীতি বাস্তবায়নের লক্ষ্যে কাজ করছি। বাংলাদেশ এখন বিশ্বের পাঁচটি দ্রুত বর্ধনশীল অর্থনীতির একটি। জিডিপির দিক থেকে আমরা ৪১তম। আমরা গত এক দশকে দারিদ্র্যের হার ৪১ শতাংশ থেকে ২০ দশমিক ৫ শতাংশে নামিয়ে এনেছি। আমাদের মাথাপিছু আয় মাত্র এক দশকে তিনগুণ মার্কিন ডলার ২,৮২৪ হয়েছে।
তথ্যপ্রযুক্তিভিত্তিক শিক্ষা নিশ্চিতকরণে বাংলাদেশ গুরুত্ব দিচ্ছে বাংলাদেশ তথ্যপ্রযুক্তিভিত্তিক শিক্ষা নিশ্চিত করতে গুরুত্ব দিচ্ছে প্রধানমন্ত্রী বলেন, কো-/-১৯ প্রাদুর্ভাবের আগে ২০১৮-১৯ অর্থবছরে আমাদের জিডিপি প্রবৃদ্ধির হার ছিল ৮.১৫ শতাংশ. এর আগে আমরা টানা তিন বছর ৭ শতাংশের বেশি জিডিপি প্রবৃদ্ধি অর্জন করেছি। ম/-হামারী চলাকালীনও ২০২০-২১ অর্থবছরে বাংলাদেশের অর্থনীতি ৬.৯৪ শতাংশ হারে প্রসারিত হয়েছে।
উল্লেখ্য, বর্তমানে নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যমূল্যের দাম আকাশচুম্বী। অনেকে ধারণা করছে জ্বালানি তেলের দাম বৃদ্ধি জনিত কারণে নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যমূল্যের দাম কিছুটা বৃদ্ধি পেয়েছে। অন্যদিকে আন্তর্জাতিক বাজারে দ্রব্যমূল্যের দাম বৃদ্ধি পাওয়ার কারনেও বাংলাদেশে দ্রব্যমূল্যের দাম বৃদ্ধি পেয়েছে। তবে যে করনেই দ্রব্যমূল্যের দামবৃদ্ধি হোক না কেন বিপাকে তো সাধারন মানুষই।